পরিবার নিয়ে বাইরে সময় কাটানোর সুযোগ পেলে ভালই লাগে। ইদের ছুটিতে তাই ছুটে গিয়েছিলাম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত রূপসাগর পার্কে। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রীত এই রূপসাগর পার্কটা গত কয়েক বছরে বেশ ভালই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ মানুষের মুখে মুখে কিংবা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এই পার্কের নাম ও ছবি অনেকবারই দেখা হয়েছে, কিন্তু কখনো যাওয়া হয় নি। তাই এইবারের ইদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে পরিবারকে সাথে নিয়ে ছুটে গেলাম সেই রূপসাগর পার্কে। সাথে ছিল আমার মা, বোন, স্ত্রী এবং আমার একমাত্র আদরের কন্যা জোহা!
কুমিল্লা শহর থেকে খুব বেশি দূরে না এই রূপসাগর পার্ক। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টমেন্টের সাথেই এর অবস্থা। পুরো পার্কটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রীত। নিরাপত্তা ব্যাবস্থা তাই ভালই বলা যায়। ইদের ছুটিতে শুধু আমরা না, অনেক মানুষই তাদের পরিবার নিয়ে কিছুটা সুন্দর সময় কাটানোর জন্য উপস্থিত হয়েছিল এই রূপসাগরে। মাঝারি আকৃতির একটা লেককে কেন্দ্র করেই মূলত এই পার্কটিকে গড়ে তোলা হয়েছে।
আমাদের বাড়ির সামনে থেকে সিএনজি একটা রিজার্ভ করে সোজা চলে গিয়েছিলাম রূপসাগর পার্কে। যদিও খরচটা একটু বেশিই গিয়েছে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে গেলে খরচ আরো কম হতো। বেশিক্ষণ তো লাগে না। ১৫-২০ মিনিটের মতো সময় লাগে শুধু। ভেঙ্গে ভেঙ্গে গেলে সময় হয়তো আরো কিছুটা বেশি লাগবে।
সিএনজি আমাদের সরাসরি সেনাবাহিনীর চেকপোস্টের সামনে নামিয়ে দেয়৷ এর বেশি তারা যেতে পারে না, যেহেতু পার্কটি ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ার ভেতরেই অবস্থিত। চেকপোস্ট পার হয়ে কয়েক মিনিট হাঁটার পরেই আমরা রূপসাগর পার্কের মেইন গেইট দেখতে পেলাম। মেইন গেইটের সামনে টিকেট কাটার জন্য তখন লম্বা একটা লাইন তৈরি হয়ে ছিল। সেই লাইনেই গিয়ে দাঁড়ালাম আমরা।
রূপসাগর পার্কের এন্ট্রি ফি ১০০ টাকা করে নিয়েছে। যদিও আগে নাকি আরো কম ছিল। হুট করে এত টাকা বাড়ানোর মানে কী, তা জানি না। তবে এই বাড়ানো দাম নিয়ে কারো মনে তেমন কোনো অসস্তুষ্টি লক্ষ্য করলাম না। পার্কের ভেতরের সৌন্দর্যের কারণেই হয়তো সবাই তেমন একটা অসস্তুষ্ট হয় নি। কারণ কুমিল্লা শহরে পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর মতো সুন্দর ও নিরাপদ জায়গা তেমন একটা নেই। চিড়িয়াখানা ছিল একটা, কিন্তু সেইটার পরিবেশ জঘন্য রকমের খারাপ। আর ধর্মসাগর পার্ক এত একটা খারাপ না হলেও গত ২-১ বছরে বেশ কিছু অনাকাঙখিত ঘটনার কারণে মানুষ পরিবার নিয়ে সেখানে যেতে তেমন একটা স্বাচ্ছন্দবোধ করে না।
যেহেতু লাইন অনেক লম্বা ছিল, তাই টিকেট পেতেও আমাদের একটু বেশিই সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। মিনিট বিশেক অপেক্ষা করে আমরা টিকেট পেয়ে রূপসাগর পার্কে ঢুকতে পেরেছিলাম। এবং ভেতরে ঢুকেই এর পরিবেশ দেখে অনেকটা মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। সবকিছু যেন সাজানো গুছানো৷
পার্কের প্রধান সৌন্দর্য্য মূলত এর লেকটি৷ পাশাপাশি চারপাশে সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই আকৃষ্ট হতে বাধ্য করবে। আমরা সবাই মিলে বেশ খানিকটা সময় পার্কের ভেতরে কাটিয়েছিলাম। আমরা সবাই পার্কের মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ হলেও আমার মেয়ে জোহা পুরোটা সময় ঘুমিয়েই ছিল। মাঝে মাঝে অবশ্য চোখ মেলে একটু এদিক সেদিকও তাকিয়েছিল। আমি এই জিনিসটা বুঝি না যে জোহাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলেই সে ঘুমিয়ে থাকে। অথচ বাসায় কিন্তু একেবারেই ঘুমাতে চায় না।
কার্পেটের মতো ছড়িয়ে থাকা সবুজ ঘাসের উপর সবাই যে যার মতো বসে গল্পগুজব করছে। বাইরে থেকে খাবার এনে এখানে খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি থাকতো, তাহলে বেশিরভাগ মানুষ টুকটাক নাস্তা নিয়ে এসে লেকের পাড়ে বসে খেতে পারতো। পার্কের ভেতর অবশ্য ছোট একটা কফিশপ ও একটা রেস্টুরেন্ট আছে। তবে এইসব রেস্টুরেন্টে খাবার খরচ পার্কের বাইরের চেয়ে কিছুটা বেশি। তাই এগুলোর প্রতি মানুষের তেমন একটা আগ্রহ নেই। সবাই যে যার মতো পার্কের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে অথবা বসে বসে পরিবারের সাথে গল্প করে যাচ্ছে।
যায় হোক, আমরা প্রায় ২ ঘন্টার মতো পার্কের ভেতর ছিলাম। সুন্দর সুন্দর কিছু ছবি তুলেছি এবং সুন্দর কিছু সময় কাটিয়েছি। সূর্য্য যখন ডুবু ডুবু অবস্থা, তখন আমরা পার্ক থেকে বের হয়ে এসেছি। আরো কিছুক্ষণ থাকার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সুযোগ ছিল না। আমার মেয়ে জোহাকে নিয়ে এই প্রথম আমরা বাইরে এতটা সময় কাটিয়েছি। আশা করি সামনে আরো দূরে ঘুরতে যেতে পারবো... আরো ভাল কিছু সময় কাটাতে পারবো। সেই প্রত্যাশায়...
Congratulations @reza-shamim! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 57000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out our last posts: