মানুষ সামাজিক জীব।প্রত্যেকটা সমাজ গড়ে ওঠে কিছু রীতিনীতি আচার অনুষ্ঠান আর সংস্কৃতি নিয়ে।এসব রীতিনীতি আচার অনুষ্ঠান সমাজ ভেদে যেমন ভিন্ন তেমনি ধর্ম ভেদে ভিন্ন।এসব রীতিনীতি যেমন সমাজকে সহজ সরল পথে চলতে সাহায্য করে তেমনি আচার অনুষ্ঠান মানুষের জীবনকে করে তুলে প্রাণবন্ত।এসব আচার অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে মানুষ আয়োজন করে বিভিন্ন ধরনের উৎসবের,আর গ্রাম গঞ্জে এসব উৎসব সারাবছর লেগেই থাকে।তা যেমন হতে পারে ধর্মীয় উৎসব,তেমন হতে পারে সামাজিক বা পারিবারিক উৎসব।ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে ঈদ,ঈদে মিলাদুন্নবী,শবে বরাত,শবে কদর,বিভিন্ন ধরনের ওয়াজ মাহফিল,ওরশ শরীফ ইত্যাদি ইত্যাদি।
সামাজিক উৎসবের মধ্যে রয়েছে বিয়ে,সুন্নতে খাতনা,জন্মদিন বিভিন্ন ধরনের মেলা।আরও কতো ধরনের অনুষ্ঠান।আমি যেহেতু গ্রামে বড় হয়েছি এসব উৎসব যে মিশেছিলো আমার রক্তের সাথে।আর ছোটোবেলা কোন উৎসব কোন দিন হবে তা আগে থেকে হিসাব করে রাখতাম।রোজা কবে শুরু হবে তা তিন মাস আগে থেকে হিসাব করে রাখতাম।প্রথম রোজা থেকে শুরু হতো ঈদের প্রস্তুতি।কারণ তখন আমরা যারা ছোটো ছিলাম তাদের একটা ধারণা ছিলো ঈদ করতে হলে অবশ্যই তিনটা রোজা রাখতে হবে।প্রথম রোজা মধ্যের রোজা আর শেষ রোজা।আম্মা রোজা রাখতে দিবে না।এই নিয়ে কান্নাকাটি।আর প্রথম রোজার দিন মনে হতো উৎসবের মতো।ভালো রান্না বান্না আর সেহরী খাওয়ার প্রস্তুতি।
আমাদের এলাকায় পনেরো তম রোজাকে বলা হয় "মাইজলা রোজা"।সেদিন হাতে বানানো সেমাই পিঠা,চালের রুটি,মাংস আরও অনেক ধরনের আয়োজন করা হয়।তারপর আসে শবে কদর সেদিন রাতে গোসল করে নামাজ পড়তে হয় যতই শীত থাকুক না কেনো।কে বেশি নামাজ পড়বে তার প্রতিযোগিতা চলতো।এরপর আসতো বহু প্রতীক্ষিত ঈদ।
ঈদে একটা নতুন জামা পেলেই তখন খুশি হয়ে যেতাম।ঈদের দিন ফজরের নামাজের আগে ঘুম থেকে উঠে ঈদে যাওয়ার প্রস্তুতি।ঈদের নামাজের মাঠের কাছে মেলা বসে।ঈদের মেলা এখানকার প্রধান আকর্ষণ।ছোটোবেলায় ঈদ বলতে এই মেলাকেই বুঝতাম,আর এই মেলাকেই ঈদ ডাকতাম আমরা সবাই।ঈদের দিন সকাল যেমন আনন্দের সাথে শুরু হতো বিকালটা হতো তেমন কষ্টের,ঈদ শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্ট।রোজা ঈদের পরের দিন থেকে শুরু হতো কোরবানি ঈদের জন্য অপেক্ষা।
এছাড়া আমাদের গ্রামে বৈশাখ মাস শুরু হলেই মেলার ধুম পড়ে যায়।মেলার সময় হলে বাড়িতে খই ভাজার ধূম পড়ে যায়।মেলা থেকে জিলাপি আনা হবে,সেই জিলাপি খই দিয়ে খাওয়া হয়।মেলার সময় বাড়িতে মেহমান এলে খই জিলাপি খাইয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
আমাদের এলাকায় অনেক হিন্দু বাড়ি আছে।একটা হিন্দু বাড়িকে আমরা বলি "পাল বাড়ি"। পাল বাড়িতে অনেক বড় করে দুর্গাপূজা ও কালি পূজা হতো।সেখানেও মেলা হতো।বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি হতো।আমরা সকালে বিকালে পূজা দেখতে যেতাম সেখান থেকে বিভিন্ন খাবার,খেলনা এসব কিনতাম।এভাবে গ্রামের প্রতিটা শিশু বিভিন্ন উৎসবে বছরের প্রতিটা দিন ডুবে থাকে।এসব উৎসবে যেগদানের জন্য শতশত টাকার প্রয়োজন হয় না।বাবা-মা তাদের সাধ্য অনুযায়ী পাঁচটাকা দিলে সেটা নিয়েই তারা মহাখুশি।
শহরের উৎসবগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন।এখানে ঈদ বলতে একেক জন পাঁচটা-সাতটা নতুন জামা কিনবে।জুতা কসমেটিকস আরও কতো কি।ঈদের দিন সকালে ছেলেরা মসজিদে যাবে নামাজ পড়বে,মেয়েরা নতুন একটা জামা পড়ে সেমাই পায়েস খাবে এরপর হয় টিভি দেখবে নয়তো ঘুমাবে,আর বিকালে একটু ঘুরতে হবে।ঈদ শেষ।
এছাড়া শহরে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার জন্ম দিন পালন করা হয়।এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পার্টি।শহরের মানুষেরা এসব উৎসবেই আনন্দ খুঁজে পায়।
এভাবে স্থান কাল ভেদে উৎসব হয় বিভিন্ন ধরনের,তবে সেসব উৎসব মানুষকে করে তুলে প্রাণবন্ত উজ্জীবিত,হয়ে উঠে মানুষের বেঁচে থাকার রসদ।

Hi @shaonashraf, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON