ট্রেনের হুইসেল

in BDCommunity3 years ago (edited)

এটা মনে করা হয় যে ট্রেন জার্নি সবচেয়ে মধুরতম জার্নিগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা। আর বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যানজট যেখানে নিত্যদিনের সঙ্গি সেখানে মানুষ ট্রেন জার্নিটাকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। কারন এখানে ট্রেন ভ্রমণকেই যোগাযোগের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যমে মনে করা হয়। মানুষের যত কষ্টই হোক না কেন, যত বড় লম্বা লাইনেই দাঁড়াতে হোক না কেন ঈদে বাড়ির ফেরার জন্য, কিংবা অন্য যে কোনো উৎসবে কিংবা সাধারণ দিনগুলোতে পরিবার নিয়ে গ্রামে যেতে যোগাযোগের মাধ্যমে হিসেবে রেলই তাদের পছন্দের তালিকায় সবার শীর্ষে থাকে।

IMG_20220524_144719.jpg

আমার ও প্রায়ই ট্রেন ভ্রমণ হয়ে থাকে, বেশিরভাগ সময়ও রেলেই যাওয়া হয় দূরে কোথাও গেলে। কিন্তু একটি ট্রেন জার্নি আমার কাছে একটু ব্যতিক্রম ছিল, ব্যতিক্রম বলতে একটু অন্য ধরনের যেমন আর বাকি কয়টা ট্রেন জার্নির মতো ছিল না। সেবার ২০১৯ এর শেষের দিকের কথা, চট্টগ্রাম যাওয়ার পালা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা দিতে। আমি একাই আমার সাথে বন্ধুরা আরো আগেই চলে গিয়েছে। প্রথমবার একা চট্টগ্রাম যাচ্ছি একটু নার্ভাস। স্টেশনে দাঁড়িয়ে একা একা ট্রেনের অপেক্ষা করতেছিলাম, ট্রেন আসার সময় ছিল সকাল ৯ টা ৪০ মিনিটে। প্রায় ২০ মিনিট লেট করে হুইসেল দিতে দিতে ট্রেন আসল কাটাকাটা ১০ টায়। ট্রেন থামতে না থামতেই প্লাটফর্ম যে ব্যস্ত হয়ে পরল, মানুষের পদচারণায়।

কেউ কেউ এক বগি থেকে অন্য বগিতে যাচ্ছে, কেউকে একবার তাদের টিকিটের দিকে তাকিয়ে তাদের কাঙ্খিত বগি খোঁজায় ব্যস্ত। আমি একা মানুষ, এসব পর্যবেক্ষণ করতে করতে সবাই ট্রেনে উঠে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে আমিও আমার নির্দিষ্ট বগিতে উঠে পড়ি। আর আমার সিটের কাছে গিয়ে দেখি অন্য একজন বসে ছিল, আমি তাকে রিকয়েস্ট করলাম আমার সিটটি ছেড়ে দিতে, পরে বসে পরলাম জানালার পাশের সিটটিতে। কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ে আসলো, ঠিক আমার সামনের সিটটি নাকি তার, সে সিটে বসে থাকা লোকটি সিটটি ছেড়ে দিলো।

আর মেয়েটি ঠিক আমার বরাবর সামনের সিটে বসে পরল। মেয়েটির সাথে তার বাবাও ছিল, কিন্তু তার বাবা দাঁড়িয়ে, অনেক কষ্টে নাকি একটি সিট কাটতে পেরেছে। সে যাইহোক আমার কি! মেয়েটির বাবা ফোনে কথা বলছিলো, সেখানে তার বাবাকে কি বনিক বলে জানি সম্বোধন করছিলো ফোনের ওই পাড়ে থাকা লোকটি, তারপর বুঝতে পারলাম তারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সে যাইহোক মুসলান হোক কিংবা হিন্দুই হোক আমার তাতে কি! আমি উপেক্ষা করতে চাইলাম। কিন্তু কেন জানি বারবারই আমি ব্যর্থ হচ্ছিলাম। মেয়েটির সিট ঠিক আমার বরাবর হওয়ায় কয়েকবারই আমার দৃষ্টির সাথে তার সাথে পড়ে যায়। মেয়েটির চেয়ে যেন আমিই বেশি লজ্জা পাচ্ছিলাম।

অবশেষে এরকম যে আর না হয় আমি আমার ব্যাগ থেকে পরিক্ষার প্রশ্নব্যাংক বের করে তাতে চোখ বোলাতে লাগলাম। আমার দেখাদেখি মেয়েটিও তার ব্যাগ থেকে বই বের করল। আমি প্রত্যাক্ষ করতে পারি, মেয়েটি তার বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে আমায় দেখছে। আমি আর কি করব আমার কিছু করার নেই। তার অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিলো সে আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক। আমার হাতের পানির বোতলটা দেখে, সে বলে উঠল "একটু পানি পান করা যাবে?" আমি বললাম, "হ্যাঁ, অবশ্যই এই নিন।" পানি পান করে ধন্যবাদ জানানো, সাথে সাথে আমার নামও জানতে চাইলো। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি এসব জিজ্ঞাসা করল।

এক এক করে আমি তার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিলাম। আমার নিজের মধ্যে ও তাকে প্রশ্ন করার ইচ্ছা জাগতে লাগল কিন্তু তার বাবা দেখে ভয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করি নি। এমনকি তার নামটা পর্যন্তও আমার কাছে অজানা রয়ে গেল। নামটা রেখে দিলাম মনে মনে অপরিচিতা। সীতাকুণ্ড এর পাশ দিয়ে ট্রেন যখন যাচ্ছিলো, উচু উচু পাহাড় আর নীল আকাশে স্বচ্ছ মেঘের রাশির খেলা দেখে আমি আমার পকেট থেকে মুঠোফোনটি বের করে সেসব দৃশ্যের ছবি আমার ফোনের কেমেরায় বন্ধিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

আমার দেখাদেখি সেও তার ফোন বের করে ছবি তোলা শুরু করে দিলো। একটু পর সে তার সিট থেকে দাঁড়িয়ে, তার বাবাকে বসার জন্য জায়গা করে দিলো, আর ঠিক আমার পায়ের বরাবর দাঁড়িয়ে পড়ল। তার এ অবস্থাটা আমাকে একটু অস্বস্তি দিচ্ছিল তাই আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে তাকে বসতে বলি। বাকিটা পথ আমি দাঁড়িয়ে যেতে থাকি, আর মেয়েটি জানালার পাশে আমার সিটটিতে বসে, তার খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়তে ছিলো আর বাইরের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ এ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে বসার জন্য অনুরোধ করতেছিল। কিন্তু আমি ঠিক আছি দাঁড়িয়েই। অবশেষে ট্রেন চট্রগ্রাম স্টেশনে এসে থামল।

মেয়েটি ব্যাগ গুছিয়ে নামার সময় আমাকে একটা ধন্যবাদ দিলো। অবশ্য তার আমার নাম্বার চাওয়ার একটা প্রবণতা তার মধ্যে লক্ষ্য করি, সেও আমার মতো পরিক্ষার্থী ছিলো। কিন্তু তার বাবার ভয়ে হয়তো আর ফোন নম্বর চাইতে পারল না, তাতে আমার কি! হাহা। আর পরিক্ষার জন্য আমাকে বেস্ট অফ লাক বলে গেল। আর এদিকে ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠল, আমি সাথে সাথে আমার ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়ি।

Sort:  

Congratulations @riazud! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):

You got more than 700 replies.
Your next target is to reach 800 replies.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL

শাটলে চড়তে চড়তে ট্রেন এখন পানসে হয়ে গিয়েছে। যদিওবা সিলেট যাবার সময় প্রথমবার আন্তনগরে চড়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম ছিলো।

অহ, আপনি তাহলে চবির। আন্তঃনগরের সাথে শাটল মিলালে হবে না। দুটা দুই ধরনের যদিও আমার শাটলে চড়ার অভিজ্ঞতা হয় নি।

হ্যাঁ, দুটো আসলেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা।