জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি অন্যতম এবং একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় প্রায় ৬৯৭.৫৬ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। ১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও সম্পূর্ণরূপে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সালে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানবিক, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক, সমাজ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও আইন অনুষদ এবং ০৪ টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ নূরুল আলম। এর আগে উপাচার্য ডঃ ফারজানা ইসলাম বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে ২০১৪ সালের ০২ রা মার্চ থেকে ২০২২ সালের ০১ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
Wikipedia
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসঃ
১৯৭০ সালে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে দেশের প্রথম ও একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে এটির নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা শহরের মুঘল আমলের নাম "জাহাঙ্গীরনগর" থেকে এই নামকরণ করা হয়। প্রথম ব্যাচে ১৫০ জন ছাত্র নিয়ে ৪ টি বিভাগ চালু হয়; বিভাগগুলো হচ্ছে অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত এবং পরিসংখ্যান। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেন । তার আগে ১৯৭০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হন অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রখ্যাত কবি সৈয়দ আলী আহসান, লোকসাহিত্যবিদ মজহারুল ইসলাম, লেখক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, আ ফ ম কামালউদ্দিন, আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ আব্দুল বায়েস, আলাউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান প্রমুখ । এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো শিক্ষকতা করেছেন অধ্যাপক সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, লেখক হায়াত্ মামুদ, লেখক হুমায়ুন আজাদ, নাট্যকার সেলিম আল দীন, কবি মোহাম্মদ রফিক (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত), অধ্যাপক মুস্তাফা নূরুল ইসলাম, আবু রুশদ মতিনউদ্দিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, ইতিহাসবিদ বজলুর রহমান খান, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আনু মুহাম্মদ প্রমুখ।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে পুরোদমে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ক্রমে বিভাগের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের প্রথম নৃবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে দুইটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা করলেও পরের বছর কলা ও মানবিকী অনুষদ খোলা হয়। আইন অনুষদের অধীন আইন ও বিচার বিভাগ ২০১১ সালে পদচারনা শুরু করে। বিভাগের প্রথম সভাপতি ড. শাহাবুদ্দিন। ২০১৫ সালে আইন ও বিচার বিভাগের ১ম ব্যাচ এলএল.বি সম্পন্ন করে। বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনুষদ সংখ্যা ৬ টি।
বাংলাদেশের স্বায়ত্বশাসিত প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ছাত্রসংখ্যায় এটি ক্ষুদ্রতম। কিন্তু বিভিন্ন জাতীয় ও অভ্যন্তরীণ আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এরশাদ সরকারের আমলে শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৮ সালে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মানিক ও তার সঙ্গীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিতাড়িত হয়। পূণরায় প্রত্যাবর্তন করলে ১৯৯৯ সালের ২রা আগস্ট তারিখে শিক্ষার্থীদের এক অভ্যুত্থানে ওই অভিযুক্তরা পূনরায় বিতাড়িত হয়। এই আন্দোলন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন বলে পরিচিত। পরে ২০০৫, ২০০৬, ২০০৮ ও ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় বেতন ও ডাইনিং চার্জ বৃদ্ধি বন্ধ, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, পানি সরবরাহ, আর্থিক স্বচ্ছতাসহ বিভিন্ন দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলন করে।
বিদ্যায়তনিক পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য। মৌলিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এছাড়া উয়ারী ও বটেশ্বরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খননকার্য, দেশীয় নাট্যচর্চায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অবদান, বিদ্যায়তনিক নৃবিজ্ঞান চর্চায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের পথপ্রদর্শন সুবিদিত।
Wikipedia
বাংলাদেশের উচ্চতম শহীদ মিনার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শহিদ মিনারঃ
স্থপতি রবিউল হুসাইনের তত্বাবধানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সম্মুখে ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনের ও ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসাবে ৫২ ফুট ব্যাস ও ৭১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনারটি অবস্থিত। ৮টি সিঁড়ি ও ৩টি স্তম্ভ বিশিষ্ট; দৃঢ়তার প্রতীক ত্রিভুজ আকৃতির ঋজু কাঠামোটিতে বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের জন্য মহান বীর শহীদ-গণের আত্মত্যাগের মহিমা বিধৃত হয়েছে। ৮টি সিঁড়ি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৮টি তাৎপর্যপূর্ণ বছর ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ ও ১৯৭১ সাল-গুলোর এবং তিনটি স্তম্ভের একটি বাংলাভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অপর দুইটি মাটি ও মানুষ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।
Wikipedia
![]() | ![]() |
---|
আমার ক্যামেরায় ধারণ করা পদ্মবিল
পদ্মবিলঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি ছোট ছোট জলাশয়ে পদ্মফুল ফোটে। এর একটি চৌরঙ্গী সংলগ্ন পদ্ম ফোয়ারা লেক ও অন্যটি জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের একটি লেক। তবে এর মধ্যে দর্শনার্থীদের আগ্রহ পদ্ম ফোয়ারা লেক ঘিরেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা দর্শনার্থীরা অন্তত একবারের জন্য হলেও এখানকার পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে যান। কেউ কেউ মুঠোফোন বা ক্যামেরায় সে দৃশ্য স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করে নিয়ে যান।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রাকৃতিক জলাধার, হাওর-বাঁওড়, খালে-বিলে ও ঝিলের পানিতে পদ্মফুল ফুটতে দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটা শুরু হয়। তবে শরতে অধিক পরিমাণে ফোটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে হেমন্তকাল অবধি।
প্রতিদিনের সংবাদ
উড়ন্ত প্রজাপতির আকৃতিতে নির্মিত মীর মশাররফ হোসেন হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মীর মশাররফ হোসেন হলঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট হল সংখ্যা ১৬টি, এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য ৮টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৮টি হল রয়েছে।
"মীর মশাররফ হোসেন হল" ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নির্মিত হয়েছে ১৯৭৩ সালে। ১ঌ৭৮ সালের ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে বিশিষ্ট কথাশিল্পী মীর মশাররফ হোসেনের নাম অনুসারে ১৯৭৮ সালে এই প্রজাপতি হলের নাম নির্ধারণ করা হয় “মীর মশাররফ হোসেন হল”৷ হলটির ছাত্র ধারণ ক্ষমতা ৯০০+
আয়তনে ও ধারণক্ষমতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় হল এটি।
প্রজাপতির প্রতিকৃতিতে নকশাকৃত এই হলটির স্থপতি ছিলেন, মাজহারুল ইসলাম।
প্রভোস্টঃ অধ্যাপক ড. ওবায়দুর রহমান(২০১৯-বর্তমান)
Wikipedia
Congratulations @shikto20! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 100 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out our last posts:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!