বাঙ্গালির সূত্রপাত

in BDCommunity2 years ago

জাতির পরিচয়ের অনেক মাপ কাঠি আছে। মানুষের বিশেষ কইরা কথার স্টাইল যাকে ভালো বাংলায় বাকচিত কওয়া যাইতে পারে, নাচাগানা, ভুড়িভোজের আইটেম ও কারণ তথা সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক ফায়দা নিতে যে ইতিহাস দরকার হয় শাসকের। এগুলা আর ম্যালা ম্যালা ক্রাইটেরিয়ার উপরে দাঁড়ায়ে আছে জাতির পরিচয়। মজার আর কস্টের ব্যাপার হইলো সংখ্যায় বেশি এরাম জাতি সংখ্যায় ছোট জাতিগুলারে একপ্রকার অজাত, উপজাত, ছোট জাত বানাইতে বেশ আরাম পায়। যেমনটা একপাল মানুষ কইরা থাকে বিশ্বাসের বেলায়। এলাকা ধইরা কামড়াকামড়ি এই বাঙ্গু ল্যান্ডে খুব সেন্সের ব্যাপার। নোয়াখাইল্লা, বরিশাইল্লা, চাটগাইয়া, ভইঙ্গা, সিলেডি,গোপালি আর আছে গিয়ে চাইনিজ। চাটগাঁইয়াদের টেরিটরিতে অন্য এলাকার মানুষ সব ভইঙ্গা। এদিকে বাঙ্গালীর কাছে পাহাড়ি মানেই চাইনিজ, উপজাত। উপজাতি-আদিবাসী ক্যাচাল বাংলাদেশে "তোরা বাঙ্গালী হইয়া যা" থেকে চলতেই আছে। দেশ-জাতির প্রতি প্রেমের ভাণ্ডার আমরা খুলে দিছি পাহাড়ে গিয়ে।

যাইহোক, এদিক ওদিন ঘোরাফেরা না কইরা হক সাহেবে আসি। কবি সৈয়দ শামসুল হক তার "আমার পরিচয়" কবিতায় বাঙ্গারিরে পরিচয় করাইতে গিয়ে ঐতিহাসিক চরিত্র ধার করছেন। আমি মূলত তার ধার করা বিষয়টারে একটু বড় কইরা বলতে চাইতেছি, জানাইতে চাইতেছি সে মানুষগুলারে নিয়ে যারা বাঙ্গালীর আইডেন্টিটি হইয়া দাড়াইছে হক সাহেবের কাছে। হক সাহেবের জাতিপ্রেমের আইডিয়া দিয়ে বিডি কমিউনিটিতে পহেলা পোস্ট।

সাত নাম্বার পঙক্তি দিয়া শুরু করি, কবি কইতেছেন,
"আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে"

মনসামঙ্গল কাব্যের চাঁদ সওদাগরই হল আমার পরিচয় কবিতার সওদাগর। চম্পক নগরে সওদাগরের বাস। সেখানেই বড় ব্যবসা চাঁদের। শিবের ভক্ত বা পূজারি চাঁদ সওদাগর, শিবের প্রতি তার ভক্তি শ্রদ্ধা ব্যাপক। তার এই ভক্তি শ্রদ্ধা আর পয়সাপাতি থাকার জন্যেই দেবী মনসার নজর পরে সওদাগরের দিকে। দেবী হিসাব কইরা দেখেন যে এমন পয়সাওয়ালা ব্যাক্তি যদি তারও পূজা করে তাহলে লোকসমাজে তার সহজেই পরিচিতি ঘটে এবং পূজা পাওয়াটা বাড়ে। কাজেই দেবী তার পূজা কামনা করে বসেন। কিন্তু সওদাগর তো সাঁচ্চা বাঙ্গালী। যাকে খোদা বলে একবার স্বীকার করেছি তো করেছি। তার যাগায় অন্য কাউকেই খোদা মানা সম্ভব না।

দেবী মনসা ছবিঃ সংকর

যেখানে মানুষ দেব দেবী পুঁজে কুল পায়না, সেখানে হয়েছে উল্টো, স্বয়ং দেবী মনসা চাঁদের পূজা কামনায় এক প্রকার অস্থির হয়ে আছে। দেবী বলে কথা, মানুষের কাছে একপ্রকার প্রার্থনা যখন চেয়েই বসেছে, এই অবস্থায় যদি কেউ তার ডাকে সারা না দেয়, তবে যা হওয়ার তার কোন ব্যাতিক্রম হয়নাই চাঁদ সওদাগরের কপালে। একে একে দেবী তার রাগের বিষে সওদাগরের ৬ ছেলেকে হত্যা করেন সাপের কামড়ে। এতোবড় শোকেও চাঁদের শিব প্রেম কমেনাই। অনেক অনেক দিন বাদে শোক কাটাইয়া নাবিকদের সাথে কইরা তার বিশাল জাহাজ চইড়া বের হয় ব্যবসা করতে। চাঁদের মনে সুখ, জাহাজ ভর্তি লাভের পয়সা আর সোনা দানা। কিন্তু দেবী মনসা যে রাগ কইরা আছে সওদাগরের উপর। ফেরার পথে প্রচণ্ড ঝড় তুলে সওদাগরের জাহাজ,পয়সাকড়ি আর নাবিক সব ডুবায় দেন। নাবিকেরা ডুবে মরলেও চাঁদ সওদাগর বাইচা থাকেন সংগত কারনেই। ঠিক এইখানে মজার একটা ঘটনা ঘটে। দেব দেবীর পলিটিক্স আর স্বজনপ্রীতির বিষয় পরিস্কার হয়। পরিস্কার হয় শিবের যে তার ভক্তের বাচা মরায় কোন যায় আসেনা, দেবী দুর্গার মার্তৃস্নেহ আর মনসার জেদ। কালিদাস সাগরে ঢুবে মরার সময়ে দেবী দূর্গা তার বাঙ্গালী মায়ের চরিত্র না ভুইলা চইলা আসে সওদাগরকে রক্ষা করতে, কিন্তু বাঙ্গালীর স্বামীপ্রিতি অর্থাৎ শিবের আদেশ সে অমান্য করতে পারে নাই শেষমেশ। কারণ দূর্গার উপস্থিতি টের পাইয়া মনসা শিবের কাছে আর্জি জানায় যে সওয়াগরকে দূর্গা যেন রক্ষা না করে। পরে সওয়াদরগে ভাসায়ে মনসা সমুদ্রের তীরে চন্দ্রকেতুর কাছে গিয়ে ফেলেন।

চন্দ্রকেতু অনেক চেষ্টা করেও শিবের পূজা বাদ দেওয়াইয়া সওদাগরকে দিয়ে মনসা পূজা করাতে পারেনাই। তাতে শেষমেস ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নামতে হয় চাঁদ সওদাগরের। পথের ফকির বানাবার পরেও দেবী মনসার খায়েশ মিটেনি। এরপরে অনেক কস্টে চম্পক নগরে ফেরত আসে সওদাগর। ধিরে ধিরে আবার গুছিয়ে তোলে সংসার। ছয় সন্তানহারা সওদাগর লখিন্দর নামে আরেক সন্তান জন্ম দেয়।

এর পরের কাহিনী আমাদের সকলেরই জানা। "বেহুলার বাসরঘর" যা যুগের পর যুগ বাংলায় রোমাঞ্চকর লোককাহিনী হিসাবে খুবই জনপ্রিয়। "বেহুলার স্বামী সহ চাঁদ সওদাগরের ৭ সন্তানকে সর্পাঘাতে প্রাণনাশ, সাগদে বানিজ্যতরী ঢুবিয়ে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা" এসব কিছুই দেবী করেছেন চাঁদ সদাগরের মতো ধনী ও প্রভাবশালী বণিক যদি মনসার পূজা করে তাহলে মনসার পূজা বৃহত্তর জনসমাজে প্রচার লাভ করবে এই আশাতেই। পরবর্তীতে বেহুলার অনুরোধে এবং নিজের সন্তানদের ফিরে পাওয়ার সুযোগে চাঁদ সওদাগর দেবীর পূজা আরম্ভ করেন।

Sort:  

চমৎকার কনসেপ্ট। তবে সুখপাঠ্য হবে যদি ভাষা চণ্ডাল দোষ না আনেন।

Congratulations @shangkar! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)

You got more than 10 replies.
Your next target is to reach 50 replies.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Check out our last posts:

Our Hive Power Delegations to the December PUM Winners
Feedback from the January Hive Power Up Day
Hive Power Up Month Challenge 2022-12 - Winners List
The Hive Gamification Proposal Renewal
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!