আমরা কুয়ালালামপুরের অধিবাসী।আমাদের ছোট্ট একটা ব্যবসা আছে।ব্যবসার কাজে প্রতি মাসে দুইবার করে পুচং যেতে হয়। পুচং কোয়লালামপুরের পাশের জেলা।আমাদের বাসা থেকে পুচং আমরা যেখানে যায় ১০০-১২০ কিলোমিটার হবে।ট্রেনে যাওয়ায় সুবিধা জনক। আমার মেয়ে জন্মের আগে আমার স্বামী ও আমি দুই জন একসাথে যেতাম বেশিরভাগ সময়। একা ও গিয়েছি অনেক বার। তবে আমার মেয়ের জন্মের পর আর আর যাওয়া হয়নি।মেয়ের বাবা যায়। তবে এই তারিখে আমাকে অবশ্যই যেতে হবে। ছোট বাচ্চা নিয়ে এতদূর যাওয়া আসা সমস্যা তাই আমার আশি দিনের কন্যাশিশুকে তার পিতার দায়িত্বে অর্পন করে আমি পুচং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমার বাসা থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই স্টেশন হাংতোয়া।আমি হাংতোয়া থেকে ট্রেনে উঠলাম। হাংতোয়া থেকে বারটা স্টেশন পর পুচং।৩৫-৪০ মিনিট সময় লাগে পৌঁছাতে। ট্রেনে বসে খেয়াল করলাম ট্রেনে একটা অংশ ফাঁকা।অফিস টাইমে দাঁড়ানোর জায়গা থাকেনা। এখন হাতে গুণা কয়েকজন মানুষ। সবাই মোবাইলে ব্যস্ত।
পরের স্টেশনে ট্রেন থামতেই একদল স্টুডেন্ট এসে উঠলো হয়ত স্কুল থেকে বাসায় যাচ্ছে। বয়স ১২-১৪ বছর হবে।এমন একদল স্টুডেন্ট ওঠার পর হইহোল্লুরে বিরক্ত হয়ে যাওয়ার কথা।ওরা সবাই যার যার মতো স্মার্ট ফোনে মুখ গুজে বসে আছে। আমার মনে পড়তে লাগলো ছোট বেলা স্কুল থেকে ফেরার স্মৃতি। আমরা তিন বান্ধবী সব সময় এক সাথে স্কুলে যেতাম।আমি, নিপা আর শেফালী। আমাদের বাড়ি স্কুল থেকে দশ মিনিটরে দুরত্বে। ওদের দুইজনের বাড়ি অনেক দূর। স্কুল থেকে আসলে প্রথমে আমাদের বাড়ি এরপর আমাদের বাড়ির সামনে থেকে একটা রাস্তা দুই দিকে চলে গেছে সেখান থেকে ওরা দুই জন দুইদিকে চলে যায়।তাই প্রতিদিন সকালে ওরা আমাদের বাড়িতে চলে আসতো। তারপর তিন জন একসাথে স্কুলে যেতাম। কিন্তু আসার সময় তিন জন একসাথে এসে আমি বাড়িতে না গিয়ে আগে আমাদের বাড়ির সামনে তিন রাস্তার মাথা গিয়ে তিন দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করতাম তারপর যখন সন্ধ্যা হবে হবে তখন তিন জন তিন দিকে দৌড়াতাম।আমাদের পাড়ার সবাই আমাদের তিন জন কে জানতো অনেকে জিজ্ঞেস করতো সারাদিন স্কুলে একসাথে থাকার পরও তোদের গল্প শেষ হয়না।এখন অবশ্যই আমিও ভাবি কি এতো গল্প করতাম আমরা।
লিখতে বসলে এই এক সমস্যা কোথা থেকে শুরু করে কোথায় চলে যায় বুঝতে পারিনা।যাইহোক আবার ট্রেন চলতে শুরু করেছে। এবার আমি জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। আকাশ ছোঁয়া বড় বড় বিল্ডিং গুলো যেন বিদুৎ গতিতে ছুটছে আমাদের সাথে। বিল্ডিং গুলো দেখে আমার এক কাকার(মালয়েশিয়াতে বড় বোন বা ভাবিকে কাকা বলে) কথা মনে পড়লো। উনার বাড়ি ইন্দোনেশিয়া। আমার আম্মার বয়সি হবে। আমাকে খুব আদর করতো। এখন দেশে ফিরে গেছে।ওনি মালয়েশিয়াতে আসে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে।
ইন্দোনেশিয়ার গ্রাম অঞ্চল থেকে আসায় কখনো এতো বড় বড় বিল্ডিং দেখেনি।দূর থেকে এসব বিল্ডিং এর জানালা,বারান্দা গুলো কবুতরের কুপের মতো দেখা যায়। তাই ওনি নাকি ভাবতেন এগুলো কবুতরের কুপ। ওনি নাকি মনে মনে বলতেন মালয়েশিয়ার মানুষ এতই বেশি কবুতর পালন করে যে এত বড় বড় কুপ বানাতে হয়। হঠাৎ একদিন দূরে দেখলেন এর ভিতর মানুষ। এর পর ওনি ওনার বসকে জিজ্ঞেস করলেন কবুতরের কুপে মানুষ ও ঢুকতে পারে। তখন ওনার বস ওনাকে বুঝিয়ে বললেন। ওনি আমার সাথে বাসায় এসে গল্পটা বলেছিলেন। কারণ আমরা ১৬ তলায় থাকিতো। আমি যখন এসব ভাবনায় বিভোর তখনি মেয়ের বাবার ভিডিও কল মেয়ে ঘুম থেকে ওঠে পড়েছে।
বাকী রাস্তাটুকু ওদের সাথে কথা বলতে বলতে পুচং পৌঁছালাম। এখন আর কোনো ভাবনা মাথায় আসছে না। কারণ তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাসায় পৌঁছাতে হবে। যদি আমার মেয়ে কাদেঁ।এরপর কাজ সেরে আবার ট্রেনে উঠে কখন বাসায় চলে এলাম বুঝতেই পালাম না।