
মাওলানা সাহেবের চার মেয়ে দুই ছেলে।দুই ছেলে আলী এবং ছাদিক।প্রথম দুই মেয়ের পর আলীর জন্ম।আমরা যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের লোক,ছেলে সন্তান মানে এখানে আকাঙ্খার ধন।আর সে যদি হয় দুই মেয়ের জন্মের পর সেতো আসমানের চাঁদই বটে।আলীর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না।বাবা-মা,দাদা-দাদি আর দুইবোনের আদরের দুলাল।
আলী সহজ সরল সাদা মনের মানুষ।তবে বাংলায় একটা কথা আছে না,আদরে বাদর হওয়া।আলীর ক্ষেত্রেও অনেকটা এমন হয়েছে।বেশি আদরে একটু বাদর হয়ে গেছে।পড়ালেখাটাও হয়ে ওঠে নি তার।দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলো।আলীর পর জন্ম হয় ছাদিকের,তারপর আরও দুই মেয়ে।
ছাদিক চতুর প্রকৃতির লোক।পড়ালেখায়ও ভালো।মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন।আর এইদিকে আলী পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে।কোন কাজও করে না।বাবা মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চা সিগারেট খেয়ে নষ্ট করে।মাওলানা সাহেবের সচ্ছল সংসার,অভাব অনটন নেই,তিন মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন।ছোট মেয়ে,আলী,মাওলানা সাহেব আর তার স্ত্রী বাড়িতে থাকেন।আর ছাদিক বোর্ডিং এ থেকে মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন।মাওলানা সাহেব আলীকে খুব ভালোবাসেন।বিয়ে করানোর জন্য একজন ভালো মেয়ে খুঁজতেছেন।ওনি বলতেন,আমার ছেলেটার দায়িত্ববোধ কম,তাই একটা ভালো বউ দরকার যে তাকে ভালোভাবে চালাতে পারবে।
বাড়ি থেকে এক দেড় মাইল দূরে একজন ভালো মেয়ের খুঁজ পেলেন।খোঁজ নিয়ে দেখলেন মেয়েটা খুব ভালো তাই আর দেরী না করে বিয়ে দিয়ে দিলেন।ভালোই চলছিল দিন।বছর না ঘুরতেই আলীর মেয়ে হলো।মাওলানা সাহেবের ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলেন।আগেই বলেছি ছাদেক চতুর প্রকৃতির লোক,আর আলী সহজ সরল সাদা মনের মানুষ।অলস,দায়িত্ববোধ কম এগুলো আলীর দোষ,কিন্তু মানুষ হিসাবে তিনি খুবি ভালো।ছাদিক আলীকে ভাইসাব বলে ডাকে।
মাওলানা সাহেবের বার্ধক্য জনিত অসুস্থতা দেখা দিলো।একদিন ছাদিক মাওলানা সাহেব কে গিয়ে বললো,"আব্বা,দেখেন আপনার বড় ছেলে,কাজকর্ম করে না,আর উল্টাপাল্টা রাস্তায় টাকা খরচ করে ফেলে,আপনি মারা যাবার পর দেখবেন,আপনার সব সম্পত্তি বিক্রি করে নষ্ট করে ফেলেছে,এর চেয়ে ভালো হবে,আপনি সব কিছু আম্মার নামে লিখে দিয়ে যান,তাহলে ভাইসাব আর এসব বিক্রি করতে পারবে না,কিন্তু তার জমির ভাগ তার থাকবে,চাষাবাদ করে খাবে।"
মাওলানা সাহেব রাজি হলেন না,বললেন,"ওর প্রাপ্য যা তা ও পাবে,আর পাওয়ার পর কি করবে তা দেখা আমার বিষয় না,আমি তাকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে যাবো,তা মানলে মানলে হয়তো সম্পত্তি নষ্ট করবে না,কিন্তু মৃত্যুর আগে আমি জমির দলিলে কলম ধরবো না"
এসব শুনে ছাদিক রাগ করলো,নিজের মাকে দিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করলো,কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না।
আসলে এসব করার কারণ হচ্ছে, ছাদিক এর ইচ্ছে ছিলো,জমিগুলো তার দখলে চলে যাক,কারণ তাদের মা মানে মাওলানা সাহেবের স্ত্রী ছিলো ছাদিক এর পক্ষে।ছাদিককে সে তার বড়ছেলের অপেক্ষা বেশি পছন্দ করতো।বড়ছেলে অলস বলে, ভাবতো ছোট ছেলেই একদিন এই সংসারের মুখ উজ্জ্বল করবে।কিন্তু সংসারের মুখ উজ্জ্বল করার প্রথম ধাপটাই যে শুরু হবে নিজের আপন ভাইকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তা মাওলানা সাহেবের স্ত্রী জানতো কি না কে বলতে পারে!
প্রথম ধাপে ব্যর্থ হলেও ছাদিক থেমে থাকেনি।মাওলানা সাহেরের মৃত্যুর পর নিশ্চয়ই সবকিছু দুইভাগ হয়ে একটা ভাগ বড়ভাই আলী পেয়ে যাবে,এইভয়ে বাড়িতে থাকা সব বড়বড়গাছ সে বিক্রি করে দেয় মাওলানা সাহেবের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার অজুহাতে।তার হাতেই সংসারের অর্থ থাকায় টাকাগুলো সে নিজের করে নেয়।
ভাইকে ঠকিয়ে সবকিছু নিজে দখল করার প্রথম প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছাদিকের লোভের যাত্রা শুরু হলো,এই লোভ তাকে কোন পর্যন্ত নিয়ে গেলো তা থাকবে পরবর্তী পর্বে....
আদরে বাঁদর হওয়া 😂
আদরে বাঁদর শুনে হাসলেন যে বড়,আপনিও কি আদরে.......😉
একটা নির্দিষ্ট সময়ে আদরের বাদর থাকতে হয়।