মায়ের কথা শুনে আমি থরথর করে কাঁপতে লাগলাম। ছোটবেলা থেকেই মা যখন যা বলেছেন এক বাক্যে বিশ্বাস করেছি।আর ঠকিওনি কখনো।তাই মায়ের কথায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলো না।এমনকি এটাও ভাবলাম না যে মা ভুল দেখেছেন বা হ্যালুসিনেট করেছেন! আমি বেশ ভীতু প্রকৃতির।একা একা ঘুমানোর অভ্যাস করতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো।তাও বুঝি আজ গেলো।মা জানেন । তবুও আমাকে সব বললেন।কারন তিন ভাই বোনের মধ্যে বাকি দুজন ছেলে বিধায় আমাকে মা সবকিছু বলতে একটু বেশিই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।
পেছন থেকে দীপু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো। সামনে এসে বলল, এতোকিছু হয়ে গেলো আমাকে বললে না কেন মা? আমাকে কেন জাগালে না তুমি?
ও হঠাৎ আসাতে আমি বিষম খেলাম।দীপুকে দেখে মনে হচ্ছিলো ও বেশ মজা পেয়েছে বিষয়টাতে। স্বভাবে ও একদম আমার বিপরীত। ভীষণ সাহসী।ছোটবেলায় কোথা থেকে যেন সাপ ধরে নিয়ে এসে আমার পেছন পেছন দৌঁড়াতে। ভয়ে আমি প্রায় হুশ হারাতাম।এবারো বুঝলাম ও হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবেনা।
দীপু বলল, কোন সে লাল চোখ ওর ভংগিমা আমি বের করবো।
আমি বললাম, এবার কি প্রেতাত্মার সাথে লড়বি।
দীপু বেশ আত্মবিশ্বাসের স্বরে বলল, প্রেত ও নয় আত্মাও নয়।নিশ্চয়ই জেনে বুঝে কেউ মা কে ভয় দেখিয়েছে।
ওর কথায় আশ্বাস পেতে চাইলেও পেলাম না। দীপু ঠিক করলো আজ মধ্যরাতে ও জেগে থাকবে।আর থাকলোও।সারারাত না ঘুমিয়ে ও বাথরুমের আশেপাশে ঘুরঘুর করলো।আমি টের পেলাম।সকালে জিগেস করলে ও বলল কিছুই নাকি দেখেনি।
এরপর অনেকদিন পেরিয়ে গেলো।সবকিছু স্বাভাবিক প্রায়।মা যদিও এখন রাতে উঠে বাথরুমে যান না।তার ঠিক এক সপ্তাহ পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। মা প্রায় এক সপ্তাহ পর স্বাভাবিক হতে পেরেছিলেন।দীপু রাতে হঠাৎ এক রাতে আমার ঘরে এসে বলল, তুই আজ রাতে বাথরুমে যাবি।
আমি বললাম, পারবোনা।
দীপু বলল, কিচ্ছু হবেনা! আমি তোর পেছনেই কোথাও লুকিয়ে থাকবো। কিচ্ছু দেখবিনা। গিয়ে তো দেখ তুই।
আমি ওর কথা বিশ্বাস করলাম না।
ও বলল, যদি কিছু দেখে ভয় পাস তাহলে তুই যা বলবি আমি তাই করবো।
এবার আমার কেন যেন কিছুটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো।কারন খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী না হলে ও একথা বলেনা।
রাতে আমি দোয়া দরূদ পড়ে ভয়ে ভয়ে বাথরুমে গেলাম। কিছুই দেখলাম না।দীপুর কথাই ঠিক হলো।সকালে ও বললো, বলেছিলাম না কিছুই দেখবিনা!
আমি বললাম, হুম ঠিক বলেছিস।
দীপু বললো, তার মানে তুই সত্যিই কিছু দেখিসনি?
আমি দ্বিগুণ অবাক হয়ে বললাম, বাঁদর কোথাকার তার মানে তুই আমার পেছনে ছিলিনা!
দীপু আমার কথা পাত্তা না দিয়ে বলল, আপু আমি একটা পরীক্ষা করছিলাম।
কি পরীক্ষা জিগেস করলাম আমি।ও বলল, মা পরপর দুবার একই জিনিস দেখেছে।তার মানে ভুল দেখেনি। কিন্তু আমি বা তুই কেউই একই সময়ে গিয়েও কিচ্ছু দেখিনি। দুজন থাকলে হয়তো দেখা দেবেনা ভেবে আমি গতরাতে ঘুমিয়েই ছিলাম।তুই যাতে ভয় না পাস তাই বলেছি তোর পেছনে থাকবো।কিন্তু তুইও কিছু দেখিসনি! তার মানে কি বুঝতে পারছিস?
আমি বললাম, কি?
দীপু বলল, ওই লাল চোখগুলো শুধু মাকেই দেখা দেয়!
আমি অবাক হলাম! বললাম, কেন? এর পেছনে কি কারন থাকতে পারে?
দীপু বলল, জানিনা।তবে মনে হচ্ছে জানবো। তার জন্য একটা কাজ করতে হবে!
আমি জানতে চাইলাম, কি কাজ?
বড় ভাইয়া কে যেভাবেই হোক মধ্যরাতে বাথরুমে নিতে হবে! আর তাতে তুই আমাকে সাহায্য করবি।
আমি বললাম, কেন? বড় ভাইয়াকেই কেন? কি করতে চাইছিস তুই?
দীপু বললো পরে সব জানাবে।আমি ওকে সাহায্য করতে রাজী হলাম। সন্ধ্যায় ভাবি বসার ঘরে টেলিভিশন দেখছিলো। আর ভাইয়া ছিলো অফিসে। দীপু আমাকে বললো, বসার ঘরে গিয়ে দাঁড়া। আমি ভাইয়ার ঘরে যাচ্ছি। বাথরুমের পানির নলটা নষ্ট করে দেবো। ভাবিকে পাহাড়া দে।এদিকটায় আসতে চাইলেই কৌশলে আটকানোর চেষ্টা করবি। যদি না পারিস তবে জোড়ে আওয়াজ করে আমাকে সংকেত দিবি।
আমি দীপুর কথামতো শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর কিছুই করতে হলোনা। দীপু কলটা মুচড়ে ভেংগে বাথরুমেই ফেলে এলো। আসার পর জিগেস করলাম, যদি সন্দেহ করে যে এমন করে কিভাবে ভেংগে গেলো? আমরা কেউ গিয়েছিলাম কিনা?
দীপু বলল, করুক! তবু আজ আর নিজেদের বাথরুমে যেতে পারবে না যেতে হলে লোকালটাতেই যেতে হবে।
ভাইয়া ফিরলো সাড়ে নয়টা করে। ভাগ্যিস ততক্ষণে ভাবির একবারো বাথরুমে যাওয়া হয়নি। ফিরে ভাইয়া বাথরুমের এই হাল দেখে কাওকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেই লোকাল বাথরুমেই গোসল সাড়লো। এখন কথা হলো, ভাইয়া যদি রাতে উঠে বাথরুমে না যায় কাল তো ওদের ঘরের বাথরুমের কল মেরামত করেই ফেলবে।টেনশনেই রাত কাটছিলো।দীপু আমার ঘরে ছিলো! জেগে ছিলাম দুজনেই। কিন্তু ভাইয়া উঠছিলো না। আশা ছেড়েই দিচ্ছিলাম আমি আর দীপু। আমি দীপুকে বললাম, যা ঘরে যা। ঘুমো গিয়ে!
দীপু গেলো না। আমি ঘুমের ঘোরেই চলে গিয়েছিলাম প্রায় তখনই ভাইয়ার চিতকার শুনতে পেলাম। ধুরমুর করে উঠে পড়লাম।দীপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে!
আমি উঠে দৌঁড়ে গেলাম দীপু আমার ঘরেই শুয়ে পড়লো! আমি অবাক হয়েও কিছু বললাম না।যেয়ে দেখলাম ভাইয়া মেঝেতে পড়ে আছে। মুখ থেকে তার সাদা ফেনার মতো বেরিয়ে যাচ্ছে।ততক্ষণে সবাই উঠে এসেছে! আমি ভাইয়া বলে চিতকার করলাম। তা শুনে বোধহয় ভাবি উঠে এলেন!মা এসে গগনবিদারী কান্নায় ভেংগে পড়লেন। সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে লাগলো আমার কাছে। বাবা ডাক্তার ডাকলেন। ডাক্তার এসে পালস চেক করলেন। কিছুখন বুকে হাত দিয়ে রাখলেন। আর তারপর!
তারপর বললেন, উনি আর নেই!
ভালো লিখেছেন👌
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
Bhalo likhechen... Next part er opekkhay achi...
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য। খুব তারাতাড়ি পেয়ে যাবেন আশা করি।
Congratulations @troublemakerrr! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Nice story .
Thank you so much.
Hi @troublemakerrr, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @linco!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON