ভয়ংকর সে রাত (শেষ পর্ব)

in BDCommunity9 months ago

হাসপাতালের ডাক্তারের সাথে এম্বুলেন্সের ডাক্তার ফোনে আলোচনা করছে। আমি বুঝে উঠতে পারছি না। ওরা এমন করছে কেনো?মানহার বাবার কি হয়েছে?
আমার ছোটভাই মেডিকেলে পড়ছে। আমি আবার তাকে একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এম্বুলেন্সে ওর একটা এসএমএস আসে।ছোট এ-তো সিরিয়াস অবস্থা। কই আছো?আমি বুঝতে পারলাম রিপোর্ট দেখে ডাক্তাররা ভয় পেয়ে গেছে।
এর মধ্যে ওর দাঁত দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে।ডেঙ্গু হয়ে প্লাটিলেট নেমে গেছে নাকি ষোল হাজারে।হাসপাতালে পৌঁছানোর সাথে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে। আমার সাথে বাচ্চা তাই বেশি সময় থাকতে দেয় না।জরুরি বিভাগের চিকিৎসা শেষে ওর্য়াডে নিয়ে যাবে।তার আগে টাকা জমা দিতে হবে।দুই হাজার রিঙ্গিত।

আমি এতো টাকা নিয়ে যায়নি।তাই আবার মেয়েকে নিয়ে বাসার উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম। বাসা থেকে টাকা নিয়ে জমা দিলাম। তখন চারটে বাজে।ওকে ওর্য়াডে নিয়ে গেছে চার তলায়।জরুরি বিভাগের ডাক্তার আমাকে ওয়ার্ডে যেতে বলেছে।ওর মোবাইল থাকলেও চার্জার আমার কাছে। মোবাইলে চার্জ ছিলো না। চার্জারও দিতে হবে।

চার তলায় যাওয়ার জন্য লিফটের কাছে যাওয়ার সাথে এখানকার পুলিশ সদস্য আমাকে বাধা দিলো।নয় বছরের নিচের বাচ্চা নিয়ে ওর্য়াডে যাওয়া যাবে না।কি করবো।ঐদিকে আমার মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে চার্জ নেই। আমার চার্জার নিয়ে আসিনি।ইনফরমেশন রুম থেকে মানহার বাবাকে ফোন দিয়ে বললাম আমি আসতে পারতেছি না। ও বলে ঠিক আছে চলে যাও।
কিন্তু আমি ওর সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবো রাতে ফোন বন্ধ হয়ে গেলে তাই যাচ্ছি না।বিশাল ওয়েটিং রুম শতশত মানুষ।কালো বোরকা পড়া একজন বসে মোবাইলে চার্জ দিচ্ছে। ওনার পাশে গিয়ে বসলাম। আমি ওনাকে আমার সমস্যাটা বললাম।ওনি বলে আচ্ছা তোমার বাচ্চা আমার কাছে রেখে গিয়ে চার্জার দিয়ে আস।মানহা অপরিচিত একজনের কাছে যাবে না।আর আমারও সাহস নেই অপরিচিত একজনের কাছে মেয়েকে রেখে যাবো।তাও মানহাকে জিজ্ঞেস করলাম থাকবে কিনা।মানহা শুনেই কান্না জুড়ে দিলো।
আমি চুপচাপ বসে আছি। কি করবো জানি না।কিছুক্ষণ পর কালো বোরকা পড়া আপু বললেন, চার্জার দিতে ওনি দিয়ে আসবেন। আমি তাড়াতাড়ি বের করে দিলাম। ওর্য়াড নম্বার, সীট নাম্বার বলে দিলাম। ওনি চার্জার দিয়ে আসার পর আমি ওনার ফোন দিয়ে মানহার বাবাকে বললাম আমরা চলে যাচ্ছি। ও আমাকে যেতে বললো।
যাবো তাতেও সমস্যা আমার মোবাইল বন্ধ তাই গ্র্যাব (গাড়ি) ডাকতে পারতেছি না।ঐ মালয়েশিয়ান আপু তখন গ্র্যাব ডেকে দিলো।আমরা বাসায় চলে আসলাম।
মানহাকে গোসল করিয়ে অল্প খাবার খাওয়াইয়া আটটার দিকে ফোন দিলাম। ও ফোন ধরলো।কথা বলতে বলতে হঠাৎ বলতেছে আমার খারাপ লাগছে আর কথা বলতে পারবো না।বলে রেখে দিলো। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।আমি ভাবলাম আচ্ছা পরে ফোন দিবো। এই ফাঁকে মানহাকে ঘুম পারিয়ে নিলাম।
এগারোটার দিকে ফোন দিলাম ধরে না।ভাবলাম হয়তো ডাক্তার এসেছে। অপেক্ষা করতে লাগলাম। বারোটায় ফোন দিলাম। ধরে না।এবার দুঃশ্চিন্তা হতে লাগলো।আরও পাঁচ-সাতবার ফোন দিলাম ধরে না।কি করবো এতো রাতে। কখনো একা একা কান্না করি কখনো দোয়া করি।জন্মের পর যত রাত কাটিয়েছি সব এক করলে যত বড় সে রাত যেনো তার চেয়েও বড়।কিছুতেই শেষ হচ্ছিল না।
ভোর পাঁচটায় মাথায় আসলো গুগলে হাসতালের নাম্বার থাকবে।সার্চ করার সাথে সাথে ওয়ার্ডের নাম্বারও পেয়ে গেলাম। সময় তখন কত বিবেচনা করার অবস্থায় আমি নেই। তখনই ফোন দিলাম। ফোন ধরলো একজন মহিলা। আমি বললাম ১৮ নাম্বারে রোগী ফোন ধরেনি সারারাত আমার খুব চিন্তা হচ্ছে তাই ফোন দিলাম। ওনি আমাকে বুঝিয়ে বললেন কোন সমস্যা হয়নি আমি আটটায় ওর্য়াডে যাবো তখন ওকে ফোন দিতে বলবো।একটু সান্ত্বনা ফেলেও দুশ্চিন্তা কমেনি।সময় যাচ্ছে না।
সকাল সাতটায় একটা ফোন আসলো টিনএনটি নাম্বার। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তাড়হুড়ো করে ধরলাম। ঐপাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো এটা মহিদুল্লাহর নাম্বার। আমি বললাম হ্যাঁ আমি ওর স্ত্রী। বলে ডেঙ্গু হয়েছে তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ফোন করেছে। নিশ্চিত হলাম হাসপাতাল থেকে না।
অবশেষে সকাল সাড়ে আটটায় ফোন বেজে ওঠলো দেখি মানহার বাবা। আমি ফোন ধরে কান্না শুরু করে দিলাম। ঐপাশ থেকে মানহার বাবা বললো আমি ঠিক আছি। কান্না করছো কেনো?রাতে নাকি পাঁচ বার হাত থেকে রক্ত নিয়েছে।এক হাতে স্যালাইন,অন্য হাতে রক্ত নেওয়ার কেনুরা, সারারাত একজন ডাক্তার গেছে আরেকজন আসছে, আবার শারিরীক অবস্থাও ভালো না তাই ফোন আর দেখেনি।অবশেষে আমার দুশ্চিন্তার অবসান ঘটল।

IMG-20240526-WA0008.jpg

Sort:  

Congratulations @setararubi! You received a personal badge!

Happy Hive Birthday! You are on the Hive blockchain for 2 years!

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking

Check out our last posts:

Hive Power Up Day - June 1st 2024