ভিন্নতা একটা সৌন্দর্য। বৈচিত্র্য পৃথিবীকে করেছে সুন্দর। ভিন্ন গায়ের রঙ, ভিন্ন আকার-আকৃতি, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন ধর্ম, চিন্তা ও মতাদর্শের ভিন্নতা এসবই মানুষকে একঘেয়েমি থেকে রক্ষা করেছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার শক্তি আমার কাছে ভীষণ বিশ্রী ব্যাপার বলে মনে হয়। এক পাল বানর বা শিম্পাঞ্জির দল যেমন তার নিজের এলাকায় অন্যের আধিপত্য সহ্য করতে পারে না, দলবদ্ধ মানুষের আস্ফালন এর চেয়ে বেশি কিছু না। দলবদ্ধ মানুষের ভীড়ে একজন সরল নিরপরাধ মানুষও হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর। আপনার দল বড়, এর মানে এই নয় যে আপনি ভিন্ন মতাদর্শের লোকের উপর অত্যাচার করবেন। এই ক্ষেত্রে অন্য দেশের উদাহরণ টেনে আপনি কোনোভাবেই আপনার কাজের জাস্টিফিকেশান নিতে পারেন না। অন্যায় সব দেশে, সব সময়ই অন্যায়। এখন বলতে পারেন, অন্যায় আসলে কী? একই কাজ একেক জায়গায় একেকভাবে সংজ্ঞায়িত হয়। এই ক্ষেত্রে সেই ক্লাসিক কথাটা মাথায় রাখলেই ল্যাঠা চুকে যায় যে আপনি নিজের প্রতি যে আচরণ আশা করেন না সে আচরণ অন্যের প্রতিও কইরেন না।
যে কোনো কারনে আপনার গান-বাজনা ভালো না লাগতেই পারে। কোনো নারী মাথায় কাপড় না দিলে আপনার চোখে সে নারী 'নষ্ট' বলে মনে হতেই পারে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে আপনার মতের অমিল থাকতেই পারে। মোটকথা, অন্যের সাথে আপনার যতোই অমিল থাকুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই আপনি তাকে আঘাত করতে পারেন না। নিষেধও করতে পারেন না, যদি না তা কারও ক্ষতি করে। আপনি হয়ত ভাবছেন একজন 'বেপর্দা' নারীকে দেখে অন্যরাও 'বেপর্দা' হয়ে যাবে। কিন্তু বিশ্বাস করেন, কাউকে দেখে কেউ খারাপ হয় না। কারও কথা শুনেই কেউ মতামত পাল্টে ফেলে না। যদি তাই হতো তাহলে দুনিয়াটা আজ সত্যিই বেহেশত হয়ে যেতো। ভালো কাজ কী তা আমরা সবাই কমবেশি জানি। তবুও আমরা যারা খারাপ কাজ করি তারা তা জেনেই করি। এমনকি ধর্মকর্মে পরিণত মানুষও পাপ করতে দ্বিধা করেন না যা আমরা প্রায়শই আমাদের আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকে সেটাই মানে বা বিশ্বাস করে যেটা সে মনে মনে সমর্থন করে। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ আছেন যারা তাদের বিপরীত চিন্তাকে গ্রহণ করতে পারেন।
মানুষের বিকৃতি আসে অবদমিত বাসনা থেকে। বাজারে যে জিনিসের যতো স্বল্পতা হবে সে জিনিসের দাম ও চাহিদা ততো বাড়বে। প্রয়োজন না থাকলেও লোকে সেটা কেনার জন্য হাহাকার করবে, যেমন- আইফোন ১৩ প্রো থাকার পরও যারা আইফোন ১৪ এর জন্য চাতক পাখির জন্য অপেক্ষায় আছেন তারা। আপনি একটা জিনিস যতো গোপন করবেন সেটা ততোই কৌতুহল জাগাবে। আমার এই লেখাটা পড়ে কেউ কেউ মনে মনে বা কমেন্টে গালি দিবে, আবার কেউ কেউ ভালোবাসাও জানাবে। আমি সবাইকেই স্বাগত জানাই। আমাকে গালি দিলেও আমি তার প্রতিবাদ করবো না। আমি কেবল তখনই জবাব দিবো যখন কেউ যৌক্তিকভাবে আমার কথার সমালোচনা করবেন। আমার ভুল ধরিয়ে দিলে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। প্রয়োজনে নিজের ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসবো।
ব্যাংক থেকে স্বচ্ছ ব্যাগে টাকা নিয়ে আসার পথে ছিনতাই হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দোষারোপ করাকে বলে ভিক্টিম ব্লেইমিং। অন্যায়কারীকে গ্রেফতার করতে না পারার বা শাস্তি দেয়ার অক্ষমতা থেকে এসব কথা বলে থাকে কিছু লোক। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রশিক্ষিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী রয়েছে যারা আপনার টাকায় বেতন পায়। অপরাধী যদি এদের চেয়েও চৌকশ হয় তাহলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম। আর অপরাধীকে গ্রেফতার করার ব্যর্থতার অজুহাত হিসেবে এরা ভিক্টিমদের দোষ দেয়।
একইভাবে, কোনো নারী নির্যাতিত হলে যারা পোশাকের দোহাই দেয় তাদেরকেও আমি একই ক্যাটাগরির বলে মনে করি। বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে দেখে সিডিউস না হওয়াকে তারা নপুংসকতা বলছেন। অর্থাৎ আপনি যদি বিপরীত লিঙ্গের কাউকে 'খোলামেলা' পোশাকে দেখে অ্যারাউজড না হন তাহলে আপনার চিকিৎসা দরকার। সত্যি বলতে কি, আমার ধারণা, এই ধরনের কথা যারা বলেন তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে চরম হতাশ। এদের মানসিক চিকিৎসা দরকার জরুরিভাবে।
বাংলা সিনেমায় একসময় একটা সংলাপ শুনতাম, "শয়তান! তোদের ঘরে কি মা-বোন নেই?"। তখন শয়তানের জবাব ছিল, " সবাই মা-বোন হলে বৌ হবে কে?" পোশাক যদি ধর্ষণের মনোভাব জাগাতো তাহলে ৩ বছর বয়সী শিশু বা ৯২ বছর বয়সী বৃদ্ধা ধর্ষিত হতো না। এর চেয়েও মারাত্মক বিকৃত যৌনাচারের কথাও আপনারা জানেন। আমি এখানে তা বলতে চাচ্ছি না এই জন্য যে আমার এই প্রোফাইল অনেক কম বয়সীরাও ফলো করেন।
একটা দেশ সে দেশের সব মানষকে নিয়ে গঠিত হয়। কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো দেশ পরিচালিত হতে পারে না। দেশ পরিচালিত হবে সকলের অধিকার রক্ষা করার জন্য। সর্বসাধারণের অধিকার নিশ্চিত করতে যে দেশ যতো অপারগ, সে দেশ ততো ব্যর্থ। যেদিন থেকে আপনি রাত তিনটায় কানে হেডফোন লাগিয়ে যে কোনো এলাকায় নির্ভয়ে হাঁটতে পারবেন সেদিন ভাববেন আপনার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। যেদিন আপনি নিঃসংকোচে যে কারও সমালোচনা করতে পারবেন হোক সেটা মিথ্যা সমালোচনা বা গালি, সেদিন ভাববেন দেশের মানুষ ও সরকার সঠিকপথে আছে। কেউ আপনাকে গালি দিলে বা সমালোচনা করলেই যদি আপনি ভালনারেবল অনুভব করেন তাহলে আপনার অবস্থান খুবই দূর্বল। আপনার জায়গা কেউ দখল করে ফেলবে এই ভয়ে যদি আপনি লোকজনকে দমন করা শুরু করেন তাহলে আপনি আগেই সরে যান আপনার জায়গা থেকে। আপনি যেখানে বসে আছেন সেখানে থাকার নৈতিক অধিকার আপনার নেই।
এটা আমার একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। এর সাথে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত নয়।
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
Congratulations @spandanlink! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 50 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
আপনার অধিকাংশ কথার সাথেই আমি একমত।
কিন্তু এই যে স্বচ্ছ ব্যাগে টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয় টা তুললেন, আপনি ত জানেন দেশের আইন শৃঙ্খলা দূর্বল, মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নেই, তাহলে এই কাজ টা করা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ হলো ? আচ্ছা করলাম না আপনাকে জিজ্ঞাসা, করলাম না ভিক্টিম ব্লেমিং, চোর কেই দোষারোপ করলাম, শাহবাগে চোরের বিরদ্ধে আন্দোলন করলাম, তার পুতলা বানিয়ে পুড়িয়ে দিলাম। ঠিকাছে, কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা ত হয়ে গেছে, হয়ত আপনাকে মেরে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে, আপনি ত আর নেই। আমি আপনার সাথে একমত, আপনার টাকা স্বচ্ছ ব্যাগে ক্যান, টাকা নিয়ে রাস্তায় শুয়ে থাকতে পারা উচিত। আমার জানামতে ওয়েস্টে এত সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও কত ঘটনা ঘটে যায়, আর আমরা বাংলাদেশের মত দেশে থেকে এত সুরক্ষিত পরিবেশ কিভাবে আশা করি। জাস্ট বিকজ আপনার টাকা দেখে লোভ লাগে না, তাই বলে অন্য কারো লাগবে না তা ভাবার কারণ নেই।
তাই আমার মনে হয় যেই ব্যক্তি আপনাকে স্বছ ব্যাগে টানা নিতে বারণ করছে তার বিরুদ্ধে কথা না বলে সরকার এবং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেন, আমিও আপনার মত স্বচ্ছ ব্যাগ না ভাই খালি হাতে টাকা নিয়ে ঘুরতে চাই।
প্রতীকি কথা
ওই ব্যক্তি একজন পাবলিক ফিগার, আমার চেয়ে উনি যদি সরকারের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলতো তাহলেই বরং বেশি উপকার হলো জনগণের। কিন্তু তিনি এসব কথা বলে খামোকা সরকারের বিরাগভাজন হতে চান না। তিনি ভালো করেই জানেন বাঙালী মুসলমানকে কোথায় সুড়সুড়ি দিয়ে জাগিয়ে তুলে নিজের কাজ হাসিল করতে হয়।
Thank God you are described this matter so nicely! I have no right to tell someone what to wear and what not to wear . Just because my personal beliefs.