লোকে মুখে যতই বলুক অর্থই অনর্থের মূল তাসত্ত্বেও অর্থ ছাড়া জীবন অচল।প্রত্যেক মানুষই মুখে বলে হোক আর না বলে, জেনেই হোক আর না জেনে, টাকার পিছে ছুটে চলেছে সবাই।আমিও এর ব্যতিক্রম নই।অর্থ যুদ্ধ আমার শুরু হয়েছে সেই বাল্যকালে।আমি যখন ৫ম শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার এক দূর সম্পর্কের ভাবি তার পাঁচ বছরের ছেলে কে নিয়ে এসে বলেছিলেন আপা আপনার ভাইপুকে অক্ষর গুলো শিখায়েন।
আমাদের এলাকায় ননদ যত ছোটই হোক ভাবিরা তাকে আপা বলে সম্বোধন করে। ওনি আমাদের আপনি বলেন। ওনার ছেলেকে আমি বিকেলে আসতে বলি। ওকে দুই দিন পড়ানোর পর দেখি ওর বয়সি আবার যারা নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে তাদের মা ও নিয়ে এসেছে পড়ানোর জন্য। এভাবে প্রথম মাসেই তের জন ছাত্রছাত্রী হয়ে গেলো। আমি ওদের পাঠের চটে বসিয়ে পড়াতাম বিকেল বেলা। এক মাস পর দেখি সবার মা বেতন দিয়ে গেলো প্রথম যে এসেছে সে ছাড়া। প্রত্যেকে পঞ্চাশ টাকা করে দিলো। ছয়শত টাকা হলো, এতো অনেক টাকা। যেখানে স্কুলে যাওয়ার সময় আম্মা কোনো দিন দুই টাকা দিলে নিজেকে ধনী মনে হতো।প্রথম যে এসেছিলো তার মা ও আমাকে বেতন দিয়েছিলো তিন মাস পর ষাট টাকা।
এরপর আমার আর থামতে হয়নি। যখন আমি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তখন আমি সপ্তম,অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গনিত আর ইংরেজি পড়াতাম।তখন আমি যা উপার্জন করতাম আমার চাওয়া গুলো তার চাইতে ছোট হতো। তাই আমার প্রত্যেকটা চাওয়ায় পাওয়ায় পরিনত হতো।আমি আমার নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারতাম সাথে পরিবারের জন্যও সামান্য কিছু করতে পারতাম।এরপর আমি ঢাকায় চলে আসি উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য।সেখানেও ভালো একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে আমার বেশি দিন লাগেনি। একটা এনজিওর স্কুলে চাকরি করে প্রতি মাসে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা হয়ে যেতো। তাতে আমার থাকা খাওয়া পড়াশোনার খরচ করেও পরিবারকে হালকা সাহায্য করতে পারতাম।
এরপর সংসার জীবন মালয়েশিয়া এসে পড়াশোনা আর ব্যবসা সব ভালোই চলছিলো। হঠাৎ করোনা এসে সব বিগড়ে দিলো। এখন আলহামদুলিল্লাহ সব ভালো চলছে। স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি আশা করি আমার স্বপ্ন শীঘ্রই সত্যি হবে।
এবার আসি আমি যদি এক মিলিয়ন ডলার পেতাম তাহলে প্রথমে আমি আমার প্রিয়জন অথ্যাৎ মা বাবা, শশুর শাশুড়ী, ভাইবোন ওদের যার যা অভাব তা মিটিয়ে দিতাম। সবার একটা করে স্পেশাল ইচ্ছা পূরণ করতাম। তার মধ্যে আমার আম্মার একটা সুন্দর ছাদ ওয়ালা বাড়ি। সেটা আমি খুব সুন্দর করে দুতালায় ঝোল বারান্দা দিতাম। বিভিন্ন দামী পাথর দিয়ে মেজে তৈরি করতাম। এরপর আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়ে দিতাম। এতে অবশ্যই খুব সামান্য অর্থই খরচ হবে। এরপর আমার স্বপ্ন পূরনের পালা।
প্রথমে আমি শহর থেকে অনেকটা দূরে নির্জন কোন এক স্থানে একটা জমির ব্যবস্থা করব। জমিটা ছোট হলেও বিশ বিঘা হবে। যদি একটু বেশি পাওয়া যায় তাহলে ভালো হয়।তারপর এর মাঝে তৈরি করবো আমার স্বপ্নের বাগান বাড়ি। আমার বাগান কয়েকটি ভাগে বিভক্ত থাকবে। জমিটার সর্ব উত্তরে থাকবে অন্দরমহল। অন্দরমহলটা খুব বড় নয় মোটামুটি আটটি শোবার ঘর একটা হলরুম, একটা হেসেল, একটা নামাজের ঘর আর একটা মেহমান খানা থাকবে।প্রত্যেকটা শোবার ঘরের সাথে থাকবে আধুনিক ও বিলাস বহুল গোসলখানা। অন্দরমহলের সামনে থাকবে একটা ফুলের বাগান, ঘাটবাদা পুকুর আর একটা খেলার মাঠ। বাকী জমিটুকু রাস্তা দিয়ে দুই ভাগ করবো।রাস্তার এক পাশে থাকবে বাঁশঝাড়, ফলের বাগান,কাঠের গাছ ইত্যাদি। এসব বাগানকে আমি পাখিদের অভয়ারণ্য বানিয়ে দেবো।রাস্তার অপর পাশে পাঁচটি গরীব পরিবারের পুনর্বাসন ব্যবস্থা করব। বাকী যেটুকু জমি থাকবে তাতে ছোট আকারের একটা পুকুর দেবো ধান ও সবজির কিছু জমি রাখবো। যাতে পুনর্বাসনের লোকেরা মাছ চাষ করবে আর ফসল ফলাবে আমার বাগান বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করবে পুনর্বাসনের পরিবার গুলো।
সাথে থাকবে বড় আকারের একটা মাক্রোবাস যাতে সবাই মিলে মাঝে মাঝে ঘুরে আসতে পারি পাহাড় কিংবা সাগরে।
আমার স্বপ্ন গুলো ঘুরপাক খায় শহর থেকে দূরে তাই আসা করাই যায় এক মিলিয়ন ডলার হলেই যথেষ্ট। আমার কোনো পাজেরো কিংবা বি এম ডাব্লিউ এর প্রয়োজন নেই চলতে পারে এমন মাক্রো বাসই সই।স্বপ্ন যেন সত্যি হয় এই প্রত্যাশা।

Congratulations @setararubi! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 600 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!