প্রকৃত ভালোবাসার কি কখনো হেরে যেতে পারে?

in BDCommunity4 years ago (edited)

images.jpeg
Image Source

নয়ন আমার বন্ধু! একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। সহজ সরল প্রাণবন্ত বন্ধুবৎসল। সাবিনা ইয়াসমিন মনি কাজলের প্রাণ প্রিয় স্ত্রী। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দাম্প্যত্যের বয়স ১২ বছর হলেও তাদের নেই কোন সন্তান। সন্তান না থাকলেও ভালোবাসার কোন কমতি নেই। যেমনটি কমতি ছিল না মমতাজের প্রতি শাহজাহানের, যেমনটি কমতি ছিল না লাইলীর প্রতি মজনুর।

যাই হোক এই প্রিয় মানুষটির যদি গুরুতর অসুস্থ হয় তাহলে কি আর মাথা ঠিক থাকে। হুম ওনার স্ত্রী মনির দুটি কিডনিই অকেজো। দুই তিন বছর ধরে চেন্নাই ভেলোরে চিকিৎসার জন্যে দৌড় ঝাপ তো আর কম করে নিই। যারা একবারের জন্য হলেও মেডিক্যালের বারান্দা ধরনা দিয়েছে তারাই ভালো জানে।

ডায়ালাইসিসের পর চিকিৎসকরা বলেন, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে মনিকে বাঁচাতে চাইলে। অবশ্য তাদের আগেই এমন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল চিকিৎসকরা। ।

নয়ন তার পরিবার, বন্ধুজন ও মনির পরিবার সবাইকে বলে রাখে কিডনির প্রয়োজন পরবে। সবাই আশ্বাস দেয় কোনো সমস্যা নাই কিডনি লাগলে সবাই সহযোগিতা করবে। নয়ন ও মনি আশ্বস্ত হয়। দেখতে দেখতে ৬ মাস কেটে যায়। ডাক্তার শেষ কথা বলে দেয়। মনিকে বাচাঁতে চাইলে দ্রুত কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতেই হবে। শেষ মুহূর্তে দুজনের স্বজনদের কারো কিডনি পাওয়া যায় নাই। নয়ন কিডনি কেনার চেষ্টা করতেও কম অর্থ খরচ ও পরিশ্রম করে নিই। কিন্তু হাসপাতাল জানায় রক্তের সম্পর্ক ছাড়া হবে না ডিএনএ ম্যাচিং লাগবে। কেউ আর রাজি হয় না কিডনি দিতে। নয়ন নাছোড় বান্দা এতো সহজে ভালোবাসার কাছে হেরে যেতে পারে না। মনির মুখ মলিন হতে থাকে। মৃত্যু তার চারপাশে ছায়ার মতো যেন ঘিরে রেখেছে।

এদিকে, ভারতে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে নয়নের চাকরি চলে যাওয়া অবস্থা। ভেলোরে মনিকে রেখে চাকরি ম্যানেজ, টাকা ম্যানেজ কিডনি ম্যানেজের চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখে নিই। দীর্ঘ ছুটি হয়েছে বিনা বেতনে।

কয়েকজনের কিডনি ম্যাচিং হইলেও তারা বেঁকে বসে। এদিকে মনির যায় যায় অবস্থ। অসহায়-নিরুপায় নয়ন নিজেরটা ম্যাচিং করায়। আল্লাহর অশেষ রহমতে সব কিছু মিলে যায়। কিন্তু ততেও বাঁধা। দুজনের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ায় নয়নের পরিবার।

তাদের আশঙ্কা- একটা মেয়ের জন্য নিজের লাইফ রিস্কে ফেলা ঠিক হবে না। নয়ন চাইলেই আকেটা বিয়ে করতে পারবে। সন্তানাদি থাকলেও একটা কথা ছিল। সাথে ২৫-৩০ লাখ টাকাও বাঁচবে।

নয়ন প্রাণ প্রিয় স্ত্রী মনির মুখের দিকে দেখে। কি দেখে সেও জানে না। বন্ধু বান্ধবের সাথে আলাপ করে আরও সংশয়ে পড়ে। মনির ভালাবাসা কোন বাঁধায় নয়নকে আটকাতে পারে নিই। সে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে। পরিবারের মতের বিরুদ্ধেই যায়। সিদ্ধান্ত নেয় মনিকে একটা কিডনি দিবে। তবু তার নার্ভাস লাগে। ভেলোর থেকে ফোন দেয়। জানায়, কাল সকাল ৬টায় নয়ন ও মনির অপারেশন। আমার কাছে দোয়া চায়। আমি কি দোয়া করমু। সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী টাইপের মানুষ। বলি, এটা খুব মাইনর অপারেশন এখন। টেরও পাবি না। তোরা দ্রুত সেরে ওঠ। আপনারাও এই দম্পতির দ্রুত সুস্থতা কামনা কইরেন।

এই ঘটনাটি দুই বছর আগের। নয়নের অনুরোধে এই বিষয়টি কাউকে জানানো হয় নিই। কারণ সে বিষয়টি কাউরে জানাইতে চায়নি। এই দুই বছর তাদের ভালোবাসায় হয়তো অনেকের হিংসে হত। সুস্থ ভালই ছিল।

কিন্তু গত ২৫ মে নয়ন জানায় ৪ দিন তার জ্বর করোনার লক্ষণ। নিয়মিত মগবাজার থেকে উত্তরায় অফিস করছিল। শুনে কিছুক্ষণ গালা-গালি দিলাম। বললাম কিছু হবে না টেস্ট করা। এর মধ্যে মনিরও একই লক্ষণ। নয়ন ভয় পায়। আমারও টেনশন লাগে। ওরে বলি কিছুই হবে না। ওদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। মনির অবস্থা বেশি খারাপ। অনেক চেষ্টার পর করোনা টেস্টে দুজনেরই পজিটিভ আসে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সাথে সাথে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরে। ও কান্নাকাটি শুরু করে। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আমি আমার এক সহকর্মীকে জানাই। সে বেশ সহায়তা করে। কিন্তু কোথায় কিছু করতে পারি সম্ভব হয় নিই। এর মধ্যেই আরো কয়েকদিন দিন কেটে যাওয়ার পর হলি ফ্যামিলিতে বলে কয়ে একটা সিট ম্যানেজ করে আমার সহকর্মী। কিন্তু এই ভালোবাসা তো একজনের পক্ষ হতে না। একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজন যাবে না। অনেক চেষ্টার পর নয়ন মুগদা কোভিড স্পেশালাইজড হাসপাতালে দুইটা সিট পায়। চিকিৎসকরা তাদের ফাইল দেখে বেশ আন্তরিকভাবে চিকিৎসা শুরু করে। আল্লাহ্ সহায় হলে আর কি কিছু দরকার আছে? ১৫ জুন তাদের ছেড়ে দেয়া হয় হাসপাতাল থেকে। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে বলে। আজ নয়ন জানাইলো- অবশেষে তারা দুজনই করোনা নেগেটিভ হইছে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ও এক কিডনি নিয়াও দুই জনেই সুস্থ হইছে।

প্রকৃত ভালোবাসার কি কখনো হেরে যেতে পারে?

[সম্পূর্ণ ঘটনাটি সত্য নয়ন ও মনি ছদ্মনাম]

Sort:  

Hi @steemitwork, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @zayedsakib!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON

বেঁচে থাকুক ভালোবাসা ও ভালোবাসার মানুষ গুলো পৃথিবীর বুকে ।

আল্লাহর রহমতে তারা এখন ভালো আছে। আজকে সকালেই ভাইয়ের সাথে কথা হল।

ঐ ভাই আজ সার্থক। আসলে ভালোবাসার সার্থকতা আর গভীরতা তাদের ত্যাগের মধ্যেই প্রকাশ ঘটে। তারা আজও বেঁচে আছে এটাই তাদের ভালোবাসার সার্থকতা। আজ সকালেও ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। এই পোস্টটিই ও পড়েছে ভাই।