২৫ জুন ২০২১ সাল। মানবজাতির ইতিহাসে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করতে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে বিষুবরেখার কাছে ফরাসি গায়ানার কুরু শহরে অবস্থিত গায়ানা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ফরাসি বাণিজ্যিক রকেট উৎক্ষেপণ কোম্পানি আরিয়ানেস্পাসের তত্ত্বাবধানে মহাকাশের পথে যাত্রা শুরু করেছিল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। মানুষের ইতিহাসে এ যাবত কালে তৈরি হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ এটি। যার মাধ্যমে সুবিশাল মহাকাশ সম্পর্কে আরো নতুন কিছু জানতে পারবে মানুষ। পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরত্বে থেকে পৃথিবীর সাথে সাথে সূর্যকেও প্রদক্ষিত করবে এটি৷ পাশাপাশি মহাকাশের দূরে অদূরে থাকা খুঁটিনাটি সব তথ্যও পৃথিবীতে পাঠাবে।
মহাকাশে পৌছানোর প্রায় ৬ মাস পর এই মাসেরই ৮ তারিখ পরীক্ষামূলক ভাবে মহাকাশ থেকে প্রথম একটি ছবি পাঠায় এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। নাসার ফেসবুক পেইজে শেয়ার করা এই ছবিটা দেখে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। বিশেষ করে সেই ছবির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট আলোর বিন্দুগুলো এক একটা গ্যালাক্সি জানার পর থেকে তো আমার মুখের কথা আটকে গিয়েছিল। সুবিশাল মহাবিশ্বে এত এত গ্যালাক্সির ভীড়ে আমাদের পৃথিবীটা যে ক্ষুদ্র একটা বালিকনাও না, সেটা স্পষ্ট ভাবেই বুঝা যাচ্ছিল৷
এর আগে অবশ্য ভয়েজার টু নামের এক কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো পৃথিবীর ছবি দেখে এমন আশ্চার্য হয়েছিলাম। সুবিশাল মহাকাশে ছোট্ট একটা বিন্দু হিসেবে আমাদের এই পৃথিবীকে দেখা যাচ্ছিল৷ এটা নিয়ে অবশ্য আমি একটা লেখাও লিখেছিলাম৷ সেই লেখাটা লেখার সময় বার বার মনে হচ্ছিল, কত ক্ষুদ্র আমরা। কত ক্ষুদ্র আমাদের জীবন৷ কত ক্ষুদ্র আমাদের পৃথিবী৷ অথচ এই ক্ষুদ্র পৃথিবীতে কত সুখ, কত অশান্তি, কত দাঙ্গা হাঙ্গামায় কেটে যাচ্ছে আমাদের জীবন৷ পৃথিবীর বাইরের জগৎ নিয়ে আমাদের ধারনা কত স্বল্প, তাই না?
আমাদের রাতের আকাশে কতশত তাঁরা দেখা যায়, তাই না? ছোটবেলায় পড়েছিলাম এসব তাঁরার একেকটা আমাদের গ্যালাক্সির সূর্য্যের চেয়েও বড়। অথচ এই তাঁরাগুলো কতই না ক্ষুদ্র দেখা যায়! কতশত কোটি বছর ধরে যে এই নক্ষত্রগুলো জ্বলে যাচ্ছে, সেই খবর অবশ্য আমাদের জানার কথা৷ আবার কবে যে ধ্বংস হবে, সেই কথাও কেউ জানে না৷
যায় হোক, জেমস টেলিস্কোপের আগে মহাকাশে আরো একটা টেলিস্কোপ ছিল, তার নাম হাবল টেলিস্কোপ। জেমস টেলিস্কোপ অবশ্য হাবাল টেলিস্কোপ থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী। কতটা শক্তিশালী, তা উপরের ছবিটা দেখে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়। একই স্থান থেকেই এই দুই টেলিস্কোপ ছবি দুটি তুলেছে৷ প্রথমটা হাবাল টেলিস্কোপের তোলা, আর তার পরেরটা জেমস টেলিস্কোপের তোলা।
এই দুইটি ছবিতেই ৪ বিলিয়ন থেকে ১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ছবি দেখা যাচ্ছে। এগুলোর মাঝে সবচেয়ে উজ্জ্বল বিন্দুগুলো আমাদের গ্যালাক্সির আশেপাশের কিছু নক্ষত্র। আর সেগুলোর পেছনের বড় বড় হালকা আলোক বিন্দুগুলো একেকটা গ্যালাক্সি৷ এসব গ্যালাক্সিগুলো সম্পর্কে অবশ্য বিশেষ কোনো তথ্য এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই। তবে এতটুকু বলা যায়, এগুলো প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগের কোনো কোনো দৃশ্য। কারণ আমাদের পৃথিবী থেকে এইসব নক্ষত্র ও ছায়াপথগুলোর দূরত্ব এতই বেশি যে সেগুলো থেকে আমাদের পৃথিবী আলো আসতে চারশত কোটি বছরেরও বেশি সময় লাগার কথা।
যায় হোক, এবার নিজের কিছু মতামত শেয়ার করি। আমার আগের কোনো এক লেখাতেও এই কথাগুলো শেয়ার করেছিলাম। আজ আবারও করছি৷ আমাদের পৃথিবীটা এই মহাবিশ্বের তুলনায় সত্যিই খুব ক্ষুদ্র। এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানও একেবারে অল্প। তার উপর আবার এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে৷ তো এই সুবিশাল মহাবিশ্বের তুলনায় কত ক্ষুদ্র এই পৃথিবীতে থেকে আমরা মহাবিশ্বের কতটুকুই বা জানতে পারব? আমাদের পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও আমাদেরই মতো কোনো মানুষ বা কোনো জীবন আছে কিনা, সেটাও তো আমরা জানি না৷ হয়তো ভবিষ্যতে কখনো জানতে পারব৷ সে পর্যন্ত আমরা বেঁচে থাকব কিনা, কে জানে!
All Pictures collected from NASA website and facebook.
Congratulations @reza-shamim! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 34000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!