ফেসবুকের একটা পোস্ট দেখে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো!এক ভাই তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া হরেক রকম মৌসুমি ফলের বিভিন্ন আঙিকে তোলা ছবি দিয়ে লিখেছে,'আলহামদুলিল্লাহ, শ্বশুরবাড়ির ভালোবাসা'।ব্যাপার দৃষ্টিকটু হলে তার কমেন্ট বক্স ভরে গেছে বিভিন্ন মানুষের কথায়! কেউ বলছে, আমদের না দিয়ে খাবেন না ভাই আবার কেউ বলছে আফসোস! আমি পাই না!অনেকে আবার এমন শ্বশুরবাড়ি দেখেই বিয়ে করবে, আবার অনেকে বলছে অবিবাহিত শালী আছে কিনা ভাইয়ের!এই সব কমেন্ট গুলোতেই কেউ না কেউ সম্মতি দিচ্ছে। আবার বিভিন্ন বুদ্ধিও দিচ্ছে।আর আমার মতো বিবেকবান মানুষজন হয়তো দেখে কোন প্রতিবাদ না করে চলে আসছি।
আসলে যৌতুকপ্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে।এখনো যে দেশের অজপাড়া গ্রামগুলোতে তা দেখা যায় না,সেটা বললে ভুল বলা হবে আসলে!হয়তো নিরবে চলছে সব।কনে পক্ষরা মেয়ের সুখের জন্য কিছুটা দায়সাড়াভাবেই এই সমস্ত ব্যাপারটি গোপন করে যাচ্ছে।এখন অবশ্য ডিজিটাল যুগ।তাই যুগের সাথে হাওয়া বদল হয়।আগে সময়ে যৌতুক বলতে বুঝাতো বিয়ের পূর্বে বরপক্ষের অভিভাবকরা কনেপক্ষের অভিভাবকদের কাছ থেকে জোর পূর্বক মূল্যবান উপহার সামগ্রী আদায় করা।ব্যাপারটা এমনভাবে পরিবেশন করা হতো যেন মূল্যবান সামগ্রী দিতে ব্যর্থ হলে বিয়েতে যেন না আগ্রহ না দেখানো হয়।কতযে নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হতো, যদি তার পিতা শর্তমতো যৌতুক পূরণ করতে না পারতো।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার একটি গল্পে চমৎকারভাবে তা উপস্থাপন করে গেছেন।হৈমন্তী পড়ে কেউ মন খারাপ করেনি,তা কেউ হয়তো বলতে পারবে না!
তবে নতুন দম্পতিকে সবাই সবার সামর্থ্য মতো উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে,এটাই স্বাভাবিক ।বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে,যৌতুক দেয়া বা নেয়া দুটোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ!যদি এভাবে কারো অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা তার সমপরিমাণ জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিক অসচ্ছল সমাজে যৌতুক যেন একটি সাধারণ ব্যাপার।যা নারীর প্রতি অসম্মানজনক।এর জন্য নারীদের বিভিন্নভাবে শারীরিক বা মানুষিক অত্যাচারও করা হয়ে থাকে।এখন আসি আমাদের ডিজিটাল যুগে!এখানে ফেসবুকের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এই যৌতুকের সমর্থন করে আসছে।অমুক মেয়ের বাবা মেয়েকে এত টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়েছে!?আমার বাবাও যেন এমন কিছু করে।সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কিভাবে বিয়ে করলো তাই নিয়ে চলছে নীরব প্রতিযোগিতা।এই আমার পরিচিত ভাই,উনি কিন্তু বেশ ভালো চাকরি করছেন।হয়তো শ্বশুরবাড়ি থেকে আসা জিনিসপত্রকে দেখানোর জন্য তার স্ত্রী তাকে আগ্রহী করেছেন।এখন তার মাধ্যমে অন্য আরেকজন আগ্রহী হবে!হয়তো এক সময় এটাই হয়তো ট্রেন্ড হয়ে যাবে!এই ট্রেন্ড মেনে চলতে গিয়ে হয়তো অনেক মেয়ের বাবা অমানুষিক কষ্টে দিন কাটাবে।তা হয়তো কেউ জানবে না।আবার এই ট্রেন্ডের কারনে কোথায় কোথায় অত্যাচারের ঘটনা ঘটবে।
আজ থেকে বহুবছর আগে যখন মেয়েরা এই যৌতুকের অযৌক্তিক দাবীতে তার স্বামী বা তার পরিবারের মানুষের দ্বারা দিনের পর দিন অত্যাচারিত হওয়ার পর আত্মহত্যা করতো,সেদিনটা আবার হয়তো ফিরে আসবে। তাই সময় থাকতে সবাইকে সচেতন হতে হবে!নিজের শিক্ষার সঠিক ব্যবহার করতে হবে।কেউ যদি ভুলেও এভাবে কিছু ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ করে তাহলে নিজের মতামত প্রকাশ করে তার নেগেটিভ প্রতিফলনটা বুঝাতে হবে।নইলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যৌতুকের যেই প্রথা আমরা বিলুপ্ত করেছিলাম তা নতুনভাবে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে,নতুন বেশে।যা আমাদের সমাজকে প্রভাবিত করার আগেই,তার প্রতিবাদ করা উচিত।
যৌতুকের বর্তমান নাম এখন উপহার। ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষের কাছে এখন যৌতুক চায় না। শুধু বলে আমরা আপনাদের কাছে কিছুই চাই না, আপনারা খুশি হয়ে যা দিবেন তাই।😊
এই উপহার পর্ব থেকে সমাজ যে কবে বের হতে পারবে!! :(
আমাদের সমাজের মানুষের চিন্তা ধারা বদলাতে হবে। আসলে সব মানুষ সমান না। ভালো মন্দ উভয়েই আছে। তবে এমন অনেক লোক আছে যারা মুখে যৌতুকের বিরুদ্ধে কথা বলতেছে কিন্তু ওইদিক দিয়ে ঠিকই যৌতুক নিচ্ছে। মানুষের মধ্যে কেনো জানি অন্যের জিনিসের প্রতি অনেক লোভ।
আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও মানুষ প্রলুব্ধ হচ্ছে এখন।তাই এমন কিছুই করা উচিত না যাতে মানুষ পরোক্ষ যৌতুক নিতে আগ্রহবোধ করে।আপনাকে ধন্যবাদ আমার কথাগুলো সুন্দরভাবে বুঝার জন্য।
Congratulations @rodmila! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 700 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!