নতুন লেখকদের লেখা পড়ার অভিজ্ঞতা আমার খুব একটা ভালো না। তারপরেও নিয়াজ মেহেদী, যিনি বেশ কিছু বই লিখে আলোচিত হয়েছেন, তার সেসব বই না পড়ে, কেন এই বইটি অনেকদিন ধরে গুডরিডসে আমার to read তালিকায় ঠাঁই পেয়েছিলো, তা বুঝতে পারবেন ফ্ল্যাপের লেখা কথাটুকু পড়েই।
বাংলা সাহিত্যের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) শব্দজব্দ এর আবির্ভাবের পর এই হলো মিডিয়ার মত। ঝড়ের মতো এক-একটা বই লিখছে শব্দজব্দ। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর চাইতেও আগ্রাসী হয়ে দখল করছে পাঠকের হৃদয়। হাজার বছর ধরে যে মানুষ তিল তিল করে বাংলা সাহিত্যকে গড়ে তুলেছে, তারা কি তবে বাতিলের খাতায় নাম লেখাবে? তরুণদের কলমে আর লেখা হবে না বাংলা বই? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ঘর ছাড়ে ইমরান। লিখে এআইকে পর্যুদস্ত করবে, এটাই তার পণ। আজিজ মার্কেটের তেরোতলায় পাওয়া গেল নকশালবাদী তিন তরুণের লাশ। ইন্সপেক্টর খোরশেদ ক্রাইমসিনে আবিষ্কার করলো আশ্চর্য এক ক্রসওয়ার্ড পাজল। যা মেলালে হাড় হিম করা কয়েকটি শব্দ বেরিয়ে আসে। মিডিয়ার দাবি, এগুলো এআইয়ের বিরুদ্ধে ছেলেদের প্রতিবাদ।
ইন্সপেক্টর খোরশেদ অবশ্য এখনই উপসংহার টানতে নারাজ। সে নিশ্চিত, কোথাও একটা গড়বড় আছে।
জি, এই লেখাটুকুর কারণেই আমার এই বইটি পড়ার আগ্রহ জন্মায়। সবচেয়ে মজার বিষয় এই বই কবে to read এ যোগ করেছি সেটাও মনে ছিলো না, এমনকি এই ছোট অংশটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম স্মৃতি থেকে। কিন্তু গতবছরের শেষের দিকে যখন রকমারিতে বেশ বড় ছাড দিলো, তখন কেন যেন হঠাৎ মনে পড়লো এরকম একটা বই আমি কোথায় যেন দেখেছি, পড়বো ভেবে রেখেছি। ভুল লেখকদের খুঁজেছি। যাইহোক অবশেষে খুঁজে পেয়েছি।
নানা ব্যস্ততা, মোবাইল নামক ডিস্ট্রাকশন, নানান ঝামেলা পার করে অবশেষে গত ২৮-২৯ মে তে পড়ে ফেললাম এই বই।
লেখকের লেখার হাত চমৎকার। ঝরঝরে, সাবলীল লেখনী। এআই এর বিরুদ্ধে এমন লেখকদেরই দরকার। লেখকের অন্য লেখাগুলো পড়ার আগ্রহ জন্মেছে। এখানেই তো লেখকের সার্থকতা।
কাহিনী শুরু হয় ইমরানকে দিয়ে। লিখবে কিন্তু রাইটার্স ব্লকে আটকে আছে সে। সিদ্ধান্ত নেয় তার প্রিয় লেখকের সান্নিধ্য নেবে, উপদেশ নেবে। যদিও সে লেখক বিখ্যাত হবার পর লেখালিখি ছেড়ে দিয়ে খেত খামারে মজেছেন। ইমরানের লেখার আগ্রহের কারণ রেডিয়েন্ট প্রকাশনীর কর্ণধার ঘোষণা দিয়েছেন একটি গল্প প্রতিযোগিতা হবে এআই এবং মানুষের মাঝে, যদি মানুষ জিতে যায় তবে রেডিয়েন্ট প্রকাশনী এআই দিয়ে বই ছাপানো বন্ধ করে দেবে।
এর মাঝেই আমরা জানতে পারি রেডিয়েন্ট পাবলিকেশনের কথা। শব্দজব্দ এর মাধ্যমে বই লিখে সমালোচনা সত্ত্বেও কলকাতা আর বাংলার পাঠকমহলের অন্দরমহল দখল করে নিয়েছে। যার ফলে অন্য প্রকাশনীগুলো নতুন লেখকদের লেখা ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি তারা সাহিত্য বাদ দিয়ে গাইড ছাপানো শুরু করেছে।
এরপর দেখা পাই ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের ইন্সপেক্টর খোরশেদের। আরো অনেক কেসের পাশাপাশি তিন তরুণের মৃত্যুর কেসও তার হাতে। সে ওখানে ক্লু পায় যে তারা নব্য নকশালপন্থী এবং আরো কিছু পায় যাতে মনে হয় খুব সহজ নয় এ মামলা।
আরসালান ইব্রাহিম, রেডিয়েন্ট পাবলিকেশনের কর্ণধার সম্পর্কেও জানতে পারি। তার অতীত সম্পর্কেও কিছুটা তথ্য আমরা পাই।
এরকম সমান্তরালে চলতে থাকে কয়েকটি কাহিনী। ক্রমান্বয়ে এগুতে এগুতে আমরা আরো বিস্তারিত পরিচয় পাই ইমরানের, তার প্রিয় লেখকের। জানতে পাই ধাঁধার থেকেও জটিল এর কথা।
শেষ পর্যন্ত সব সুতো মিলে যায়। সমাধান হয়ে যায় খুনের। জানা যায় নব্য নকশালবাদের সম্পর্কে। জানা যায় শব্দজব্দ এর বিস্তারিতও।
শেষের যে টুইস্ট সেটা কোনোমতেই আশা করি নি। তবে কিনা বইয়ের নেগেটিভ পয়েন্টও অন্তত আমার কাছে। এই কাজটা না করলে লেখক কিভাবে মিলাতেন তাও বুঝতে পারছি না যদিও।
Reveal spoiler
শব্দজব্দ আসলে ভুয়া! অথচ পেসিমিস্ট আমি ঠিকই বিশ্বাস করি এমন কিছু আসবে মানুষকে শেষ করতে।
অনেক চরিত্র বইটিতে। অনেক চরিত্রকে অনেক যত্ন নিয়ে বড় করা হয়েছে। কিন্তু মূল কাহিনীতে সেসব চরিত্রের ভূমিকা যে আসলে কী তা আমার বোধগম্য হয় নি। যেভাবে শেষ হয়েছে তাতে করে সিক্যুয়েল বের করতে চাইলে করতেই পারেন লেখক।
কিন্তু সব মিলিয়ে যদি বলা হয়, যথেষ্ট ভালো বই। এক বসায় পড়ে ফেলা যাবে। তবে এমন না যে না পড়লে খুব বড় মিস হয়ে যাবে।
রিভিউ দেখে পড়িবার সাধ হচ্ছে! আমি এই লেখকের দুইটা বই এবার পড়লাম। আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল সিরিজ। ভাল লিখেছে বলতে হবে! রিভিউ লেখা উচিত, লেখবো লেখবো করে দেয়া হচ্ছে না।
আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল আমারও পড়ার ইচ্ছা আছে। লিখে ফেলেন রিভিউ 😅
Congratulations @walindo! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 1000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out our last posts: