বন্ধুরা কেনো হারিয়ে যায়!

in BDCommunity3 years ago

একসময় যে মানুষগুলোকে ছাড়া একটা মূহুর্তও চলতো না, তারা কি জীবন থেকে হারিয়ে যেতে পারে?একসময় আমাদের কতো বন্ধু থাকে,কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়।হারানোটা হতে পারে কারো নিজের দোষে বা যে হারিয়ে গেছে তার দোষ বা এমনও হতে পারে কারোই দোষ নেই শুধু সময়ের পরিবর্তন সব পাল্টে দিয়েছে।সময়ের গতিরেখা রাস্তাকে উল্টে পাল্টে গন্তব্য এমন দিকে নির্দিষ্ট করেছে যে একেক জন একেক দিকে ছুটছে।ছুটতে তো হবেই ছুটে চলাই জীবন।ছুটার সময় দেখা যায় যে বন্ধু জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো সে আর নেই,হয়তো নতুন কোন বন্ধু তার আসনে।

ছোট সময় অনেক বন্ধু থাকে যাদের সাথে আর এখন আমাদের যোগাযোগ নেই।যোগাযোগতো নেই ই এমনকি তাদের কথা কদাচিৎ মনে পড়ে।কিন্তু একটা সময় ছিলো তাদেরকে ছাড়া একটা মূহুর্তও চলতো না।প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় কিছু বন্ধু থাকে খুব ভালো বন্ধু যাকে বলে।স্কুল জীবনে সবারই একজন ভালো বন্ধু থাকে যাকে "বেস্ট ফ্রেন্ড" বলে।ঐসময় ঐ বেস্ট ফ্রেন্ডই থাকে তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।স্কুলেতো বটেই স্কুলের বাহিরেও সেই তার একমাত্র অবলম্বন, পরিবারের কথা ভিন্ন।নিজের জীবনের সব কথা তার সাথে আলোচনা করতে হবে,যত ছোট কিছুই তার সাথে ঘটুক না কেনো তাও বলতে হবে এমন একটা ভাব থাকে।বন্ধু যেদিন স্কুলে যাবে না সেদিন সেও স্কুলে যাবে না।কোনদিন যদি সে স্কুলে যায় আর গিয়ে দেখে বন্ধু আসেনি সেদিনটা তার কাছে অনেক দুঃখের দিন হবে,ক্লাসে মনোযোগ থাকবে না।যেখানেই যাবে বন্ধুকে নিয়ে যাবে।

কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে হয়তো তাদের স্কুল পরিবর্তন হয়ে যায়,হয়তো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন হয়ে যায়,একেকজন একেক জায়গায় জীবিকার সন্ধানে,এভাবে ধীরে ধীরে বন্ধু হারিয়ে যায়।যে বন্ধুর সাথে, যা করি না কেনো সব কিছুই বলা অপরিহার্য ছিলো, সে বন্ধুর সাথে হয়তো বছরের পর বছর ধরে কথাই হয় না,দেখাতো দূরে থাকুক।

ঢাকা আসার আগে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা সময় আমার কয়েকজন বন্ধু ছিলো।বাল্যকালের বন্ধু।অবশ্য তাদের গ্রাম আর আমাদের গ্রাম এক ছিলো না,যেকারণে শুধু স্কুলের সময়টাই তাদের সাথে থাকা হতো।স্কুলে থাকা কালে সবারই মোটামুটি একটা গ্রুপ বা দল থাকে।আবার ঐ গ্রুপের কোনো একজন বেস্ট ফ্রেন্ড হয়।যে সবচেয়ে ভালো বন্ধু।আমারও একজন এমন ভালো বন্ধু ছিলো।নাম ছিলো প্রান্ত।তারপর অন্য বন্ধুও ছিলো।কিন্তু স্কুলের সময়টুকুতে প্রান্তর সাথেই বেশি থাকো হতো।সে আমাদের বাড়িতে এসেছে,টিফিনের সময় আমার সাথে এসে খেয়ে গিয়েছে।অবশ্য আমি অন্যের বাড়িতে কখনও যায় না,সংকোচ বেশি, তাই তার বাড়িতে যাওয়া হয়নি,কিন্তু বাড়ির আশপাশে গিয়েছি।পাঁচ বছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জীবনে তার সাথেই চলেছি বেশি।

তারপর পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে ঢাকা চলে আসি।ঢাকাতে আসার পর নতুন জীবন,নতুন পরিবেশ,নতুন বিদ্যালয়।গ্রামে বড় হওয়া বাচ্চা ছেলে ঢাকার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা এভাবেই সময় কাটতে থাকে।তারপর অনেক বছর চলে যায়,স্কুল-কলেজ-মেডিকেল সব প্রতিষ্ঠানেই ছুটি খুবি নির্দিষ্ট।যখনই ছুটি পাই তখনই গ্রামে যায় ঠিকই কিন্তু বাড়িতে থেকেই মন ভরে না আর অন্য কোথাও তেমন বের হওয়া হয় না।ঐ যে প্রান্তদের বাড়ি অন্য গ্রামে আর আমার এমনিতেই সংকোচ বেশি এক জায়গায় যে উদ্যোগ নিয়ে যাবো তা আর হয়ে উঠে না।এইজন্য আর প্রান্তর সাথে কখনওই দেখা হয় নি।মাঝে শুধু সপ্তম শ্রেণীতে শ্রেণিতে পড়ার সময় গ্রামের মাছ বাজারে ভীড়ে একবার দেখা হয়েছিলো এরপর আর কোনোদিন দেখা হয়নি।মাঝে বারো বছর চলে গিয়েছে।

শুধু প্রান্ত না,সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আসার পর আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কারো সাথেই দেখা হয়নি আজ পর্যন্ত।যারা আমাদের পাড়া গাঁয়ের তাদের কথা ভিন্ন।কিন্তু অন্য গ্রামের কিন্তু একি সাথে পড়ালেখা করেছি,তাদের সাথে দেখা হয়নি।কিন্তু একসময় আমরা সারাক্ষণ একসাথে চলাফেরা করতাম। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে একেকজন একেক জায়গায়।

এইবার কোরবানি ঈদে বাড়িতে গেলাম।ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় গরুর-ছাগলের শেষ হাট থেকে আমার মামাতো ভাই পান্থকে একটা ছাগল কিনে দিয়ে একা একা বাড়িতে ফিরছি এমন সময় দূর থেকে কে যেনো ডাক দিলো।আমি তেমন বুঝতে পারিনি,পরে কাছে গিয়ে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি প্রান্ত।তার ছোট সময়ের চেহারা আমার মনে আছে,কিন্তু বড় হওয়ার পর আর দেখিনি।হয়তো সেই ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে দেখা হয় না,কথা হয় না,কিন্তু তাদেরকে প্রায়ই মনে হয়,তাদের কথা প্রায়ই চিন্তা করি,তখন শুধু তাদের ছোট বেলার চেহারা মনে ভেসে উঠে।

সেই ছোট ছেলেটার মুখ ভরা দাঁড়ি।আরে দূর, দাঁড়িতো হবেই বয়স হয়েছে তো ! বারো বছর পর দেখা,তাই এমন মনে হচ্ছিল।আসলে ইচ্ছে করলেতো হয়তো যোগাযোগ করা যেতোই,কিন্তু ঐ যে সময় সুযোগ পরিস্থিতির মিল হয় না।তাই বলে বারো বছর নিজের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বন্ধুর সাথে দেখা হয় না!যাইহোক তারপর দুইজন সাথে আরেকজন সেও আমার সহপাঠী কিন্তু তার বাড়ি আমার গ্রামে তাই তার সাথে দেখা হয় প্রায়ই বাড়িতে আসলে,তো আমরা একটা পুকুরঘাটে বসে গল্প শুরু করলাম।

মূল কথা হচ্ছে আমরা যখন গল্প শুরু করলাম, তখন দেখলাম হয়তো মাঝখানে বারো বছর পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু কেউ কোনো কথা ভুলিনি।সেই ছোটবেলার মতো যেমন একসাথে বসে সব গল্প করতাম,দুনিয়ার যত প্রয়োজন-অপ্রয়োজনীয় কথা বলতাম সেইসবই এখনও মনে আছে।তখন কি করেছিলাম না করেছিলাম সব বলতে থাকলাম।ঐ যে উপরে বললাম,প্রান্ত আমাদের বাড়িতে টিফিনের সময় যেতো,আমার আম্মা খেতে দিতো,দুইজনই খেতাম।তো একদিন আম্মা ডিমভাজি আর ডাল দিয়ে ভাত দিয়েছেন,তো ডাল দিয়ে খাওয়ার সময় প্রান্ত কি করলো,বাসনের মাঝখানে আগুল রেখে বাসনকে চরকির মতো ঘুরাতে লাগলো,তখন ডাল সব বাসন থেকে ছিঁটকে, বিছানা তার জামা কাপড়ে গিয়ে পড়লো,সব নোংরা হয়ে গেলো।এই ছোট একটা ঘটনা,দেখলাম সে অকপটে বললো,আমার নিজের কাছেও সব ভিডিওর মতো মনে আছে।অথচ ঘটনাটা তের-চৌদ্দ বছর আগের।এমন অনেক কিছুই আমরা গল্প করছিলাম,হুবহু দেখলাম অনেক কিছুই মনে আছে।

মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি যে একটা ঘটনা ঘটার পর সেটা যদি বার বার মনে না করে তাহলে সেটা কয়েকদিনে মুছে যাবে।তাই বুঝলাম আমি যেমন প্রায়ই তাদের কথা,তাদের সাথে কাটানো সময়ের কথা ভাবি,তারাও ভাবে।ভাবে বলেই মনে রাখতে পেরেছে।

সময়ের পরিবর্তনে,পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে হয়তো অনেক বন্ধু জীবন থেকে হারিয়ে যায় কিন্তু তাদের কথা সবসময় মনে পড়ে,তাদের সাথে কাটানো স্মৃতি মনে পড়লে ঠোঁটের কোণে যে হাসি চলে আসে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।এভাবেই বন্ধুরা রয়ে যায় মনের মধ্যে,হয়তো বাস্তব জীবনে তারা নেই।

best-children-friends-standing-with-hand-shoulder_33070-4816.jpg

Sort:  

এটাই বাস্তবতা। যাদেরকে না দেখলে পেটের ভাত হজম হতো না।কলেজ শেষে আড্ডা দিতেই হতো, সেই বন্ধু আজ একই সেক্টরে বসবাস করেও বছরে একদিন দেখা হয় না।

আমরা বেশিরভাগ মানুষ বয়স অনুযায়ী, ক্লাস অনুযায়ী, কাজ কর্মের মাধ্যম এবং পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী, সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী অনেকের সঙ্গ প্রত্যেক মানুষের জীবনে আসা ও যাওয়া করে, আর এটাই স্বাভাবিক। তবে বন্ধ হলো এমন একটা শব্দ যা সবাই পায় না বলা যেতে পাড়েই। কারণ বন্ধু হারিয়ে যায় না, সঙ্গ গুলো বদলায় ও হারিয়ে যায় এবং জীবনের প্রয়োজনে আবার সঙ্গ তৈরি হতে থাকে। এমনটাই আমার মনে হয়।

তবে হ্যাঁ কিছুক্ষেত্রে বাস্তবিক অর্থেই কিছু বন্ধু চিরজীবন থেকে যায়।

ধন্যবাদ।

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL