অনাগতা, উদভ্রান্তি!

in #letters6 years ago (edited)


অনাগতা,


এই অন্ধকার, প্রিয় অন্ধকার চারপাশে ঘিরে;  কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো আমাকে হুট করে একটা ধাক্কা দেয়, আমি নিজের ভেতর  হতে নিজে ছিটকে পড়তে থাকি, পড়তে থাকি নিচে; এই পতনের সময়টাতে একটা প্রজাপতি  এসে উড়তে থাকে চোখের সামনে। রং তার নীল, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে স্থির! আমি  বিস্ময় নিয়ে ভাবি, আমার পতনের গতি কত? কিভাবে এক জায়গা দাঁড়িয়ে আছে সে? নয়ত  এ আমার ভ্রমের ভেতর অন্য আর একটি ভ্রম; তাকে ভ্রম ভাবতেই সে সরে যেতে শুরু  করলো, অনাগতা, আমার তাকে থাকতে বলা উচিত। আরও একটু সময়। সে কথা বলতে পারে?  ভ্রম ভ্রম মনে হওয়া ভ্রমে হতে পারে যে কোন অসম্ভব কাজ, তোমার হাত ধরে কোন  এক সন্ধ্যেরাতে নদীর কিনারে বসে থাকার মতন। রাত হলে সে নদীর জল বাড়ে, পা  ছোঁয়। পা ভিজলে ভিজে আসে শরীর, ভিজতে থাকে মন। আকাশে বিঁধিয়ে রাখা চাঁদ,  পৃথিবী, ঈশ্বরের বুকের কোন এক গভীর প্রকোষ্ঠ। এই ছুঁয়ে যাওয়া জল, এই উড়তে  থাকা চুল; চুলের ঘ্রাণ - মাতাল মাতাল ভঙ্গিতে আমি হয়তো সেখান হতেও আছড়ে  পড়তে পারি সে নদীতে, সাঁতার জানি না বটে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে... আলো আমায়  ফেলে দিলো পাহাড় হতে; মাটিতে আছড়ে পড়তেই আমি আবারও ছিটকে বেরিয়ে এলাম ওই  ভ্রম ভ্রম শরীর কেটে - বুকের দুপাশ গেল ফেড়ে, বেরিয়ে এলাম নতুন আমি। পেছনে  পড়ে রইলো সাপের খোলসের মত আমার প্রোটিন আর লিপিড। শুধু আমি যেখানে উঠে  দাঁড়ালাম, পায়ের নিচের টুকুই ধুধু বালি দিয়ে ভরা আর এক পা যদি সামনে এগোই,  চোখ যদি রাখি এক পা দূরত্বে, সবুজ ঘাস দিয়ে ভরা এই পুরো প্রান্তর। দূরে  একটা গাছও আছে। দুঃখিত যে আমি ফুল না জানার মত, মাছ না জানার মত আমি চিনি  না গাছও, জানি না গাছের নাম। দেখাও যাচ্ছে না ঠিকঠাক। বেশ দূরে। আমার কি  এখনো এগোনো উচিত?

বাস্তবে আমি ডানে তাকালাম; পাশে সিফাত  চুপ করে শুয়ে, ডানে সরাসরি তার পা, তাকে ডিঙ্গিয়ে চার্জে থাকা লাল আলো চোখে  পড়তেই উঠে এলো গোধূলি! আমি সমুদ্র দেখি নি, তবু সমুদ্র মনে হয়। সমুদ্র মনে  হয়, সমুদ্র মনে হয় - একথা বিড়বিড় করে বলতেই দেখা গেলো জাহাজ, বোধহয় জলপাই  রঙের। চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে। এখানে বন্দর নেই কোন, তবু একটা নৌকা ভেড়ানোর  জন্য দুটো গাছ কেটে একটা ডেক বানাবো ভাবছি। পেছনে তাকাই, বন সামনেই অথচ এক  পা বাড়ালে চলে যাচ্ছে দশ পা দূরে। ধমক দিতে ইচ্ছে করে, এমন হবার কথা ছিল  সুন্দরবনের, পাঁচটে কারখানার অনুমতির জন্য একটা ইট গাড়তে এলে ছুটে যেতে হবে  সাগরের মধ্যিখানে। তুই কেন যাচ্ছিস দূরে?

বামে, শক্ত  দেয়াল। চোখ ভেদ করতে পারে না, মাথা ঠেকাতেই চোখ জানান দিচ্ছে রাজ্যের  ক্লান্তি। অনাগতা, আহ, অনাগতা, ক্লান্তি। তুমি বসে বসে ছবি আঁকছো মনে  হচ্ছে, আমাকে আঁকো। আঁকতে হবে এভাবে, দুটো সোজা রেখা। হুট করে তারা একে  ওপরকে স্পর্শ করবে জ্যান্ত হয়ে। এরপর, ওদের যা ইচ্ছে ওরা তাই করবে। ওদের  উপর ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থেকে দেখো, ওরা কি করে। দুষ্টামি না একদমই, কি  করতে পারে বলে মনে হয়? অথবা, তুমিই আঁকো। নিজের মতন করে, মনের মতন করে। আমি  এইসব আঁকাআঁকি একদমই বুঝি না ছাই। সত্য হল, আমি তাকায়ে থাকতে পারি,  চুপচাপ, অনেকক্ষণ। অকর্মণ্যতার লক্ষণ। এইমাত্র শাপশাপান্ত করলো কেউ।


তিন  জায়গায় তিনটে মুহূর্ত ছেড়ে দিলাম। ওদের যা ইচ্ছে, তাই করবে। অথবা, এগিয়ে  এসো, এই ধরো সুতো। ফিরতি উত্তরে লিখো, কে কি করলো, কে কি করছে - কি চাও  তুমি তোমার একলা জেগে থাকার রাতে? আমি ফিরে আসছি, বসে আছি জ্বলজ্বল করতে  থাকা স্ক্রিনের সামনে। একটা একটা করে এই শব্দটা এই শব্দটার দূরত্ব পার হয়ে  গেলো, বসে বসে এটাই দেখছি। অবাক লাগছে। দূরত্ব কতটুকু? দূরত্ব কতখানি?
তোমার আমার দূরত্ব, সময়।

মহাকাল, মহাদেশ। মহা মহা ইত্যাদি ইত্যাদি।


গান  গাও, আনন্দে বাঁচো। ছেড়ে দাও সকল চিন্তা, ছুঁড়ে মারো দুটো রেখা। দুটো  তারাকে গুলি করো ইজেল দিয়ে, একটা চাঁদকে টেনে এসে বসাও বারান্দার টুল  বরাবর। চা বানাও, চুপ করে বসে দিতে পারো ছোট্ট চুমুক।


আমি কি করবো?


আমি  এটাই বসে বসে ভাবছি। এবং আরও অনেক অনেকদিন ভাববো। সময় - দূরত্বের নাম। এই  দূরত্বটুকু শেষ হতে হতে উত্তর পেয়ে যাবো। ধেয়ে আসবে জল, ধেয়ে আসবে মাটি,  জলপাই জাহাজের জন্যও বানানো হয়ে যাবে ঘাটি। এটাই, এইটাই বসে বসে ভাবছি।