আজকাল কেন জানি দিনটাকে খুব ছোট মনে হয়!ব্যাপার এরকম, নিয়ম মেনেই সকাল হয় আর কিছু করার আগেই সন্ধ্যা। চব্বিশ ঘন্টায় যে একটা দিন পার হচ্ছে ব্যাপারটাই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।হাতে যেন কোন সময় নেই।কিন্তু ছোটবেলায় দিনগুলো কত্ত বড় ছিলো।সেই ভোরবেলায় উঠে মাদ্রাসায় কুরআন পরতে যাওয়া।এসে স্কুলের পোশাক পরে নিজেকে তৈরি করে,সকালে নাস্তা খেয়ে হেঁটে হেঁটেই স্কুলে যাওয়া।স্কুলে যাবার সেই ছোট্ট পথে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে নিমিষেই পৌছে যেতাম!ততক্ষণে মাত্র সকাল নয়টা বাজে।স্কুল শেষে বাসায় পৌঁছাতে বেজে যেত একটা।গোসল খাওয়া শেষে ভরদুপুরে একটা অলস ঘুমও হয়ে যেত!পড়ন্ত বিকেলে ব্যস্ত থাকতাম মাঠে দৌড়াদৌড়িতে।সন্ধ্যার আযানটা কানে আসতেই আর কোন পিছুটান থাকতো না।সবাই একসাথে দৌড়ে যেতাম নিড়ে ফেরার উদ্দেশ্যে।সন্ধ্যার নাস্তা খেয়েই পড়তে বসা,সব কিছুই ছিলো নিয়মতান্ত্রিক। কিন্তু কত বড় একটা দিন পার করে ফেলতাম। আর এখন?!সকাল দেরি করে উঠি,আর তাতেই যেন সময় স্বল্পতায় ভুগি।কি করবো,না করবো ভাবতেই দিনের সময়টা শেষ হয়ে যায়।
একদিন হঠাৎ এক অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো।ফোন ধরতেই ঐপাশ থেকে একজন ভারী কন্ঠে আমাকে বললো 'কেমন আছিস'?একটা ধাক্কার মতো খেলাম।বুঝলাম যে পরিচিত কোন বন্ধু।তারপরে আলাপের পরে বুঝে গেলাম কে সেই বন্ধু!বন্ধুটা অনেক পুরনো।সেই ছোট্টবেলায় একসাথে মাদ্রাসায় পরতাম আমরা।বাবা সরকারি চাকুরির কারনে আমরা সরকারি কোয়ার্টারে থাকতাম।বয়স তখন সাত কি আট।বাবা তখন আমাদের দুইবোনকে কোয়ার্টার এর ভিতরেই একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন।ওখানে মোটামুটি ছেলে -মেয়ে মিলে আমরা প্রায় ত্রিশ- চল্লিশ জন। বেশিরভাগ সমবয়সী। মেয়েদের আর ছেলেদের দুইসারিতে বসানো হতো। তো প্রথম সারিতে বসলে বরাবরের মতো বোর্ড দেখা যেত! যেই সুযোগটা আমরা ছেলে - মেয়েরা সবাই নিতে চাইতাম। আমাদের হুজুর কোন নিয়ম দেননি শুধু বলেছিলেন, যে ছেলে বা মেয়ে আগে আসবে তারা প্রথম সারিতে বসবে।ব্যস! নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল।আমরা মেয়েরা ঠিক করতে লাগলাম একেকদিন একেকজন আগে এসে সামনের সারি দখল করবো।একদিনতো ঔ বন্ধু আর আমার মধ্যেই ঝগড়াই লেগে গেল।ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমি দিলাম এক চড় বসিয়ে। ব্যস!ওর কান্না শুরু।এবারতো ওর মা এসে আমার আব্বুর কাছে বিচার দিয়ে গেল।আব্বু প্রথমে রাগ করলেও পরে আর আমাকে কিছুই বলেনি।কিন্তু ঘটনার পরে হুজুর নিয়ম করে দিলেন যে, একদিন ছেলেরা সামনে বসবে আর একদিন মেয়েরা।আর এভাবেই মারামারি করে চলতো আমাদের দিন।
গত বছর যখন টানা লকডাউন চলছিলো।মানে বাইরে একদমই যাওয়া যাবে না।কিছুটা স্থবির সবকিছুই।তখন একদিন সাহস করে বেরিয়েই পরলাম!তখন ঈদ উপলক্ষে দোকানগুলো খুলে দিয়েছে রাত ৮ টা পযর্ন্ত।পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার ভয়াবহতার স্থির চিত্র দেখার পরে আসলে তখন ঈদের আনন্দ কিছুটা ফিকেই হয়ে গেছিলো।তার মধ্যেই একদিন বের হলাম। বাসা থেকে বের হলেই আড়ং এর শোরুম। একটু ঘুরেই আসার উদ্দেশ্যে গেলাম।সকাল সকাল দেখে মানুষের তেমন ভিড় ছিলো না! ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম সব।হঠাৎ করে কে যে পাশ থেকে নাম ধরে ডাক দিলো।হঠাৎ ডাক শুনে একটুখানি চমকেই গেলাম বটে।পাশ ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম,আমার পুরোনো সেই বন্ধু!অনেকটা বছর পরেই দেখা আমাদের।নিজেদের নিয়ে কথা হলো।বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করার পর বললো, করা হয়নি এখনো!আর আমার সহজাত উত্তর বিয়েতে দাওয়াত দিস বন্ধু!এভাবেই আলাপ শেষ হলো।
আজ আবার হঠাৎ ফোন দিলো বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত দিতে।আচ্ছা পুরোনো বন্ধুত্বগুলো এত গভীর কেন হয়?!
বন্ধুত্ব অনেক দামি একটা জিনিস ,এটার কোনো সহজ কোনো ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব না , আপনি খুব সুন্দর করে আপনার বন্ধুর একটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ,
ধন্যবাদ আপনাকে। আসলে বন্ধুত্বের কিছু সুন্দর উদাহরণ আপনা -আপনি সামনে চলে আসে,যা এক গভীর অনূভুতির সৃষ্টি করে!
বন্ধুত্ব এক অদ্ভুত সম্পর্ক। যে সম্পর্কে থাকেনা কোন চাওয়া আর পাওয়া। অনেক ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্কের চাইতেও গভীর হয় বন্ধুত্ব। বন্ধু না থাকলে হয়তো জীবনের অর্থটাই অপূর্ণ থাকতো।
কথাটা একদম সত্যি! জীবনের কিছু পূর্ণতা বন্ধুত্বই আনে।
হা! বন্ধুত্ব এক মধুর সম্পর্ক। আমিতো জীবনে প্রতিটা পদক্ষেপে বন্ধুদের পাশে চাই 🙂
দিনকে ছোট মনে হওয়া মানে দিন খুবি ব্যস্ততায় কাটছে অথবা আনন্দে কাটছে...
ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে হয়তো বছরের পর বছর দেখা হয় না কিন্তু মনের মধ্যে থেকে যায়....
আসলে কাজের হিসাবটা দিনেই ভালোভাবে করা যায়।যার সকাল যত তাড়াতাড়ি হয়, সে শুরু করার সময়টা বেশী পায়।
Congratulations @rodmila! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 80 posts.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!