Image Source!
বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি, আম্মাকে বললাম জানালাটা খুলে দিতে মৃদু বাতাসের গন্ধ নিতে ইচ্ছে করতেছে আমার। আম্মা জানালাটা খুলে দিলো। জানালাটা খুলে দেয়ার সাথে সাথেই বাতাসের প্রচন্ডতায় আমার মুখে এক দুইফোটা বৃষ্টির পানি পড়লো,আমার জানালায় মুখ দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজার ইচ্ছে করছিলো যেমনটা আগে তটিনীর সাথে ভিজতাম।ওহ ভালো কথা তটীনি আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো কলেজ লাইফে। আমার লাইফের এই চ্যাপ্টার টা অনেক ভালো ছিলো অনেক এক্সসাইটিং ছিলো(এখনকার এই বোরিং টাইমের তুলনায়)। ছোটবেলায় থেকেই আমি পড়ালেখায় অনেক ফোকাসড। আমার জীবনটা আমি এই বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম।ওহ দুঃখিত আমার বাবা-মা আমার জীবনটা এইভাবেই পরিচালনা করেছেন। বিকালে যখন আমার সব বন্ধুরা বাইরে ক্রিকেট খেলতো আমি বসে বসে পড়তাম। আমার খেলতে অনেক ইচ্ছে করতো কিন্তু আমার আব্বা আম্মা আমাকে খেলতো দিতো না। অতপর এইসব খেলাধুলার প্রতি আমার আগ্রহ কমে যায়। তখন আমিও আমার এই লাইফটাকে এক্সেপ্ট করে নিলাম। ভাবলাম পড়ালেখা শেষ করে আমার যত ইচ্ছা যত শখ সব পূরন করবো এই ধারাবাহিকতায় আমার স্কুল জীবন, কলেজ জীবন শেষ করে আমি আমার ইউনিভার্সিটি লাইফে পদর্পন করলাম। আমি ছোটবেলা থেকেই একা থাকতেই পছন্দ করি তাই আমার তেমন কোনো বন্ধু বান্ধব নেই। যেটা আমার ইইউনিভার্সিটি লাইফেও ঘটলো প্রায় ১ সপ্তাহ কেটে গেলো আমার কোনো বন্ধু হলো না এবং এ ব্যাপারে আমার কোনো অনুশোচনাও নেই। একদিন সকাল ১০ টায় মনে হয় প্রচন্ড বৃষ্টিতে রিকশা থেকে নেমে ছাতা মাথায় ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম আর তখনই বলা নেই কওয়া নেই একটা মেয়ে আমার ছাতার নিছে এসে বললো, তোমার নাম রাকিব না? আমি উত্তর দিলাম হ্যা
৷ সে বললো আমি তোমাকে চিনি আমি তোমার ক্লাসমেট আমি এখন ক্লাসেই যাবো আমার কাছে ছাতা নেই। আমি এইটুকুই বললাম ইট'স ওকে। তারপর সে মেয়েটি অনর্গল কথা বলেই গেলো আর আমি শুনলাম কিছুই বললাম না। মোটকথা আমি তাকে ইগনোর করতে লাগলাম। হ্যা এই মেয়েটিই হচ্ছে তটীনি যাকে আমি ইগনোর করছি। তারপর সে যখনই আমার সাথে দেখা করতো অনর্গল কথা বলেই যেতো আমি শুনতাম। কোনো উত্তর দিতাম না। এভাবে প্রায় ১০-১৫ দিন গেলে এখন আমার তটীনির এসব ইল্লোজিকেল কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগে। এমন একটা চঞ্চল মেয়েকে আমার পছন্দ হবে আমি কোনোদিনই ভাবতেই পারি নাই। আমার ইউনিভার্সিটি জীবনে এখন আমি একা নই আমার একটা বন্ধু আছে আর তার নাম তটিনী। তার সাথেই আমার প্রথম ক্লাস বাংক। বিকালে ফুচকা খেতে যেতাম। জীবন খুবই ভালো কাটছিলো তটীনির সাথে৷ এখন আমার মনেহয় জীবন এঞ্জয় করতে হলে একটা বন্ধুর খুবই দরকার। আমি আগেও বলেছিলাম আমার জীবনে কিছু শখ রয়েছে যেগুলো এখন আমি তটীনিকে ছাড়া চিন্তাও করতে পারি না। আমি বোধহয় আমার সেই বন্ধুটাকে অর্থাৎ তটীনিকে ভালোবেসে ফেলেছি। সরি বোধহয় নয় আমি তাকে ভালোইবেসে ফেলেছি। কিন্তু এটা বলতে আমার ৪ টা বছর কেটে গেলো৷ আজ আমাদের ফাইনাল ইয়ারের শেষ দিন ভাবলাম আজকেই তটীনিকে বলবো কিন্তু সেটা আর হলোনা তটীনি তার আগেই আমাকে তার বিয়ের সংবাদ টা দিয়ে দেয়। আর আমিও সেটা উপেক্ষা করে সাহস করে কিছু বলতে পারিনি৷ তটীনি তার বিয়ের সর্বপ্রথম কার্ডটা আমাকেই দিয়েছিলো কিন্তু আমি বিয়েতে এটেন্ড করিনি। বুকের ভিতরে অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু এটাতো আমি রাকিব আমি সবকিছু মানিয়ে নিতে পারি। যাইহোক আমার পড়ালেখা শেষ হলো একটা মাল্টি ন্যাশনাল এ ৬ ডিজিটের স্যালারির চাকরি পেয়েছি। এই দিনটার জন্যই তহ আমি অপেক্ষা করছিলাম। এখন আমি আমার সব শখ সব আহ্লাদ পূরন করবো দুনিয়া দেখবো। কিন্তু অশনী সংকেত এর কয়েকদিন পরেই আমার ক্যন্সার ধরা পড়লো আর এখন আমি হসপিটালের ব্যাডে বৃষ্টি দেখছি আর নিজেকে দোষারোপ করছি কেনো আমি আমার জীবটা আমার ইচ্ছেমতো যাপন করিনি! কেনো নিজেকে এই বই পুস্তকের নিচে আবদ্ধ করে রেখেছি আবদ্ধ হয়ে থাকার জন্য তহ মানুষের সৃষ্টি হয় নি।তাহলে আমি কোনো আমার নিজের ইচ্ছায় যাপন করিনি এসব চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর একটা জিনিস মনে হচ্ছে অইদিন তটীনিকে আমার মনের কথা বলার উচিত ছিলো।
Sort: Trending