ঈমানের পরিচয়ের মধ্যে বলা হয়েছে কতকগুলো বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং আমলে পরিনত করার সমষ্টি হল ঈমান। এ থেকে বোঝা গেল- ঈমানের কিছু বিষয় দিলের দ্বারা সম্পন্ন হয়, কিছু জবানের দ্বারা এবং কিছু হাত, পা ইত্যাদি বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা। এ সবগুলোকে ঈমানের শাখা বলা হয়। বড় বড় ইমামগণ হাদীছের ইঙ্গিত পেয়ে গবেষণা করে কুরআন-হাদীছ থেকে ঈমানের ৭৭টি শাখা নির্ণয় করেছেন। এর মধ্যে দিলের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৩০টি। জবানের দ্বারা সম্পন্ন হয় ০৭টি আর বাহ্যিক অঙ্গ-প্রতঙ্গের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৪০টি। আমলের সুবধার জন্য সংক্ষেপে সবগুলোর বর্ণনা পেশ করা হলঃ
দিলের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ-
আল্লাহর উপর ঈমান আনা।
আল্লাহ চিরন্তন ও চিরস্থায়ী, তিনি ব্যতিত সবকিছু তাঁর মাখলুক-একথা বিশ্বাস করা।
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা।
আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনা।
আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বরদের প্রতি ঈমান আনা।
তাকদীরের উপর ঈমান আনা।
কিয়ামতের উপর ঈমান আনা।
বেহেশতের উপর ঈমান আনা।
দোযখের উপর ঈমান আনা।
আল্লাহর সঙ্গে মহব্বত রাখা।
কারও সাথে আল্লাহর জন্যই মহব্বত রাখা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারও সাথে দুশমনী রাখা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মহব্বত রাখা।
এখলাস (অর্থাৎ, সব কিছু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা।)
তওবা অর্থাৎ, কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তা পরিত্যাগ করা এবং ভবিষ্যতে তা না করার জন্য সংকল্প করা।
আল্লাহকে ভয় করা।
আল্লাহর রহমতের আশা করা।
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া।
হায়া বা লজ্জা।
শোকর।
অঙ্গীকার রক্ষা করা।
ছবর।
বিনয় নম্রতা ও বড়দের প্রতি সম্মানবোধ।
স্নেহ-মমতা ও জীবের প্রতি দয়া।
তাকদীরের উপর তথা আল্লাহর ফয়সালার উপর রাজী থাকা।
তাওয়াককুল করা।
নিজেকে বড় এবং ভাল মনে না করা।
হিংসা বিদ্বেষ না রাখা।
রাগ না করা।
কারও অহিত চিন্তা না করা, কারও প্রতি কু-ধরণা না করা।
দুনিয়ার মহব্বত ত্যাগ করা।
বি:দ্র: 11 নং থেকে 30 নং পর্যন্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।
জবানের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ-
কালিমায়ে তাইয়্যেবা পড়া।
কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করা।
ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা।
ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া।
দুআ বা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা।
আল্লাহর যিকির।
বেহুদা কথা থেকে জবানকে হেফাজত করা।
বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ
পবিত্রতা হাছিল করা।
নামাযের পাবন্দী করা।
ছদকা, যাকাত, ফিতরা, দান-খয়রাত, মেহমানদারী ইত্যাদি।
রোজা।
হজ্জ।
এ’তেকাফ (শবে কদর তালাশ করা এর অন্তর্ভক্ত)।
হিজরত করা অর্থাৎ, দ্বীন ও ঈমান রক্ষার্থে দেশ-বাড়ি ত্যাগ করা।
মান্নত পুরা করা।
কছম করলে তা পূরণ করা আর কছম ভঙ্গ করলে তার কাফফারা দেয়া।
কোন কাফফারা থাকলে তা আদায় করা।
ছতর ঢেকে রাখা।
কুরবানী করা।
জানাযা ও তার যাবতীয় আনুষঙ্গিক কাজের ব্যবস্থা করা।
ঋণ পরিশোধ করা।
লেন-দেন ও কায়-কারবার সততার সাথে এবং জায়েয তরীকা মোতাবেক করা।
সত্য সাক্ষ্য প্রদান করা। সত্য জানলে তা গোপন না করা।
বিবাহের দ্বারা হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা।
পরিবার-পরিজনের হক আদায় ও চাকর-নওকরদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।
ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা।
আত্নীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
উপর ওয়ালার অনুগত হওয়া, যেমন চাকরের প্রভূভক্ত হওয়া
ন্যায় ও নিরপেক্ষভাবে বিচার করা।
মুসলমানদের জামা’আতের সাথে ও হক্কানী জামা’আতের সহযোগীতা করা, তাদের মত পথ ছেড়ে অন্যভাবে না চলা।
শরী’আত বিরোধী না হলে শাসনকর্তাদের অনুসরণ করা।
লোকদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ হলে তা মিটিয়ে দেয়া।
সৎ কাজে সাহায্য করা।
আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার করা তথা সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া।
জিহাদ করা। সীমান্ত রক্ষা করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
শরী’আত নির্ধারিত শাস্তি কায়েম করা।
আমানত আদায় করা। গনীমতের এক পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে জমা করা এর অন্তর্ভুক্ত।
অভাবগ্রস্তকে কর্জ দেয়া।
প্রতিবেশীর হক আদায় করা ও তাদেরকে সম্মান করা।
লোকদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
অর্থের সদ্ব্যবহার করা।
সালামের জওয়াব দেয়া ও সালাম প্রদান করা।
যে হাঁচি দিয়ে ‘আল হামদুলিল্লাহ’ পড়ে তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা।
পরের ক্ষতি না করা। কাউকে কোনরূপ কষ্ট না দেয়া।
খেল-তামাশা, ক্রীড়া-কৌতুক ও নাচ গান থেকে দূরে থাকা।
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দুর করা।