৩ নভেম্বর, সময় তখন আনুমানিক দুপুর ১/২ টা। আমাদের দশ জনকে ৩ নং গেট ভেদ করে জেলখানায় ঢুকানো হল। মাঠে বিচরণ করা আসামিরা হই হই আওয়াজ করতে করতে আমাদের কাছে আশা শুরু করলো। কারণ সেখানে অনেক আসামিই সৈয়দপুরের। বাকি আসামী গুলো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইছে এরা কারা, কু থেকে এলো এরা। এতো হই হুল্লর কেন? তাদের এই বিস্ময় বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হয় নিই। এরশাদ হোসেন পাপ্পু ভাই যখন আমাদের কাছে এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো, বুকে আলিঙ্গন করলো তখন আর কারোই বুঝার বাকি রইলো না যে আমরা সৈয়দপুর বিএনপির নেতা কর্মী রাজনৈতিক মামলায় কয়েকদিনের জন্য তাদের মেহমান হয়ে এসেছি।
অন্য আসামিদের মাটিতে বসানো হল, আমাদের বসানো হল ক্যাশ টেবিলের ছাদের নিচে। যেখানে ঢালাই করে বেঞ্চের মত বসার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই বসার ব্যবস্থাটাও পাপ্পু ভাইয়ের সুবাদে হয়েছে। ইতিমধ্যে ম্যাট-ফ্যাট, রাইটার - ফাইটার যারা আছে সবাই বুঝে গিয়েছে আমরা পাপ্পু স্যারের লোক। দু একজন পাপ্পু ভাইকে স্যার বলে সম্বোধন করতো। তারা আমাদের খেদমত করা শুরু করে দিল।
আসামিদের অনেকেরেই কপালে ভাজঁ পরে গেছে আমার চুল নিয়ে সেটা জানালো আজিম ভাই। আজিম ভাই পাপ্পু ভাইয়ের ওয়ার্ড নীলসাগর -২ এর ম্যাট। তিনি আমাকে এসে বললেন ইনোসেন্ট বয় তোমার চুল তো সব কেটে ফেলবে। উনি আমাকে ইনোসেন্ট বয় বলেই ডাকতেন৷ তখন পর্যন্ত আমার কোন টেনশন ছিল না। সব কিছুই উপভোগ করছিলাম। ভাবছিলাম যতক্ষণ উপভোগ করা যায় করি এর পর কপালে যা আছে দেখা যাবে। কিন্তু আজিম ভাই যখনেই কানের কছে এসে চুল কাটার সংবাদটা দিল তাতেই ভিতরে ধুক করে উঠলো। পরখনেই আজিম ভাই আশ্বাস দিল যে আমি দেখবো কি করা যায়।
কিছুক্ষনের মধ্যে কালা মাগুর হাজির, উনি হচ্ছেন সুবেদার। সবার সাথে কথা বার্তা হলো।কে কি করি নাম ঠিকানা সবেই শুনলো। অন্য আসামিদের আমদানিতে রাখা হয় প্রথম দিন। তারপর সকালে মেডিক্যাল করে টিকেট দিয়ে অন্য ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু আমাদের সবাইকে সরাসরি ওয়ার্ডে পাঠানো হবে। যা বিপত্তি ঘটলো এই সময়ে।
সুবেদার জিজ্ঞেস করলো ধূমপান মুক্ত কে কে? আবিদ হোসেন লাড্ডান ভাই হাত তুললো আমি এদিক ওদিক চেয়ে দেখে আমিও হাত তুললাম আর ইমরান লাড্ডান বেচারা না চাইলেও তুলতে হলো যেহেতু বড় ভাইরা আছে। তারপর আমাদের তিনজনকে দিয়ে দিল ধূমপান মুক্ত ওয়ার্ডে। বাকি এডভোকেট ওবায়দুর ভাই, শেখ বাবলু ভাই, শওকত হায়াত শাহ ভাই সহ বাকি সবাইকে এরশাদ হোসেন পাপ্পু ভাই, তারিক আজিজ ভাই, পাপ্পু ভাইদের ওয়ার্ডে দিল। আমি তখনেই ফেটে যাওয়া বেলুনের মত চুপশে গেলাম। আজিম ভাইকে বললাম এটা কি হল ভাই, আমি জানলে তো হাত তুলতাম না। ভাইরা আছে বলেই নিশ্চিন্তে আছি এখন ভাইরা অন্য ওয়ার্ডে থাকবে। এইটা কোন হইলো?
আমাদের তিন জনকে দেওয়া হল তিস্তা-৪ ধূমপান মুক্ত ওয়ার্ড। সেখানে আবার ২৫ মাস ধরে সাজা ভোগ করতেছে আমাদের ওয়ার্ডেরেই এক ছোট ভাই। সেই আমাদের ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে বেড থেকে শুরু করে সব কিছুই প্রস্তুত করে দিল। আর নিশ্চয়তা দিল সে আছে কোন সমস্যা হবে না। কোন সমস্যা বা প্রয়োজন হলে তাকে বলতে। সে আসলেই ১৫ দিনে আমাদের কোন সমস্যায় পরতে দেয় নিই।
চলবে.........