জীবনে যখন একঘেয়েমি হয়ে উঠে তখন বায়ু পরিবর্তন আবশ্যক! এই তীব্র গরম উপেক্ষা করে ছুটছি চুয়াডাঙ্গার পথে।যাচ্ছি বন্ধুর চাচার বাড়িতে।বিয়ের পর প্রথম যাচ্ছি তাই একটু ভয় কাজ করছিলো।নিজের এরিয়া ছাড়িয়ে যাচ্ছি বেশ কিছুটা দূরেই বটে।তবে হাতে মাপার দূরত্ব থেকে মনের দূরত্বটাই বেশী ছিলো।গন্তব্য চুয়াডাঙ্গার গোষ্টবিহার।গোষ্টবিহার নাম শুনে প্রথমে কিছুটা অবাক হলাম,এটা আবার কেমন নাম?!বন্ধু তখন বললো, তাদের গ্রামের এই জায়গায়টির নাকি একটি প্রাচীন ইতিহাস আছে।ইতিহাস সবটা জানতে হলে আমাকে যে পৌঁছাতে হবে তার চাচার বাড়িতে।নতুন কিছু জানার আগ্রহে হঠাৎ ভয় ভীতি কেটে গেল। মনে হলো কখন শুনবো এই গল্প?
চুয়াডাঙ্গায় যেতে রাতে রওনা দিয়ে পৌঁছে গেলাম খুব ভোরে।বাস থেকে নামলাম সরোজগঞ্জে।তারপর ভ্যানে করে সোজা চলে গেলাম গোষ্টবিহারে।যাওয়ার পরেই আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে দেখা করার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।যেহেতু সারা রাতের ভ্রমণ ক্লান্তি ছিলো।ঘুমিয়েও পরলাম!বেশ একটা লম্বা একটা ঘুম দিলাম।১১/১২ টায় ঘুম ভাঙতেই মনে হলো শরীর কিছুটা চাঙা হয়ে গেছে।এবার সোজা চলে গেলাম চাচার কাছে,গোষ্টবিহারের গল্পটা যে শুনতে হবে!
গল্প শুরু হলো....চাচা নিজেও তার ছেলেবেলায় আশেপাশের মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনেছেন এই ইতিহাস। চাচার বাসা থেকে কিছুটা দূরে আছে কালুপোল নামক জায়গা।সেখানে গন্ধর্ব রায় নামে একজন রাজার প্রাসাদ ছিলো।মুলত রাজা তার নিজের চলাচলের সুবিধার জন্যই চিত্রা নদীর তীরের সাথে এই কালুপোল নামক স্থানেই তার প্রাসাদ নির্মাণ করেন।প্রাসাদের চারপাশে বিশাল এলাকা নিয়ে তার নিয়ন্ত্রণে ছিলো।সেখান থেকে তার রাজ্য আরো বিস্তৃত লাভ করে।আর রাজার মুল অস্ত্র হলো তার সৈন্য সামন্ত।তার ছিলো বিশাল এক সৈন্য বাহিনী। তার এই সৈন্যবহরের জন্যই সে সেখানে দাপটের সাথে চলাচল করতো এবং সাথে রাজ্য পরিচালনা করতো।তাছাড়া শুধু যে সৈন্য তা না!হাতি, ঘোড়া আর গরু কোন কিছুরই অভাব ছিলো না।এখন যে চাচার বাড়ি সেখানে থেকে শুরু করে পুরো এলাকা নিয়ে ছিলো রাজার গো চারন।এর জন্যই পরবর্তীতে গ্রামের নাম হয় গোষ্টবিহার।
ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য একজন সাধক খাজা মালিক উল গাউস (র) গড়াইটুপি নামক স্থানে আসেন।এবং সে সেখানে বসবাস করে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।যেহেতু ঐ এলাকা রাজার নিয়ন্ত্রণে তাই তার অনুমতি ছাড়া আস্তানা বানানোর জন্য সে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হলেন!এবং তার লোক পাঠালেন যে তারা যেন তার রাজ্য ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু সাধক তার কথা অগ্রাহ্য করে তার করতে লাগলেন।এর ফলে তাদের মধ্যে এক অহিংস লড়াই শুরু হয় এবং দূর্ভাগ্যবশত রাজা হেরে যায়। প্রাণ বাচাতে সে তার কন্যাদের নিয়ে চিত্রা নদী পার হয়ে পালিয়ে যায়।তার পর থেকেই রাজার ভিটা পরিত্যক্ত হয়ে যায়।সভ্যতার পালাক্রমে মাটির নিচে চাপা পরে এই রাজার প্রাসাদ, যা এখানে সবাই রাজার ভিটার নামেই চিনে।তবে কালুপোলের এই গন্ধর্ব রায় রাজার ভিটা মুলত সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।কেননা বিভিন্ন সময়ে মাটি খুড়ে যে আসবাবপত্র পাওয়া গেছে তা খ্রিষ্টীয় ১৪-১৫ শতকের বলে ধারণা করা যায়।এখানে ভিটার সাথে ছোট করে একটা জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে,যেখানে ভিটা থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন পোড়ামাটির হাঁড়ি,থালা, বাটি, কলস, তৈলপ্রদীপ,প্রদীপদানি,মটকা,শিল-নোড়া, অলংকৃত ইট এসব দিয়ে সাজানো হয়েছে।তবে সংরক্ষণের অভাবে এই জায়গায়টা কিছুটা বিলুপ্তির কাছে।সরকারের উচিত অতি দ্রুত এটি সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা।