হাসির ফেরিওয়ালা

in BDCommunity2 years ago

আমার মতে এ জীবনের একটাই উদ্দেশ্য ভালো থাকা। আর ভালো থাকতে হলে হাসির বিকল্প নেই।আবার হাসতে হলে অবশ্যই ভালো থাকতে হবে।ইচ্ছে করেতো আর হাসা যায় না।হাসির জন্য কারণ দরকার। হ্যাঁ অনেক কারণে মানুষ হাসে।যেমন কৌতুক,মজার কোনো গল্প কিংবা মজার কোনো দৃশ্য ইত্যাদি। সব হাসি আপনাকে ভালো একটা অনুভূতি দেবে যা অবশ্যই সাময়িক। কিন্তু আপনি যদি মনের সুখে হাসতে পারেন এটা আপনাকে ভালো রাখবে।তাই আমি মনেকরি ভালো থাকতে হলে হাসির বিকল্প নেই।

মানহা, আমার একমাত্র শিশু কন্যা,তার জন্মের একদিন পর আমরা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসি।বাসায় আসার পর থেকে হয় ঘুমাতো, নয় কোলে শুয়ে উপর দিকে তাকিয়ে থাকতো।আর কপাল টাকে এভাবে ভাঁজ করে রাখতো যেন খুব রেগে আছে। আমি ওর বাবাকে একদিন বললাম তোমার মেয়ে "এংসাইররেয়া" হয়ছে মানে অহংকারী হয়েছে।আমি ইচ্ছে করে আমার আঞ্চলিক ভাষায় বললাম যেন সে বুঝতে না পারে।সে বুঝতে না পেড়ে জিজ্ঞেস করলো এর মানে কি আমি যখন বললাম অহংকারী সে রাগ করলো।আমাকে বললো তুমি আমার তিন দিনের মেয়েকে অহংকারী বলো।আমি বলেছি দুষ্টুমি করে। কিন্তু ও বুঝতে চাইছেনা। ওর খুব মন খারাপ কেনো মেয়ে কপাল এমন করে রাখে।

মানাহার বয়স যখন এক সপ্তাহ ও ঘুম থেকে ওঠে বেবি কটে শুয়ে আছে আমি বসে ওর দিকে তাকিয়ে হাসি দেওয়ার সাথে ও হেসে দিলো আমি বুঝতে পারলাম না ও কি আমাকে দেখে হাসলো। এরপর আমি আরও কয়েক বার ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম না সে হাসেনা।পরের দিন আর একবার হাসলো। এভাবে দুই-একদিন যাওয়ার পা আমি ওর বাবাকে বললাম একটা ম্যাজিক দেখবা ও বলে কি দেখি। মানহা তখনো বেবি কটে শুয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম ও সাথে সাথে একটা হাসি দিলো। ওর বাবা তখন আবেগ আপ্লূত হয়ে গেলো।এভাবে আরও এক সপ্তাহ কেটে গেলো।এবার মানহা আমাকেও দেখে, বাবাকেও দেখে। দেখে বলতে দৃষ্টিটা অর্থবোধক মনে হয়। এতোদিন ও তাকিয়ে থাকতো কিন্তু দেখছে কিনা বুঝা যেতো না।যখন ওর বয়স দুই মাস হলো তখন ও পুরোপুরি হাসতে শিখে গেলো।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বললেই হাসে।ওর হাসির আবহে আমাদের ঘর থেকে মন খারাপ বিষয়টি একবারে বিলীন হয়েছে।আমরা মা বাবা আমাদের বিষয়টা বাদ দেওয়া যায়।

কিন্তু আমাদের পাশের ফ্লাটের একজন বাংলাদেশী থাকে দেশে ওনার বাবা খুব অসুস্থ। ওনার নাম রাসেল।রাতে মানহার বাবা বললো রাসেল ভাই মনে হয় বাসায় আসছে।যায় ওনার বাবার খবর নিয়ে আসি।ও আবার মানহাকে কোলে নিয়ে গেলো।রাসেল ভাইকে দেখে এমন একটা হাসি দিয়েছে রাসেল ভাই সব দুঃখ ভুলে ওর সাথে দুষ্টুমি শুরু করে দিলে। রাসেল ভাই বলে মানহার হাসি দেখলে সব দুঃখ উড়ে যায়।

জুলাই এর সাত তারিখ যখন ওর বয়স তিন মাস চৌদ্দ দিন, রাতের বেলা ওর বাবা ওকে কোলে নিয়ে হাঁটছে। আমি ওর সাথে কথা বলতেছি ও হাসছে কল কল শব্দ করে হাসছে। হাসির মাঝে মাঝে কেমন ঢেউ তোলে হাসছে। হ্যাঁ এর আগে ও যে হেসেছে কিন্তু হাসির শব্দ ছিলো না।ওর সে পাগল করা সমুদ্রের ঢেউ খেলা হাসি সেদিন আমাকে পৌঁছে দিয়েছিলো স্বর্গের ধারে,যে সুখের কোনো তুলনা কিংবা উপমা থাকে না।আজ মানহার বয়স পাঁচ মাস ছয় দিন এখন মানহা হাসির ফেরিওয়ালা ওর দিকে তাকালেই হাসে।

আমাদের এপার্টমেন্ট টা একুশ তলা বিশিষ্ট। আমরা থাকি ষোল তলায়।তাই প্রতিদিন লিফটে অপরিচিত অনেকের সাথে দেখা হয় সবাই সাময়িকের জন্য সব দুঃখ ভুলে একটু হেসে যায়।সিকোরিটি গার্ডেরা যখন দেখে আমরা বেরোচ্ছি কিংবা বাসায় আসছি ওরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে দাড়িয়ে থাকে ওর সাথে কথা বলবে তাই।

মানহা হেসে হেসে সবার মাঝে হাসি বিলায়। এখানে আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি যখন ও পেটেছিলো কোথাও গেলে সবার এটেনশন দেখে মনে হতো আমি ভিআইপি। আবার এখন বাচ্চা নিয়ে যেথায় যায় না কেনো, সব কিছুতে সবাই এমন আচারণ করে যেন আমি ভি আই পি। শুধু আমার জন্য না গর্ভবতী মহিলাদের আর বাচ্চার মা দের এখানে বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়।তার উপর মানহার মিষ্টি হাসি আমরাতো ডাবল ভিআইপি।

IMG_20220829_184603_589.jpg