আজকে চুল টুল সাইজ করলাম। দাড়িটাও একটু আধটু নাড়া দিলাম। পুস্পার মত চুল দাড়ি দিয়ে মে ঝুকেগা নেহি শালা ডায়ালগ মারার বয়স শেষ। বহুদিন হতে চুলে তৈল দেই নাই। মাথাটাও একটু টনটন করা শুরু করেছে। তাই অনেকদিন পর একটু তৈল চর্চা করলাম। কাল সুবা সুবা রংপুর যেতে হবে। এই বুড়ো বয়সে ট্রেনিং আর পরীক্ষা ভালো লাগে না। তারপরেও কর্মের খাতিরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও কিছু কিছু কাজ করতে তো হয়েই।
আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান ট্রেডের জন্য লেভেল-১ মূল্যায়ন টা আমার খুব জরুরী। রংপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে একটি সরকারি প্রজেক্টের আধীনে এই ট্রেডের লেভেল-১ মূল্যায়ন এর জন্য পরীক্ষা দিয়ে ফর্ম সংগ্রহ করেছিলাম। হঠাৎ করেই ডাক আসে গত ২১ তারিখ থেকে তিন দিনের অরিয়েন্টেশন ক্লাস ও চতুর্থ দিনে পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।
যথারীতি ২২ তারিখ ঘুমের সাথে যুদ্ধ করে সকালেই উঠে পরলাম। এমার্জেন্সি কাজ সেরে ব্রাশ করে নাস্তা করে রওনা দিলাম। বাস টার্মিনাল হতে গেটলক বাসে রংপুর যাত্রা। রংপুর মেডিক্যাল মোরে নামতেই দেখি ধুধু ফাকা। যেখানে অটো আর রিক্সার জ্বালায় থাকা যায় না সেখানে এই অবস্থা কেন? একটু বিস্মিত আবার চিন্তিতোও হলাম। জানতে পারলাম পুলিশের মামলার জ্বালায় তারা অতিষ্ঠ। মেইন সড়কে অটো রিক্সায় মামলা দিলে নাকি ২৫০০ টাকা গুনতে হয়। এই কারনে আধবেলা তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
কি আর করার! অবশেষে হেঁটেই রওনা দিলাম।কিছদূর যেতেই পিছন থেকে একটা লক্কর ঝক্কর বাস গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গেলো। কোন কিছু না ভেবেই উঠে পরলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে বিপদ মুক্ত হওয়ার আভাস দিলাম। কিন্তু এই সুখ কয়েক সেকেন্ডেই শুধু স্থায়ী ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম বাসটি শুধু আমার জন্যই থেমেছিল এখন তো দেখি রাস্তায় যারেই দেখে তার জন্যই বাসটা থেমে যাচ্ছে। বাসকে পিছন থেকে বাই সাইকেল বেল মারে ক্রস করে চলে যাচ্ছে। বাসের ভিতরের অবস্থা ভয়াবহ। কুরবানী ঈদের সময় ট্রাকে যেভাবে গাদাগাদি করে গরু হাটে নিয়ে যায় তার থেকেও খারাপ অবস্থা।
তিন দিনের ক্লাসের পর গত শুক্রবার পরীক্ষা। সকাল নয়টায় পরীক্ষা শুরু হবে। তাই রাতেই ফোনে সকাল ৬ টা, ৬.১৫ মিনিট ও সকাল ৬.৩০ মিনিটে এলার্ম সেট করলাম। আর নিজের থেকে একটু দূরে ফোন রেখে সুয়ে পরলাম। ফোনটি হাতের নাগালে না রাখার কারন হচ্ছে যাতে এলার্ম অফ করে আবার শুয়ে না পরি। কিন্তু সব প্লানেই পন্ডশ্রম হয়ে গেলো।
সকালে এলার্ম বেজে উঠলো। কোনমতে আবছা আবছা চোখ খুলে বিছানা থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে এলার্ম অফ করে আবার শুয়ে পরলাম এই ভেবে যে আরো দুবার তো এলার্ম বাজবেই। কিন্তু ওটাই যে সর্বশেষ এলার্ম ছিল তা তখন বুঝতে পারি নিই। অবশেষে হঠাৎ ঘুম ভাংঙ্গে মোবাইল উঠায়ে দেখি সর্বনাশ করে ফেলছি। তখন ঘরির কাঁটায় সাতটা পঞ্চাশ মিনিট। কোন মতে ধর পরায়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে রওনা দেই। তারাহুরা করে বেশি লাভ নাই। যা দেরী হবার হয়ে গেছে। তবে আমি তা নিয়ে বেশি সংকিত নই। কারণ যেই বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে তাতে আমি বেশ দক্ষ। সেটা অবশ্য তিন দিনের অরিয়েন্টেশন ক্লাসে প্রমাণ দিয়েছি। নিজের ঢোল নিজেই বাজালাম আরকি।
প্রথম এক ঘন্টা ৩০ মার্কের লিখিত হবে। তারপর চা বিরতি ১০ মিনিট। তারপর প্রাক্টিক্যাল ২.৩০ ঘন্টার মধ্যে ৪ টা জব শেষ করতে হবে। আমি যেহেতু আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান ট্রেডের তাই চারটা জবের মধ্যে একটা বাংলা টাইপিং একটা ইংরেজি টাইপিং, একটা এক্সেলের আর একটা পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন তৈরী করতে হবে। আমি অবশ্য এক ঘন্টার মধ্যেই চারটা জব শেষ করে ফেললেও অনেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও শেষ করতে পারে নিই। এর পর নামাজ ও দুপুরের খাবার বিরতির পর আরো কিছু প্রাক্টিক্যাল কাজ করতে হবে। তার মধ্যে কম্পিউটার সম্পূর্ণ খুলে ফেলতে হবে আবার সম্পূর্ণ এস্যাম্বল করতে হবে। তারপর অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করতে হবে হার্ড ডিস্ক পার্টিশন সহ। সাথে এপলিকেশন সফ্টওয়্যার গুলো ইনস্টল হয়ে গেলেই ভাইবা দিতে হবে। এই পাঁচ ঘন্টা পরীক্ষার পরে সাথে সাথেই রেজাল্ট দিয়ে দেওয়া। তবে এই রেজাল্ট আমাদের স্কুল কলেজের মত গ্রেডিং সিস্টেমে নয়। সার্টিফিকেটে শুধু মাত্র দেওয়া থাকবে "আপনি দক্ষ" অথবা "আপনি এখনো দক্ষ হোন নিই।"
বাংলাদেশে এই পদ্ধতিটি এখনো তেমন পরিচিতি পায় নিই। তবে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই একই সিলেবাসে একই পদ্ধিতি অনুসরণ করে। এই সিস্টেমে কারিগরী শিক্ষা দিলে দক্ষ জনশক্তির পাশাপাশি বেকারত্ব দূর হবে।
NTVQF (National Technical & Vocational Qualifications Framework) পদ্ধতি সম্পর্কে এবং এই পদ্ধতিতে আপনি কিভাবে নিজেকে দক্ষ মূল্যায়ন করবেন সেই বিষয়ে অন্য কোন দিন বিস্তারিত লিখবো।