এখন আমি লকডাউনের কারণে ঘরে বসে থেকে পুরোটা হতাস,কোনোই প্রোগ্রেসিভ কাজ হচ্ছে না। দিনের মধ্যে দুইটিই কাজ শুধু খাওয়া আর ঘুমানো। কি হবে এই জীবনের? একটাই প্রশ্ন নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করছি। নিজের মধ্যে যেন দুইটি সত্তা কাজ করছিলো,বর্তমানে করছে।
একটি শিক্ষক অন্যটি ছাত্র সত্তা। শিক্ষক সত্তার কাজ শুধু প্রশ্ন করে বিপদে ফেলে দেওয়া, আর অন্য দিকে ছাত্র সত্তার কাজটা হলো ওই প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করা।
লকডাউনের শুরুর দিন গুলোতে অল্প কিছু প্রোগ্রেসিভ কাজ হলেও,তা মাস খানেকের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। তখন শিক্ষক সত্তা প্রশ্ন করে,
-কি বালক, খুব আনন্দে আছো?
-হ্যাঁ। কিছুটা, ছাত্র সত্তা হেসে বলে।
-তা এত খুসি কেনো?
-এই যে আমি সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং, ওয়ার্ডপ্রেস একটু আধটু পারি।
-একটু আধটু পারি। শিক্ষক সত্তা ব্যঙ্গ করে বলে। এই যে বালক শুনো তোমার এই একটু আধটু দিয়ে কিছু হবে না। মনে রেখো তুমি ইংলিশ লিটারেচারের ছাত্র, তোমার মাস্টারি করা আর কোনো কাজ সহজে পাবে না। দেখো না জব মার্কেট প্লেস ঘুরেফিরে। কত কম্পিটিশন, কত অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ব্যাক্তি কাজ করছে। আর তুমি এই একটু আধটু দিয়ে বেঁচে থাকবে কিভাবে?
-জানি না। হঠাৎ করেই হাসিটা মিলিয়ে গেলো ছাত্র সত্তার।
সেই থেকে মাথায় প্রশ্ন চেপে বসেছে, কি হবে এই জীবনের? চারদিকে মানুষ মরছে, এত শত লোক চাকরি হারাচ্ছে। আর তুমি আছ চাকরি পাওয়ার আশায়? বার বার প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আর হতাস, নিরস্ত্র ও নিস্তেজ করে দিচ্ছে আমার সব শক্তি কে। শরীরে নেগেটিভিটি প্রবেশ করে গেলো। যা আমাকে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা করতে উৎসাহিত করে দিচ্ছে।
ঠিক এমন সময় একটা গ্রুপের মধ্যে থেকে পরিচয় এক রহস্যময়ী নারীর। তাকে একবারে স্বর্গের অস্পরা বললে ভুল হবে। আবার একবারে ভালো না বললেও ভুল হবে (কোনো নারীর বাজে নয় নারীরা সব সময় সুন্দরী এবং ঈশ্বরী)। মানে বলতে পারেন কোনো এক ছোট গল্পের নায়িকা হওয়ার সব যোগ্যতা তিনি রাখেন। তার কাজলে কালো ওই চোখ গুলো, যার গভীরতা মাপতে যাওয়ার দূঃসাহস করা অনন্ত আমার মত হতাস ব্যাক্তির উচিৎ নয়। চেহারা গড়ন গোল গাল, নীলাভ শাড়ি, কপালে একটা নীল টিপ দিলে তার রূপ ক্লিওপেট্রাকেও হার মানাবে,তবে তার নিতম্বের চর্বিযুক্ত। আর কন্ঠের স্বর শুনে স্বংয় শিবও তাঁর ধ্যান ভাংতে প্রস্তুত।
তা স্বভাব গত ভাবেই ছেলেরা মেয়েদের দিকে আকৃষ্ট হয়। আমিও তার বিপরীত নই। আকৃষ্ট হলাম তার দিকে। ছবি দেখেই ভালো লেগে গেলো ওনাকে। তাই সে কথাটা মনের মধ্যে বন্ধি না রেখে বলেই দিলাম। ভালো লাগার কথাটি লিখেছিলাম ফেইসবুক ইনবাক্সে। ওনার কোনো বার্তা আসে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করলাম, প্রায় ২৪ ঘন্টার মত। কোনো সাড়া পাইনি,পরে দুই দিনের মাথায় উত্তর আসলো।ওনার নাকি আমার এমন সৎসাহস ভালোই লেগেছে।
লালন তাঁর গানে বলে গেছেন "মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি"। তাই মানুষকে জানতে আমার বেশ লাগে। ভাবলাম কথা যেহেতু হলো তাহলে একটু আরাধনাই করা যাক।
মানুষকে জানতে হলে,প্রথমে তার সাথে কথা বলতে হয়। আর যদি কথা না হয়ে বার্তার আদান-প্রদান হয় তবে, বার্তার শব্দ চয়ন, লেখার ধরন ও লেখার মুড দেখেই বুঝা যায় মানুষটা কেমন।
যদিও অনেক সময় ভুল হয়। বিশেষ করে আমার ক্ষেত্রে।অন্যান্য যারা আমার সাথে চলাফেরা করে না বা হঠাৎ করে দেখা হয় তারা আমাকে বিশেষ জ্ঞানী ও সাহিত্য প্রেমী মানুষ বলে ভাবে, কিন্তু আমি তো জানি আসলে আমি কি। আমার মধ্যে কতটুকু জ্ঞান আছে সাহিত্য প্রেম আছে।
তো মেয়েটির সাথে বার্তার আদান-প্রদান হলো বেশ কিছুক্ষণ। বুঝলাম উনি বেশ কবিতা ভালোবাসেন,গান করে অনেকটা প্রফেশনাল গায়িকা,কিছুটা ধার্মিক হলেও বেশ খানিকটা রাগি,আরো জেনে গেলাম তারা যৌথ পরিবারে বাস করে। বাসার ঠিকানা জিজ্ঞেস করতেই ওনার মুড খানিকটা পাল্টে গেলো। হয়তো কোনো অভিজাত এলাকায় থাকে যেটা আমাকে জানালে হয়তো আমার মতিভ্রম হবে। তা সেদিনের মত এতটুকুই কথা হলো।
মেয়েরা অন্যের কাছে নিজেকে রহস্যময়ী পরিচয় দিতে ভালোবাসে। পরবর্তী দিনের বার্তা গুলো প্রমান করলো তিনিও। এই রহস্যময়ী হওয়ার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই।
হ্যাঁ, নারীরা রহস্যময়ী বলেই তো ছেলেরা তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে নির্দ্বিধায় বলে দেয়, "খুব ভালোবাসি তোমাকে"।
যেকোনো নারীর রহস্যময়ী ভাবটা বেশ ভালোই লাগে। এটাকে আমি প্রশ্রয় দিই।ঠিক ওনার বেলায়ও সেটার ব্যাতিক্রম ছিলাম না।
আবার বার্তা দিলাম,উনি সুস্থই আছে। আরো জানলাম, ওনার ইচ্ছা ফিল্ম স্টাডি নিয়ে পড়াশোনা করার কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। আর চট্টগ্রামের বাইরে পরিবার যেতেও দিবে না। তাই সাংবাদিকতায় পড়তে চান।
কথা হলো সাহিত্য নিয়ে, উনি কবি সত্তা নাকি বহন করে, যদিও আমি কবি সত্তা দেখেনি। আর আমার কোনো ধরণাই নেই কবি বা লেখক সত্তা কেমন হয়।
প্রথমেই ওনাকে আমি অন্য পাঁচটা মেয়ের মতই ভেবেছিলাম। এইটা ও ঠিক করে নিয়ে ছিলাম সস্তা কবিদের কয়েকটা লাইন বলে,অবাক করে দিব। কিন্তু সেই আমাকে অবাক করে দিলো রহস্যের জালে পেঁচিয়ে।
সাহিত্য নিয়ে কথা বলতে বলতে চলে এলাম উপন্যাস, গল্প এবং সিনেমার দিকে। কথা হলো জহির রায়হান কে নিয়ে। উনি নাকি চিনেই না জহির রায়হান কে? বেশ কয়েকটি উপন্যাস উল্লেখ করে জহির রায়হানের পরিচয় দিলাম ওনার কাছে। তবে আমার মনে একটা চাপা আনন্দ কাজ করছে। কেন জানেন, ওনাকে জহির রায়হানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নয়।বরং রহস্যময়ী ভাবটা যাতে আরো বাড়ায় তাই।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস উনি জহির রায়হানকে চিনে। কেননা জহির রায়হান উপন্যাসিক আবার চলচিত্র প্রযোজক। আর যে মেয়ে ফিল্মস নিয়ে পড়াশুনা করতে ইচ্ছুক সে কিনা জহির রায়হানের নাম জানবে না তা ঠিক মানা যাচ্ছে না।
লেখাঃ September 2020
তারপর বাতজিত কি এগুলো নাকি জহির রায়হান পর্যন্তই শেষ?
@steemitwork জহির রায়হান পর্যন্তই শেষ, বাকি অংশটা লেখা হয়নি।