তেরো থেকে ঊনিশ

in BDCommunity3 years ago

আপনার ঘরের টিনেজ বাবুটার যত্ন নিচ্ছেন তো? যত্ন বলতে শুধু সঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করানো, সময় মত স্কুল পাঠানো, পকেট খরচ দেওয়া, শাসন করাটাই নয়। তার মনের যত্ন নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ যত্নটাই নেই না।

দামী গেজেট, দামী পোশাক, নামী দামী স্কুলে পড়ানো একটা লাক্সারি লাইফ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে ফেলেছি। সব তো দিচ্ছিই আর কি চাই?

আমরা প্রায় মা বাবাকে বলতে শুনি এতো দৌড়ঝাপ, এতো ত্যাগ, দিন রাত এক করে পরিশ্রম, নিজের কথা ভাবি না সেটা তো আমাদের সন্তানদের জন্যই। আরো বলতে শুনি আমরা যা করি সন্তানদের জন্যই তো করি, সন্তানের ভালোর জন্যই তো করি। এটা এক ধরনের ইমোশনাল ব্লাক মেইলিং।

মা বাবা কি ভূল করতে পারে না? তারা কি ভূলের উর্দ্ধে? তারা কি ফেরেস্তা? না, তারাও ভূল করে, ভূল হতে পারে। তারাও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। অসংখ্য খারাপ সন্তানদের মতো অসংখ্য খারাপ মা বাবাও আছে।

সন্তান ছোট হলেও ওদের একটা বিশুদ্ধ মন আছে। সেই মনে নেই কোন ছলচাতুরী, থাকে না কোন ধোঁকাবাজি। সেই ছোট্ট মনে আছে পৃথিবীকে জানার সীমাহীন কৌতুহল। সব অসাধ্য কে সাধ্য করার চেষ্টা। অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রয়াস। অকল্পনীয় রাজ্য আছে তাদের। ভালোবাসা পাবার আকুলতা, শাসনে ক্ষুব্ধ হওয়ার প্রবণতা। সবার কিশোর মন এমনেই হয়।

কিশোর সময় একটি মানুষের জীবনের সব থেকে কঠিন ও ভয়ংকর সময়। তেরো থেকে ঊনিশ। এই বয়সে শরীরের দৈহিক গঠনের নানার পরিবর্তনের সাথে মনের গতি বুঝতে না পারার যে যুদ্ধ আবার তার সাথে পরিবারের যে বেধে রাখার প্রক্রিয়া তাতে ছেলে মেয়ে উভয়েরেই নাজেহাল অবস্থা।

সামান্য বোকাঝোকাতেই বেঁকে বসতে পারে। ইমোশনাল আঘাত ঘটতে পারে। হৈচৈ করে হাসতে হাসতে ফস ফস করে কেঁদে ফেলতে পারে। রুমে ঢুকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিতে পারে। বাবা মায়ের থেকে বন্ধুদের আপন মনে করবে। এটাই তো স্বাভাবিক। আমরাও তো তাই করেছিলাম।

তাই তাদের দৈহিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মনের বেরে উঠার যে দ্বন্দ্ব তা সমাধানের জন্য মা বাবাকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারের সাথে তাদের দূরত্ব কমিয়ে আনাতে হবে। কারণ পরিবারের সাথে যদি থাকে দূরত্ব তাহলে এই বয়সটা আরো কঠিন হয়। আরো লাইনচ্যুত হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

তারা একটু স্বাধীনতা চায়। তাদৈর স্বাধীনতা বলতে সাইকেল চালিয়েদূর দুরান্তে ঘুরতে যাবে, খেলার মাঠে খেলতে যাবে, একা একা স্কুলে যাবে, একা ঘুমাবে, যেখানে সেখানে কাপড় খুলে ফেলে রাখবে, ইচ্ছা হলে খাবে, ইচ্চা মত গোসল করবে, গোসলের জন্য চাপাচাপি করতে পারবে না কেউ, রাতে ঘুরতে চাবে, বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি আড্ডা দিবে আরো কত কি। তবে এই সব কিছুই আপনি চাইলেও তাকে করতে দিতে পারেন না। তবে তাদের সরাসরি না বলতেও পারবেন না। তাদের এইসব আচারণের জন্য মনের ভিতরে তোলপার উঠলেও খুব কুল থাকতে হবে। তাদের সাথে নমনীয় আচারণ করে পরিস্থিতি বুঝতে হবে। তাদেরকে আন্ডার কন্ট্রোলে আনার জন্য খুবই কৌশলী হতে হবে। সরাসরি না বললে হিতের বিপরীত ঘটতে পারে। তাই সরাসরি না, না বলে ত্যানা পেঁচিয়ে বলতে হবে।

এখন এটা ২০০০ সাল না। এখন আমাদের সন্তানেরা কোন ভাবেই নিরাপদ নয়। আমরা তাদের একটা নিরাপদ পৃথিবী দিতে পারি নিই। স্কুল কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকা হতে শুরু করে রাস্তা ঘাট কোনটাই নিরাপদ নয়। এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে এসে আপনি তাকে শাসন করে আটকিয়ে রাখতে পারবেন না। টেকনোলজির যুগে এসে, সোস্যাল মিডিয়ার যুগে এসে আপনি কাউকেই আটকিয়ে রাখতে পারবেন না। আপনার চোখের সামনেই বসে বসে নানা দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে টেরও পাবেন না। তাই সন্তানদের সময় দেন। তাদের উপর আপনার বিশ্বাস তৈরী করুন। তাদের মনের যত্ন নিন।

images (6).jpeg

Source

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL