দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গিয়েছে আমাদের জোহার। এইতো সেদিন সে প্রথম পৃথিবীতে এসেছিল। প্রথমবার আমার হাত ধরেছিল, প্রথমবার পৃথিবীর সূর্য্যের আলোর স্পর্শ পেয়েছিল। মনে হচ্ছে যেন এই তো কিছুদিন আগের কথা। কিন্তু না, এখন তার বয়স এক বছর৷ সে এখন অনেক কিছুই শিখে ফেলেছে৷ কোনো কিছু না ধরেই দাঁড়াতে পারে। ওক পা, দুই পা করে সামনে এগুতে পারে। এমনকি অনেক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকতে পারে।
এই এক বছরে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। যদিও সবকিছু শেখা সম্ভব হয় নি। বাবা হিসেবে আমার এখনোও অনেক কিছু শেখা বাকি৷ তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি একজন ভাল বাবা হবার। কতটুকু হতে পারব জানি না, তবে চেষ্টা তো করে যেতে পারব।
আধো আধো বুলিতে সে যখন বাবা ডাকে, তখন অদ্ভুত এক প্রশান্তি ভর করে মনে। সেই অদ্ভুত অনুভূতির কথা আমি লিখে প্রকাশ করতে পারব না। কিন্তু আমার অনেক ভাল লাগে। সারাদিন অফিস শেষে ক্লান্ত আমি বাসায় যাওয়ার পর সে যখন আমার কোলে চলে এসে আমার কাঁধে মাথা রাখে, তখন পরম মমতায় আমার সমস্ত ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
রাতের বেলা যখন না ঘুমিয়ে দুষ্টুমি করে, তখন তার সাথে খেলতে আমার একটুও বিরক্ত লাগে না। অথচ একটা সময় আমি ঘুমাতে না পারলে প্রচন্ড বিরক্ত হতাম। মানুষের জীবন কেমন অদ্ভুত ভাবে একটু একটু করে পরিবর্তন হয়, তাই না?
প্রথম দিকে মনে হত জোহা অনেকটা শান্ত মেয়ে হবে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, সে তত দুষ্টু হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নিজে নিযে উঠে দাঁড়ানো ও হাঁটতে শিখে ফেলার পর তার দুষ্টুমির মাত্রা যেন বহুগুনে বেড়ে গিয়েছে। এখন আর সে কোথাও স্থির হয়ে বসে থাকতে চায় না। সুযোগ পেলেই বিছানা থেকে নেমে যেতে চায়। আর এই বিছানা থেকে নামতে গিয়েই কত বার যে ব্যাথা পেয়েছে, তার ইয়াত্তা নেই। তবুও সে নামবেই।
এক রুম থেকে সে এখন নিজে নিজে অন্য রুমে চলে যায়। আমার বই পত্র এমনকি মাঝে মাঝে ওয়ালেটটা নিয়েও এদিক সেদিক ফেলে দেয়। আর মাঝে মাঝে টারজানের মতো চিৎকার দিয়ে জানান দেয় তার দুষ্টুমির কথা। এখন পর্যন্ত এই সব কিছুই আমি উপভোগ করছি।
গত এক বছরে একটা জিনিস বুঝেছি, আর তা হল জোহা মানুষকে খুব পছন্দ করে। বড় হলে সে মিশুক স্বভাবের হবে। আমিও সেটাই চাই৷ অন্তত আমার মতো ইন্ট্রোভার্ট না হোক। এক্সট্রোভার্ট না হলে জীবনের অনেক কিছুই মিস করতে হয়। অনেক আনন্দ মিস করতে হয়। আমি চাই না আমাদের জোহা জীবনের সেই সব আনন্দগুলো উপভোগ করতে না পারুক।
অপরিচিত মানুষ দেখলে অন্যান্য বাচ্চাদের মতো জোহা ভয় পায় না। বরং তাকিয়ে থাকে সেই মানুষটার মুখের দিকে। এমনকি তাকে নিয়ে যখন বের হই, তখন সে বাইরের সব মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে৷ আমি জানি না, তার ছোট্ট মনে সে তখন আসলে কী ভাবে। তবে তার অবাক চোখগুলো তখন দেখতে খুব ভালই লাগে আমার।
জোহার জন্মদিন অবশ্য ১৩ তারিখ পার হয়ে গিয়েছে। আজকে ১৭ তারিখ। কিছু একটা লিখব লিখব করেও লেখা হচ্ছিল না। কিন্তু মাথার ভেতর অনেক কথাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব হয়তো এক লেখায় লিখে শেষ করতে পারব না। তবে আমি যেহেতু এখানে আমার সবকিছুই লিখে রাখি, তাই এই লেখাগুলোও লিখে রাখছি৷ যেন অনেক দিন পর আবারও এই লেখাগুলো পড়তে পারি। আর এজন্যই মূলত আর লিখতে বসেছিলাম।
কিন্তু আমি আসলে আমার মনের কথাগুলো গুছিয়ে লিখতে পারছি না। হয়তো অনেক দিন লিখি না, তাই এই অবস্থা। অবশ্য আমি কখনোই গুছিয়ে কিছু লিখতে পারি নি। মনে যা আসে, সেটাই লিখে ফেলি। আর পরে সেই লেখাগুলো পড়ে নিজে নিজে হাসি। এই লেখাটা হয়তো কোনো একদিন আমার মেয়েও পড়বে৷ হাসবে আর ভাববে, ওর বাবা কী সব যে লিখে রেখেছে এখানে, হাহা...
Congratulations @reza-shamim! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 62000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP