ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাস
source
ফুটবল বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খেলা ফুটবল খেলা পছন্দ করেনা এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফুটবলের ইতিহাস অনেক পুরাতন।ফুটবল শুধু একটি খেলার নাম নয় , এটি একটি ভালোবাসার নাম । বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৫% লোক কম বেশী ফুটবল পছন্দ করেন। এত এত সংখার ভিতর দিয়ে হয়তো এর ব্যাপকতা বুঝা যায় কিন্তু এর প্রতি ভালবাসার বিন্দু মাত্র বুঝানো সম্ভব না।ফূটবল ভক্তরা ৪ বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে। এই বিশ্বকাপের জন্য একটা দল দিনের পর দিন মাঠে ঘাম ঝরায়। তাদের সব কস্ট তখনই সফল হয় যখন সেই বিশ্বকাপটি তাদের হাতে এসে ধরা দেয়। ৩৬.৮ সেন্টিমিটারে উচ্চতার এই ট্রফি বিশ্বের ফুটবল খেলূড়ে দল গুলোর নিকট একটি স্বপ্ন।১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে প্রথম বিশ্বকাপ খেলা শুরু হয়েছিল। তবে বিশ্বকাপ দেয়ার প্রচলন কিন্তু শুরু হয় ১৯৭৪ সালে জার্মান বিশ্বকাপ থেকে। তবে এর আগ পর্যন্ত যে কাপটি দেয়া হতো সেটির নাম ছিল ‘জুলেরিমে ট্রফি’। ফিফার প্রেসিডেন্ট স্যার জুলেরিমের নাম অনুসারেই এই নামকরণটি দেয়া হয়েছিল। এই কাপটির আকৃতি দেয়া হয়েছিল গ্রীক দেবী নাইকোর আদলে। ১ কেজি৮০০ গ্রাম নিখাদ স্বর্ণ আর বিশেষ ধরনের পাথরের ব্যাবহার ছিল এই কাপটিতে।
ইতালি ফুটবল দল ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮ সালে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা সেই কাপটি নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। যুদ্ধ শুরু হলে নাৎসি বাহিনী সেই মূল্যবান কাপটি খুজতে থাকে। তখন সেটি তৎকালীন ফিফা সহ সভাপতি ইতালির নাগরিকের হেফাজতে রাখা হয়েছিল। বিপদ আসন্ন দেখে তিনি সেটিকে রক্ষার জন্য খুবই সাধারন একটি জুতার বাক্সে এটিকে রেখে দেন। তাতেই রক্ষা হয় এই কাপটির।এরপর আবার ২০ বছর পর এটিকে মুখোমুখি হতে হয় ভয়াবহ বিপদের। সেই বছর বিশ্বকাপ হবার কথা ছিল ইংল্যান্ডে। খেলা শুরুর ১ মাস আগে কাপ্টিকে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকেই সবার সামনে দিয়ে কাপটি হারিয়ে যায়। কাপটি হারিয়ে যাবার পর পুরো ইংল্যান্ড জুড়েই ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। ব্রিটেনের সবচেয়ে চতুর গোয়েন্দারাও হার মেনে যায় কাপটিকে খুজে বের করতে জেয়ে।সবাই যখন খুজে খুজে হয়রান ঠিক তখনই দক্ষিন লন্ডনের একটি পুলিশ কেন্দ্রে ২৬ বছর বয়সী ডেভিড নামক এক যুবক তার পোষা কুকুর নিয়ে হাজির হয়। তার হাতে ছিল হারিয়ে যাওয়া সেই মহা মুল্যবান কাপ । অতি সাধারন একটি কাগজ দিয়ে কাপটি মোড়ানো অবস্থায় ছিল। ডেভিড কারভেড বলেন প্রতিদিনের মতই সে তার পোষা কুকুরকে নিয়ে সকালে হাটতে বের হন। কিছুদুর জাওয়ার পর হটাত তার কুকুরটি দাঁড়িয়ে যায় এবং চিৎকার করতে থাকে। তারপর কুকুরটি তাকে একটি গাছের নিচে নিয়ে যায় যেখানে কাগজে মোড়ানো ছিল এই ট্রফিটি। এই কাপটি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ডেভিড ও তার কুকুরকে ৩০০০ পাউন্ড পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।
এরপরেও শেষ হয়নি এই আলোচিত কাপটি নিয়ে নাটকীয়তার। ফুটবল বিশ্বকাপের নিয়ম অনুযায়ী যদি কোন দেশ ৩ বার বিশ্বকাপ জয়ী হয় তাহলে সেই কাপ্টির মালিকানা তাদের হাতে চলে যাবে। সেই নিয়ম অনুযায়ী ব্রাজিল তিন বার বিশ্বকাপ জয়ী হয়েছিল এবং মুল্যবান ট্রফিটি তাদের দেশে নিয়ে এসেছিল। ১৯৮৩ সালে ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন ভবন থেকে চিরদিনের জন্য চুরি হয়ে যায়। এই চুরির পেছনে জড়িয়ে ছিল একজন ব্যাংকার ও একজন পথভ্রষ্ট অবসর প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর তারা চুরির কথা সবীকার করে নেন এবং বলেন যে তারা কাপটিকে গলিয়ে সোনার বারে পরিনত করে বিক্রি করে দিয়েছেন সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে। এইভাবেই হারিয়ে যায় সেই ঐতিহাসিক জুলেরিমে কাপটি। যদিও ব্রাজিল ফুটবল ফেডারশন ওনুরুপ একটি রেপ্লিকা বানিয়ে নিজেদের সকল অর্জনের পাশে সেটি সাজিয়ে রেখেছেন।১৯৭০ সালে ব্রাজিল নিজেদের দেশে ট্রফিটি নিয়ে জাবার পর থেকেই নতুন করে ট্টফি বানানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কাজটি অনেক কঠিন। সারা বিশ্বের সব নামকরা ডিজাইনারদের বলা হয় নতুন একটি ট্রফির নকশা করে দেয়ার জন্য। সারা বিশ্বের সেরা ৫৩ টি নকশা প্রাথমিক ভাবে নেয়া হয় সেখান থেকে অনেক জাচাই বাছাই করে ১০ টি নকশা সিলেক্ট করা হয়। সেই ১০ টি নকশার ভেতর থেকে ইতালির নাগরিক সিল্ভিও গাজ্জানিগোর করা ট্রফিটিকে চুড়ান্ত করা হয়।এই নতুন কাপটির বিশেষত্ব হলো দুইজন খেলোয়াড় দুইজন দুইজনের পিছনের দিকে দাঁড়িয়ে হাত উচু করে বিশ্বকে ধরে আছে । দেখে মনে হয় যেন বিশ্বটি তারা জয় করে নিয়েছে। এই কাপটিতে রয়েছে ৫ কেজি স্বর্ণ। ১৯৭৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২ টি দেশের নাম এই কাপটির নিচে লেখা হয়ে গেছে। কাপটির নিচে যে পরিমান জায়গা রয়েছে এতে করে ২০৩৮ সাল পর্যন্ত এর ভিতরে নাম লেখা যাবে। এরপর কি হবে আমরা তা পরে জানতে পারবো তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আগের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিফা এই কাপটিকে কখনই একেবারে কারো হাতে তিলে দিবে না।
এই কাপটিকে যেই নিরাপত্তার চাদরে রাখা হয় সেরকম নিরাপত্তা অনেক দেশের রাষ্ট্র প্রধানরাও পায় না। বর্তমানে এটি জুরিখ শহরের কঠোর নিরাপত্তার চাদরের ভিতরে রাখা আছে।
এই কাপটি জয়ী দলের খেলোয়াড়েরা , কোচ, ফিফা প্রেসিডেন্ট, ছাড়াও বিশেষ কিছু ব্যাক্তির জন্যই কেবল স্পর্শ করার অনুমতি দেয়া আছে। ফুটবল প্লেয়ারদের জাদুকরি সব কৌশল আর জমজমাট সব খেলার ভিড়ে অনেকেই এই কাপটির পেছনের গল্প জানতে চাননা। কখন কিভাবে কার হাত ধরে এই বিস্ময়কর ট্রফির আবির্ভাব। অনেক হাসি ,কান্না, ভালবাসায় আর আবেগে জড়িত এই কাপটি। একজন ফুটবল খেলয়াড়ের জিবনে কিংবা একটি দেশের অনেক সম্মানের ব্যাপার থাকে এই সোনালী রংয়ের সপ্নিল ট্রফিটির পেছনে। 2022 সালের ফুটবল বিশ্বকাপ কাতারে অনুষ্ঠিত হবে। করো না পরিস্থিতির কারণে এই বিশ্বকাপ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তারপরও সবাই আশা বাদী যথাসময়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে