প্রায় এক সপ্তাহ হলো নতুন জীবন শুরু করেছি। সবকিছু কেমন স্বপ্নের মতো। আমাদের পরিবারে নতুন একজন সদস্য এসেছে, যে কিনা পুরোপুরি আমার। এই আনন্দের বর্ননা ভাষায় প্রকাশ করতে আমি একেবারেই অপরাগ। তবে এতটুকু বলতে পারি, এমুহুর্তে আমি অনেক বেশি সুখী।
টুকটাক নানা ঝামেলার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহে আমার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিয়ে নিয়ে কম বেশি শুরু থেকেই ব্যস্ত ছিলাম। আর বিয়ের পর এই এক সপ্তাহে এক কথায় পুরো দুনিয়া থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিলাম। কারণ আমার পাশাপাশি আমার পরিবারও এই নতুন সদস্যকে নিয়ে অনেক বেশি আনন্দিত। তাই পুরোটা সময় আমি আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দটুকু ভাগ করে নেয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ মানুষের জীবনে এমন সুখের সময় বার বার আসে না। তাহলে কেন নিজেকে এই আনন্দগুলো থেকে বঞ্চিত করব? বঞ্চিত করা তো উচিত হবে না। তাই যতটুকু সম্ভব, প্রতিটা মুহুর্তে নিজেকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করেছি।
যায় হোক, আজ প্রায় ৪ দিন পর বাড়ি থেকে বের হয়েছি। বিয়ের পর নতুন জামাই দের নাকি বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ। এমন অদ্ভুত নিয়ম আমি এর আগে কখনো দেখি নি। এধরনের নিষেধাজ্ঞা আসার পর প্রথমে কিছুটা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেও পরে হাল ছেড়ে দিলাম। নতুন জামাই হিসেবে মুরুব্বিদের সাথে তর্ক বিতর্ক করা ঠিক হবে না। গাই সবার কথা মেনে নিয়ে এই কয়েকদিন বাড়ির ভেতরেই ছিলাম।
তবে আজকের দিনটা কিছুটা ভিন্ন। আজকে আর বাড়ির ভ্বতর বসে থাকা সম্ভব হলো না। সকাল থেকে ইচ্ছে করছিল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা যাক। কারণ গত কয়েকদিন বাসায় একটানা বসে থেকে কিছুটা বিরক্ত বোধ হচ্ছিল। কারণ আমি বাড়ির ভেতর শুয়ে বসে কাটানো লোক না। আমি কোথাও একটানা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয় কিছুক্ষণ পর পর একটু এদিক সেদিন হাঁটাচলা না করতে পারলে আমি হয়তো বেঁচে থাকতে পারবো না। অর্থাৎ আমার নিজের জীবন আমার নিজের কাছেই অর্থহীন হয়ে যাবে।
দুপুরের দিকে আমার অর্ধাঙ্গীনীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। টুকটাক কিছু কেনাকাটা ছিল, যেগুলো করব করব করেও কেনা হচ্ছিল না। তাই আজ মুরুব্বিদের অনুমতি নিয়ে দুই জন মিলেই বের হয়েছিলাম। আমাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটাগুলো শেষ করতে অবশ্য বেশি সময় লাগে নি। প্রথমে ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরে যাবো। কিন্তু এতদিন পর বাড়ি থেকে বের হয়ে এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে মোটেও ইচ্ছে হচ্ছিল না।
তাই দুইজন মিলে ঠিক করলাম একটু কোথাও থেকে ঘুরে আসা যাক। যেই ভাবা, সেই কাজ। হাটতে হাটতে কুমিল্লা ধর্মসাগর পার্কে চলে গেলাম। কুমিল্লা শহরের ভেতর একটু খানি হাটাহাটি বা ঘুরাফেরা করার জন্য এই পার্কটাই সবচেয়ে বেস্ট। আর কুমিল্লায় যারা থাকে বা একদিনের জন্য হলেও আসে, তাদের কাছে এই পার্কটা একটা পরিচিত স্থান। কারণ ঘুরে ফিরে প্রায় সবারই এই পার্কে আসা হয়।
কুমিল্লা ধর্মসাগর দীঘির পাশে এই পার্ক এর অবস্থান। প্রায় ২৩.১৮ একর জায়গা জুড়ে এই দীঘির অবস্থান। ধারনা করা হয় ১৪৫৮ সালে ত্রিপুরার মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য এই দীঘির খনন করেন। এবং মহারাজা ধর্মমাণিক্যের নামানুসারেই দিঘীর নামকরন ধর্মসাগর করা হয়েছিল। সে হিসেবে এই দীঘির বয়স প্রায় ৬০০ বছর হতে চলল। এই অঞ্চলের মানুষের পানির কষ্ট দূর করার জন্যই মূলত এই দীঘিটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি কুমিল্লার মানুষের বিনোদনের এক অসাধারন মিলনমেলা হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত হয়েছে।
প্রায় দেড় বছর পর আজ প্রথম ধর্মসাগরে গিয়েছিলাম। তাও আবার একা না, বরং আমার অর্ধাঙ্গীনিকে নিয়ে। অনুভূতি সত্যিই অসাধারন। প্রায় ঘন্টাখানেকের মতো সেখানে ছিলাম, অর্থাৎ সন্ধ্যার আগমুহুর্ত পর্যন্ত। এর আগে বহুবার বন্ধুদের নিয়ে সেখানে গিয়ে আড্ডা দিয়েছি। কিন্তু আজকের মতো এত অসাধারন অনুভূতি এর আগে কখনো পাই নি।
আমি কুমিল্লায় প্রথম আসি প্রায় ১০ বছর আগে। তখন অবশ্য ধর্মসাগর এতটা উন্নত ছিল না। দিঘীর পাশে ছোট একটা ইটের রাস্তা আর তার পাশে পুরানো ভাঙ্গা একটা পার্ক। তবে এখনকার অবস্থা অনেক ভিন্ন। ইটের রাস্তার স্থানে দখন করেছে টাইলস আর সেই পুরানো ভাঙ্গা পার্কের জায়গায় নানা নতুন ও অত্যাধুনিক সব রাইড সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আমার বয়স যদি অনেক কম হতো, তাহলে হয়তো এইসব রাইডগুলো একটা একটা করে চড়ার জন্য খুব বেশি আগ্রহ হতো। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ায় এখন আর ছোটবেলার মতো সবকিছুতে এতটা আগ্রহ তৈরি হয় না।
তবে আমার সাথের জনের আগ্রহের কারণে একটা রাইডে উঠতে বাধ্য হয়েছিলাম। খুব বেশি খারাপ লেগেছে, তা বলব না। অভিজ্ঞতা বেশ ভালই ছিল। বিশেষ করে রাইডে চড়ার পর তার মুখে যে উচ্ছাসের ছায়া দেখেছি, সেই উচ্ছাসের ছায়ায় আমি কিছুটা হলেও আন্দোলিত হয়েছিলাম।
আরো কয়েকটা রাইডে চড়ার জন্য অবশ্য সে আবদার করেছিল। কিন্তু হাতে সময় কম ছিল। পুরো পার্ক জুড়ে হেটে বেড়িয়ে আর যত ধরনের খাবারের আইটেম আছে, সবগুলো ট্রাই করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, টেরই পাই নি। তাই তার এই আবদারটা আর রাখতে পারি নি। কারণ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সবাই বারবার বলে দিয়েছে যেন সন্ধ্যার আগেই যেন বাড়ি ফিরি। মুরুব্বিদের কথাও তো মাঝে মাঝে শুনতে হয়, তাই না?
তবে একটা জিনিস ভেবে ভাল লাগলো যে রিয়া আমার মতোই ভ্রমনপিপাসু ও খাদক। এর আগে আমি যখন যেখানে যেতাম, সেখানকার স্ট্রিটফুড গুলো একা একা টেস্ট করে দেখতাম। কিন্তু এখন আমার একজন সাথী হয়েছে। আমার পাশাপাশি সেও আজ ধর্ম সাগর পাড়ে যত ধরনের খাবারের আইটেম পাওয়া গিয়েছে, সবগুলোই একটু একটু করে খেয়ে ট্রাই করেছি আমরা। ভেলপুরি, পানি পুরি, ফুসকা, পেয়ারা ভর্তা, বাতাসা, আইসক্রিম, বাদামসহ আরো বেশ কিছু আইটেম ছিল। কয়েকটা আইটেমের নাম তো জানিই না, প্রথমবারের মতো খেয়েছিলাম আজ।
সব মিলিয়ে আজকের দিনটা খারাপ কাটে নি। বিশেষ করে বিয়ের পর আজকেই প্রথম স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়েছিলাম। দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় সারাটা দিনই এরকম করে কাটিয়ে দিয়েছি। কখনো হেঁটে হেঁটে আড্ডা দিয়েছিলাম, আবার কখনোও বা এটা সেটা খেয়ে খেয়ে। এখানকার খাবারের মান যে খুব একটা ভাল, তা বলব না। তবে টেস্ট আমার কাছে খারাপ লাগে নি। তবে ভেলপুরির স্বাদটা এখনোও আমার মুখে লেগে আছে...
Congratulations Man! Congratulations for your new Journey. Be happy in Life 🙂
Hi @reza-shamim, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Congratulation man. Have a happy life.
অভিনন্দন ও শুভ কামনা রইলো।
২২-২-২২ তারিখ আমিও কাজ সারে ফেলছি।