তারপর এক পশ্চিমা বাতাসে অলস দুপুরে তারসাথে দেখা হয়ে যায়। আমি শহর হতে বাসায় ফিরছিলাম। ও পুকুর ঘাটে। ঐ ছেড়ি চোয়ালের দাঁত বাহির করিয়া এমন ফ্যাল ফ্যাল কইরা হাসছ কেন তুই? এমন ফ্যাল ফ্যালায়া হাইসা লাভ নাই। আমি তোরে বিয়া করুম না। অয় এক পা সামনে আগায়া আইসা গাল টাইনা কয় তুই আমারে বিয়া না করলে হারপিক খায়া মরমু। সুসাইড নোটে তোর নাম লিইখা দিমু আমার মরনের জন্য তুই দায়ী। ইয়াআল্লাহ্ ! কি শয়তানের শয়তান ছেড়িরে। তুই হারপিক খাবি কেন? তোর মুখে কিসের ময়লা? খায়া মরবি তো মর আমার নাম কবি কেন? কমু, একশো বার কমু। তুই আমারে বিয়া না করলে কমুই।
একবার ছোট থাকতে ওরে নদীতে ফালায়া দিছিলাম। আমি হতভম্ভ হয়ে চায়া চায়া দেখতেই থাকলাম। ঐদিক ও পানিতে নাকানি চুবানী খাইতে খাইতে আধমোরা অবস্থা।
মর মরলেই বাঁচি মনে মনে ভাবলেও হুশ আইলো ও মরলে আমিই ফাঁসবো। দ্রুত ঝাপ দিয়ে কোন মতে টানে টুনে কিনারে নিয়ে আসছিলাম। মনে হইলো মইরা গেছে। আমার হাত পা কাঁপে, ভয়ে ডরে। সিনেমায় দেখছিলাম নায়িকার ঠোঁটে ঠোঁট লাগায় ফু দেয়। আর দেরি করলাম না। ঠোঁটে ঠোঁট লাগায় ফু দিতেই ছেড়ি আমার মাথা চাইপা ধরে। আমার ঠোট ওর মুখের ভিতর। কোন মতে দু চারটা কিল ঘুষি মাইরা পেত্নীর হাত থেকে বাঁচি। ও সমানে কুত্তার বাচ্চা শুয়োরের বাচ্চা জপতে থাকে। তারপর চম্পা চিৎ হয়া শুয়ে হাসে।
এখন চম্পা ভরা যৌবনা। শহরে কলেজে পড়ে। সুযোগ পাইলেই বাসায় আসে। আম্মারে বলে এমন লক্ষী বউ কই পাইবেন খালাম্মা। তারাতারি বাসায় নিয়া আহেন। আব্বায় না হইলে কোন ডাকাইতের লগে বিয়া দিয়া দিব। আম্মায় শুইনা খালি হাসে। আমি লাঠি নিয়া দৌড় দেই আর বিরবির করি শয়তানী তোর বাইর করুম। বিয়া করবার এতো সখ? আম্মায় সামনে খারায়া যায়। আম্মার জন্য কিছু করবার ও পারি না।
সে রুমের ভিতরে ঢুইকায় মারে কয় এই লন আপনার বেক্কল পোলাডারে নিয়া আইলাম। এহন বিয়াটা করায়া দেন। না হইলে কিন্তু আমি অন্য কাউরে বিয়া করমু। তখন পোস্তাইতে হইবো। নাতী নাতনীর মুখ আর দেখার লাগবো না। এতোদিন থেইকা শহরে পড়তাছে একটা প্রেম ও করবার পারে নাই। এই বেক্কল পোলাডারে কোন মাইয়ায় বিয়া করবো, আমি বিয়া করবার চাইতেছি আর কি চান আপনেরা। আম্মায় খালি হাসে।
এখন আমি বড় হইছি।এমন সুন্দর জোয়ান মাইয়ারে পিডানোটাও বোকামি। চম্পার বাপেরে ফোন দিলাম। ও কাকা, আপনার মাইয়া তো আমার পিছনে লাগছে। আমি বিয়া না করলে নাকি আর কারো বিয়া করবো না চম্পায়। ওমনি চম্পা ফোন হাত থেকে কারে নেয়। ইহ! খুব ভাব বাড়ছে না ছেড়া। গেলাম আমি আর কোন দিন আমারে চাইলেও পাবি না। আমিও অবজ্ঞার স্বরে, হু, খুব আইছে, যা যা দূর হো।
দুই দিন পর পুকুরে ঝাল ফেলতেছি। মা কাঁদো কাঁদো গলায় আসে বলে চম্পার তো বিয়া ঠিক হইছে। আলহামদুলিল্লাহ! ভালো হইছে। কার যে কপালডা পুইরা ছাই হইলো, আমিও বাঁচলাম শয়তান্নীটার জ্বালায়। আম্মার চোখে পানি।আম্মা কান্না শুরু করছে। আম্মা কান্দো কেন? আম্মা বলে এমন মাইয়া যদি আর না পাই? যদি তুর শহরের শিক্ষিত বউ আমার লগে থাকতে না চায়। আমি ধূর, কেন থাকবার চাইবো না।
দুপরে খাওয়া করে একটু ভাত ঘুম দেওয়া অভ্যাস। আজ কি হল ঘুম ধরে না। কি যেন নাই নাই লাগে। কি নাই? কে নাই? আমার এমনটা কেন লাগে? আব্বায় ছোট থাকতে মরছে। আগে রাইতে আব্বা আব্বা কইরা ঘুম থেকে উঠতাম। আজ আব্বারে খুব ডাকতে ইচ্ছা করছে। নিঃশব্দে আব্বারে ডাকি, আব্বা তুমি কোথায়? আমার খুব খালি খলি লাগছে। মনে হইতাছে বুকের ভিতর সব ফাঁকা হইয়া গেছে।