করোনাবাংলাদেশ একটি অমিমাংশিত উপন্যাস (CoronaBangladesh is an unresolved novel)

in BDCommunity4 years ago

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “খাল কেটে, কুমির আনা” যার সারমর্ম নিজের থেকেই বিপদকে আমত্রন জানানো। আমি যদি এই প্রবাদ বাক্যের কিছু সংযোজন ঘটাই তাহলে আশা করি কোন বাঙ্গালী বাংলার বহূল প্রচারিত প্রবাদ বাক্য পরিবর্তনের জন্য বাংলার আদালতে বাংলা ভাষা বিরোধী মামলা করবে না। যদিও করেও দেয়, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আমি এই প্রবাদ বাক্যে খুবই অল্প কিছু কথা সংযোজন করে সমগ্র বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরতে যাচ্ছি।

ক্ষুদার্ত চুনোপুটির আহার যোগাতে, খাল কেটে কুমির আনা”। আপনার নিশ্চয়ই হাসি পাচ্ছে, এটা আবার কেমন প্রবাদ বাক্য! যার আগা আছে মাথা নেই। আপনি এটাকে প্রবাদ বাক্য ভাবেন বা অন্য কিছু যাই ভাবেন না কেন, তাতে আমার কোন প্রকার মাথা ব্যাথা নাই। বর্তমান বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি বর্ণনাকল্পে আমি এর চেয়ে উপযুক্ত বাক্য আর খুজে পাই নাই।


8712903_hungry people.jpg
img src

প্রবাদ বাক্যটির ভাব সম্প্রসারনে আসা যাক। আজকে আমার একটা গান খুব বেশী মনে পড়ছে, গানটা খুব জনপ্রিয় “ও আমি ফাইস্সা গেছি, ফাইস্সা গেছি, মাইনকা চিপায়”। আসলেও সত্যি, বড়ই সত্যি গানের কথাগুলো। প্রেমে ছ্যাকা খেলে যেমন দেবদাসরা প্রাণখুলে বেদনার গান গায়, আমার ঠিক আজকে মনখুলে, চিৎকার করে গাইতে ইচ্ছে করছে, “ও আমি ফাইস্সা গেছি, ফাইস্সা গেছি, মাইনকা চিপায়”। শুধু আমি না কোটি কোটি বাঙ্গালীর প্রাণের গান আজকে এইটাই। আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন কোটি কোটি কন্ঠে এই গানের গুনগুনানি, আমি খুব ভালো করেই শুনতে পাচ্ছি এবং নিজেও গুন গুন করে গাইতেছি আর এই ব্লগটি লিখছি।

বাংলাদেশ নামে ছোট্ট একটি খালে আনুমানিক ১৯ মলাঠেলা,পুঁটি, শিং, মাগুর, রুই, কাতলা, বোয়াল মাছেদের বসবাস। বাংলা খালের চারপাশে অনেক বড় বড় খাল অবস্থিত। সেই সব খালে মলা ঠেলা, পুঁটি, শিং, মাগুর, রুই, কাতলা, বোয়াল ছাড়াও, কুমিড় এবং করোনার মতো অদৃশ্য মাছের বসবাস। খালের অদৃশ্য ছিদ্র দিয়ে করোনা নামক বিশাক্ত মাছটি কোন না কোন ভাবে বাংলাদেশ খালে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশ খালের সবস্তরের মৎসদের দংশন করা শুরু এবং বাংলাদেশ খালের মাছ অকাতরে মৃত্যু বরন করা শুরু করে। তাই বাংলাদেশ খালের নেতা মাছেরা করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে সবমাছদের তাদের নিজেদের গর্তে প্রবেশ করতে আদেশ দেয় এবং প্রতিশ্রুতি দেয় নেতারা সব মাছের গর্তে তাদের দৈনদিন আহার পৌছাই দেবে। কিন্তু নেতারা ব্যর্থ হলে সাধারন মাছদেরকে উল্টা পাল্টা সীদ্ধান্ত প্রদান করা শুরু করে। ক্ষুদার্ত মাছেরা বাধ্য হয়ে দলে দলে গর্তের বাহিরে বেরীয়ে আসতে শুরু করে এবং তারা এটা চিন্তুা করিতেছে যে নেতারা এখন উপায় না দেখে খাল কেটে পাশের খাল থেকে কুমিড়দের আমত্রন যানাচ্ছে।


coronarelife205993.jpg
img src

কাল্পনিকতা থেকে বাস্তবে আসা যাক। আপনি আমি হয়তো সকলেই চিন্তুা করিতেছি, বাংলাদেশ সরকার কেন এমন প্রকার উদ্ভট সীদ্ধান্ত বারবার নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেন তারা বার বার বাংলাদেশের মানুষের জীবন ঝুকি থেকে ঝুকিতর করে তুলছেন। কেন তারা রাষ্ট্রেকে মরাহারীর দ্বারপ্রান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমারো জানা নাই। কারন আমি বাংলাদেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে চাকুরীরত নই। আমিও আপনাদের মতো একজন সাধারন জনতা। তবে আমি বর্তমান বাস্তবতাকে খুব কাছে থেকে পরিলক্ষিত করছি, জানি না এটা আমার সুভাগ্য না দূঃর্ভাগ্য।

আসুন একটু অতীত বিশ্লেষন করি, সঠিক সময়ে লকডাইনের সীদ্ধান্ত, খুবই প্রশংসনীয় এবং সাহসী পদক্ষেপ বাংলাদেশ সরকারের। পরিকল্পিত অথবা অপরিকল্পিত যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ সরকারের এই পদক্ষেপ হয়তোবা পারত লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীর কোরানার মৃত্যু ছোবল থেকে রক্ষা করতে। প্রথম ভূল সীদ্ধান্ত সকল প্রকার পোশাকশিল্পের কার্যক্রম আরম্ভ করার, এতে করে লক্ষ লক্ষ পোশাক শ্রমিক যারা নিজেদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেতেছিল তারা পুনরায় রাজধানী মূখী হয়। এই বিষয়টিও সরকারের পরিকল্পিত ছিল, কিন্তু বিষয়টি হীতের বিপরীতে চলে যায়। পুনারায় সরকার পোশাক কারখানা গুলো বন্ধ ঘোষনা করে, পোশাকশ্রমিকদের ঢাকা বন্দি করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন, এবং এখানেই করোনার ঝুঁকি সর্বাধিকভাবে বেড়ে যায়।

খুবই লজ্জাজনক হলেও একটি বিষয় চরম সত্যি বাংলাদেশ গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আবিষ্কৃত করোনা ভাইরাস সনাক্তকারী কীটকে অস্বীকৃতি প্রদান আমাদের দেশ পরিচালনাকারীদের যুগান্তকারী ভূল সীদ্ধান্ত। এর পরিনাম আজও আমাদের ক্ষনে ক্ষনে সঙ্কিত করে তুলছে। আমারা এখন অবধি একদিনে মাত্র ১৫০০০ নমূনা পরীক্ষা করার সামর্থ রাখছি না। তাই দেশের সর্বমোট আক্রন্তের সংখ্যাটা আমাদের কাছে আলো ছায়ার মতো গোলকধাঁধা হয়ে আছে। আমরা নিজেদের থেকে কোন প্রকার সীদ্ধান্ত গ্রহনে ব্যর্থ হচ্ছি। দেশে পরিচালনাকারীদের সীদ্ধান্ত মোতাবেকেই আমাদের জীবনকে এক অদৃশ্য নর খাদকের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত করে দিয়েছি। বেঁচে থাকব না মরে যাব ভবিষৎ বানী করার মতো ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। গনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আবিষ্কৃত কীট হতে পারতো আমাদের করোনা থেকে উত্তরনের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।


_111703106_8d9a418723c8483f9e5538d3fe834777.jpg
img src

বাংলাদেশ সরকারের ত্রান বন্ঠন এক যুগান্তকারী ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। আপনি কি কখনো কোন শকুনের জীবনি পড়ছেন। হয়তোবা না, কারন শুকনের জীবনি আবার কে লিখবে। আমি লিখছি সংক্ষেপে পড়ে নেন, পৃথিবীতে শকুন এমন একটি প্রাণী, যে প্রাণী অন্য প্রাণীর ‍মৃত্যুতে আনন্দিত হয়। মহামারী, দূর্ভিক্ষ শুননদের খুবই একটি প্রিয় সময়। কারণ মহামারী যতই তীব্র হয় শুকুনের খাবারের পরিমান ততই বৃদ্ধি পায়, দূর্ভিক্ষ যতই প্রকট হয়, শুকনদের বিজয় উল্লাস ততই বৃদ্ধি পায়। কারন চারদিকে শুধু খাবার আর খাবার, অনাহারে থাকার কোন উপায় নেই। দূর আকাশে পাখনা মেলে তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে ভূমিতে শিকার খোঁজার ও কোন দরকার নেই। তাই বলে পাখনা মেলে আকাশে উড়বে না তা কি হয়, উড়বে শুকনেরা উড়বে, পরম আনন্দে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে তারা উড়বে মহামারী এবং দূর্ভিক্ষের প্রাককালে

কেমন লাগল আমার সংক্ষিপ্ত শুকুরের জীবনি। কিছুটা গোলমেলে তাই না, গুগলি ছুটিয়ে দিচ্ছি, ঐ যে আমি বললাম, বাংলাদেশ সরকারের ত্রান বন্ঠন এক যুগান্তকারী ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে, সেই ইতিহাসেই আপনার গোলমেলে ভাব কাটাবে। লকডাউন সময়ে ত্রান বিতরন বাংলাদেশকে কিছু অতিমানব উপহার দিয়েছে। আমি কি ভুল বললাম, ক্ষমা করবেন দয়া করে, অতিমানব কেন বললাম জানেন, যারা মানবতাকে ছাপিয়ে কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখে তারাইতো অতিমানব। অনাহারির মূখ থেকে যারা খাবার ঝিনিয়ে নিয়ে, অর্থ উর্পাজনের প্রয়াস করে তারা অতিমানব ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আপনি পারবেন, না আমি পারব, কেউ পারবে না। তারা অতিমানব বলেই পেরেছে। তাইতো তারা বাংলার বুকে সর্নাক্ষরে রচিত করতে পেরেছে, শুকুনি মামার আত্মকাহিনী না শুকুনি সত্ত্বার জীবন্ত ইতিহাস। বাংলার প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে থাকুক, সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার এটাই চাওয়া, যদিও বা বাংলার বদনাম হবে, হয় হবে এতে আমার আপনার কিছু যায় আসে না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এটা জানান দেয়া উচিত যে “বাংলায় কত বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের জন্ম হয়েছিল” এবং তারাই বাংলার বুকে বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে গিয়েছে। আর কোন প্রজন্মে যেন এমন সত্ত্বার জন্ম না নেয়।


https___s3apnortheast1.amazonaws.com_pshexftnikkei3937bb4_images_2_5_2_4_254242523engGB_Cropped158368891220200308N Bangladesh Dhaka.jpg
img src

বড়ই অসহায়, ক্ষুদার্ত এবং নিপিড়ীত মানুষেরা যখন ক্ষুদার জ্বালায় অসহনীয় হয়ে পড়ছে, কি হৃদয়বিদারক সেই দৃশ্য দেখার মতো যখন নিজেদের পাড়া প্রতিবেশিরাই নেই, কেমনে থাকবে বলুন সবাইতো লকডাউন, ঘড়েই বাহির হলেই মৃত্যু থাবা দিয়ে বসবে। আমাদের ঘড়ের জ্বানালগুলোও বন্ধ, আমারা ক্ষুদার্তদের আর্ত্মনাদগুলোও শুনতে পারছি না। কিন্তু যারা দেশে পরিচালনা করছেন তাদের গুপ্তচরের অভাব নাই রে ভাই। তারা ক্ষুদার্তদের সেই আর্ত্মনাদ উপর মহলে ঠিকই পাঠাই দিচ্ছেন। দ্বিধান্বিত উপর মহল, কি করবো, কি করবো, এ যে বড়ই কঠিন প্রশ্ন, এবং এই প্রশ্নের মাত্র দুইটি উত্তরেই আছে তাদের কাছে। এক হয় করোনায় মৃত্যু, দুই হয় অনাহারে মৃত্যু। ইশ! শেষের দুইটি শব্দ একদম মিলে যায়। “মৃত্যু এবং মৃত্যু”। আলোচনা ও গবেষনা চলছে অনবরত, বড়ই ক্ষুদ্র একটা সরল অংক, কিন্তু এর সমাধান খুঁজে পাওয়াটা খুবই কঠিন। যাক বাবা বাঁচা গেল প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে। সরল অংকটির উত্তর সবাই জেনে গেছে। উত্তরটা কি আপনি জানতে পেরেছেন, না পারলে আমি বলে দিচ্ছি, সরল অংকটির উত্তর মৃত্যু। হোক সেটা প্রথম মৃত্যু অথবা হোক সেটা শেষের মৃত্যু। কোনটা বেঁছে নেবেন আপনি এটা আপনার সীদ্ধান্ত।

দেশের উপর মহলের ব্যক্তিরা আপনার জন্য দুটারি পথ উন্মোচন করে দিয়েছে। আপনার যদি অঢেল পরিমান সঞ্চিত অর্থ থাকে আপনি এই সরল অংকের উত্তর পরিবর্তন করতে পারবেন। ধরে নেন এটাও আপনার কাছে একটা অতিমানবিয় কর্ম। তবে এই অতিমানবীয় কর্ম আপনি বর্তমান পরিস্থিতির আগেই করে ফেলেছেন। তাই আমি আপনার সম্পর্কে জ্ঞাত না হয়েই, আপনার জন্য সাবাসী দিচ্ছি।

রাষ্ট্রপরিচালকদের দীর্ঘ গবেষণার ফলাফলা উন্মোচন না করলে কি আর উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটবে। আসুন আমারা যারা মধ্যবিত্ত্ব, দিনমুজুর, দরিদ্র, ভিক্ষারী, তারা সজোরে করতালি দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রপরিচালকদের দীর্ঘ গবেষনার ফলাফল উন্মোচন করি। ফলাফল “ অনাহারে একটি মধ্যবিত্ত্ব, দিনমজুর, দরিদ্র এবং ভিক্ষারীর পরিবারের সকলে মারা যেতে পারে, কিন্তু করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক নিয়ে অর্থ উপার্জনে একটি পরিবারের হয়তোবা একজন মারা যেতে পারে এবং না মারা যাবার সম্ভাবনাটাই বেশি, কারণ এ যাবৎ কাল পর্যন্ত আমরা আপনাদের করোনা ভাইরাসের যে আপডেট দিয়ে আসছি তাতে মৃত্যুর হার অতি নগন্য”।

তাই দেশের মধ্যবিত্ত্ব, দিনমজুর, দরিদ্র এবং ভিক্ষারীর পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা উপার্জনের তাগিদে আপনারা মৃত্যুভয়কে জয় করে ঝাপিয়ে পড়ুন, আগামীকালকে থেকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আপাদের জন্য গনপরিবহনের চাক্কা আবার ঘুড়িয়ে দিলাম।

Thanks a very lot for reading my blog.

Sort:  

This post earned a total payout of 2.358$ and 1.179$ worth of author reward that was liquified using @likwid.
Learn more.