একটি থিসিস কিভাবে লিখা উচিৎ?: কিছু পরামর্শ
থিসিস লিখার সময় আমার ছাত্ররা জিজ্ঞেস করে, ‘স্যার, থিসিস এর কোন চ্যাপ্টার প্রথমে লিখবো, শেষে কি লিখবো?’ এই প্রশ্নগুলোর সার্বজনীন কোন উত্তর নেই। আমি তাদেরকে বলি, এক জীবনে একটি ডিগ্রীর জন্য একটাই থিসিস লিখবে, কাজেই এমন ভাবে লিখবে যেন শেষ বয়সে নিজের থিসিসটা হাতে নিয়ে নিজেই গর্ব করতে পারো। একটি থিসিস কয়েকটি ছোট গল্পের সমাহার নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস, কাজেই যেভাবেই লিখো না কেন, একটি প্যারাগ্রাফের সাথে অন্য প্যারাগ্রাফের, আগের চ্যাপ্টারের সাথে পরের চ্যাপ্টারের সংযোগ থাকাটা অত্যাবশ্যকীয়।
সাধারণভাবে মাস্টার্স লেভেলের একটি থিসিস এর পাঁচটি চ্যাপ্টার থাকে, পিএইচডি লেভেলে সাতটির মতো। প্রথম চ্যাপ্টার ইনট্রডাকশন এবং এই চ্যাপ্টারটি থিসিসের প্রাণ। একটি থিসিসের পুরো অবজ্যাকটিভ খুব অল্প কথায় এইখানে লিখা হয় এবং পুরো থিসিস এ কি আছে এই চ্যাপ্টারে তা খুব চমৎকারভাবে ডেসক্রাইব করা হয়। সুতরাং আমার মতে ইনট্রডাকশন এর আরটিকুলেসন সবচেয়ে কঠিন, তাই শেষের দিকে ইনট্রডাকশন লিখতে আমি তাদের পরামর্শ দেই। দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে মূলত থাকে কিছু ট্যাক্স এবং লিটারেচার রিভিউ। এই চ্যাপ্টারটি খুব সতর্কভাবে লিখতে হয়, টেক্সট যেন অবশ্যই থিসিসের বিষয়ের সাথে রিলেটেড হয়, অপ্রাসঙ্গিক টেক্সট সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। টেক্সট লিখার সময় অনেক সময় স্কিমেটিক ডায়াগ্রাম ড্র করতে হয়, এইসব ডায়াগ্রাম নিজের ড্র করা উচিৎ, অন্য অথরের ডায়াগ্রাম কপি করে দিয়ে দেয়া খুবই অন্যায়। লিটারেচার রিভিউ সময় নিয়ে করতে হয় এবং রেফেরেন্স পেপারের জার্নালের মান, যে গ্রুপ থেকে কাজটি করা হয়েছে তাঁরা কতটা রিলায়েবল এটি মাথায় রাখতে হয়। এবং অবশ্যই প্রকাশিত কাজের অর্ডার ঠিক রেখে রিভিউ ওয়ার্ক করতে হয় ।
থার্ড চ্যাপ্টারে, রিসার্চ মেথোডলজি লিখা হয়, এক্সপেরিমেন্টাল কাজ হলে স্যাম্পল প্রিপারেসন, এক্সপেরিমেন্টাল টেকনিক ইত্যাদি ডেসক্রাইব করা হয়। প্রথমেই বলে নেই, যে কোন গবেষণার জন্য অনেক ধরণের পরীক্ষিত টেকনিক থাকে, কিন্তু এইখানে যে টেকনিক তুমি তোমার কাজে ঠিক যেভাবে ব্যবহার করেছ ঠিক ওইভাবে তুলে ধরতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি Transmission Electron Microscope এর অনেকগুলো মুড থাকে, তোমার কাজের জন্য তুমি যে মুড ব্যবহার করেছ ওইটাই তোমার কাজের প্রসঙ্গ টেনে এইখানে ডেসক্রাইব করা উচিৎ। টেকনিকগুলো ডেসক্রাইব করার সময় উদাহরণ হিসেবে নিজের গবেষণার কোন উদাহরণ দিয়ে তা বিস্তারিত কোথায় কোন সেকশনে, কোন চ্যাপ্টারে আছে সেটা উল্লেখ করে একটি সংযোগ তৈরি করে দিতে হয়। তখন একজন রিডার এই সব টেকনিক্যাল ডেসক্রিপশন পড়েও তখন এক ধরণের শান্তি অনুভব করতে পারে। রসকষহীন টেকনিক্যাল বিষয়গুলি পড়তে এই শান্তি পাওয়াটা বিশেষ জরুরী।
এইবার আসি মূল চ্যাপ্টারে অর্থাৎ রেজাল্ট অ্যান্ড ডিসকাশন চ্যাপ্টার। মাস্টার্স লেভেলের থিসিস হলে রেজাল্ট অ্যান্ড ডিসকাশন লিখতে একটি চ্যাপ্টারই যথেষ্ট, পিএইচডি থিসিস হলে অন্তত তিনটি চ্যাপ্টার থাকতে পারে, তবে এইখানে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই। রেজাল্ট লিখতে গবেষণার অর্ডার ঠিক রাখতে হবে, একটি সাব-কন্টেন্ট এর সাথে অন্য সাব-কন্টেন্ট এর সংযোগ রাখতে হবে, অন্যথায় এটি খুব নিম্ন মানের থিসিস হবে। অনেক সময় আমরা নিজের রেজাল্ট সাপোর্ট করতে গিয়ে লিখি -------------as was also reported in Ref. [xx]। এইভাবে লিখা উচিৎ না, ঐ পাটিকুলার রেফারেন্সে কি স্যাম্পল ছিল, কি টেকনিক ফলো করা হয়েছিল, বিশেষ কোন প্যারামিটার যদি থাকে সেটা কি ছিল, তোমার প্যারামিটার এর সাথে মিল ছিল কি না এই বিষয়গুলো খুব অল্প কথায় উল্লেখ করে রেফারেন্স পেপারের সাপোর্ট নিতে হবে, অন্যথায় রিডার মিস-গাইডেড হতে পারে। আগে যেভাবে বলেছি, সকল রেফারেন্স পেপার মান সম্পন্ন কি না তা সব সময় মাথায় রাখতে হবে, নিম্ন মানের পেপার কখনোই সাইট করা উচিৎ না। আর রেজাল্ট অ্যান্ড ডিসকাশন একাধিক চ্যাপ্টার হলে প্রথম চ্যাপ্টারের সাথে পরের চ্যাপ্টারের লিঙ্ক তৈরি করেই পরের চ্যাপ্টার শুরু করতে হবে যেহেতু এইটি একটি উপন্যাস।
থিসিসের কঙ্কলুসন (conclusion) আর এবসট্র্যাক্ট থিসিস শেষ হলেই লিখা উচিৎ, বিশেষ করে, থিসিস সাবমিশন এর ঠিক ২/১ দিন আগে সব কারেকশন শেষ হলে তখনই এবসট্র্যাক্ট লিখা উচিৎ। আর কঙ্কলুসন লিখতে গিয়ে অনেকেই সামারি লিখে ফেলে। ইচ্ছে করলে তুমি শেষ চ্যাপ্টারে একটি সাব-সেকশন দিয়ে শর্ট সামারি লিখতে পারো এবং তার পরেই কঙ্কলুসন লিখো। তোমার থিসিস এর বিশেষ বার্তা খুব সতর্কভাবে কঙ্কলুসন এ লিখা উচিৎ, যাতে একজন রিডার থিসিস টি পড়ে মনে করে, এটাই তো জানতে চেয়েছিলাম, আমার সময়টা বৃথা যায়নি, থিসিসের রেজাল্ট এই মেসেজটাকেই সাপোর্ট করে।
একজন গবেষকের জন্য মাস্টার্স, কিংবা পিএইচডি শেষ না, কেবল শুরু, তাই থিসিস এর শেষে একটি ফিউচার ওয়ার্ক প্ল্যান এর সাজেশন লিখতে হয়ে, এটা যেন লিখার খাতিরে লিখা না হয়।