মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের মধ্যে ১৯তম এবং এভেঞ্জারস এর তৃতীয় কিস্তি। একই সাথে ইউনিভার্সের ১০ বছর পূর্তি। ফ্যানদের সকল প্রকার জল্পনা কল্পনা এবং প্রত্যাশার অবসান ঘটিয়ে গতকাল ওয়ার্ল্ডওয়াইড রিলিজ পেল এযাবৎ কালের সবচে হাইপ ওয়ালা মুভি। মুভির দায়িত্বে ছিলেন জো রুশো এবং এন্থনি রুশো ওরফে রুশো ব্রাদারস। এটা তাদের তৃতীয় এমসিইউ মুভি।
শুরুতেই যাকে নিয়ে বলতে হয় সে হচ্ছে ভিলেন বা মেইন এন্টাগনিস্ট থ্যানস। এতদিন বাদে এমসিইউ তে এমন একটা ভিলেনের আবির্ভাব ঘটলো যাকে দর্শক ফিল করবে। ভিলেন হলেও তার ইমোশনাল কিছু মোমেন্ট আছে যা দর্শকদের তার জন্য ফিলিংস আনতে বাধ্য করবে। থ্যানসরূপী জশ ব্রলিন খুবই ভালো কাজ করেছে। ভিএফএক্স ছিল দশে দশ। আগের দুটো এভেঞ্জারস মুভির একটা আক্ষেপ ইনফিনিটি ওয়ারে পুষিয়ে দিয়েছে। সেটা হচ্ছে ভিলেন একাই একাধিক সুপারহিরো কে একসাথে নাকানি চুবানি খাইয়েছে। তাছাড়া স্ক্রিন টাইম সে পেয়েছে সবচে বেশি। এটা এভেঞ্জারস এর মুভির চাইতে থ্যানসের মুভি বললে বেটার হয়।
মুভিতে এতো বেশি ক্যারেক্টারস যে সবার কথা আলাদা ভাবে বলা পসিবল না। তবে কিছু ক্যারেক্টারের ইউজেস অনেকটাই জোরপূর্বক ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যকার ইন্টার্যাকশন গুলো খুব সুন্দর ছিল। সবার কথা আলাদা একটু একটু করে বলতে গেলে স্পয়লার হবার চান্স আছে, তাই চেপে গেলাম।
মুভির একশন এবং ভিএফএক্স খুবই ভালো। যদিও এতো গুলো সুপারহিরো থাকাতে সবাইকে পুরোপুরি ইউজ করা যায় নি। তাও রুশো ব্রাদারস বরাবরই একশনে তাদের সিগনেচার স্টাইল ধরে রেখেছে। হাই ইন্টেন্সিটি উইথ গুড কোরিওগ্রাফি। তবে আগের চাইতে শেকি ক্যামের ইউজ বেশি লাগলো আমার কাছে। সুপারহিরো জন্রায় স্নাইডারের পর রুশো ব্রাদারস ই দেখলাম একশনে হাই ইন্টেন্স ক্রিয়েট করতে পারে এবং একটা ক্যারেক্টারের ষোল আনা বের করে আনে। পুরো মুভিটা একশন প্যাকড।
মুভির স্টোরির ব্যাপারে ঠিক বুঝতে পারছি না কি লিখবো। খুব আহামরি না। স্টোরির গভীরে যাওয়ার সময় পায়নি। অনেকটাই রাশড এবং একই সময়ে একাধিক ইভেন্টের সিন থাকাতে সেগুলোর ট্রাঞ্জিশন ফাস্ট ছিল। অনেক সময় এমন হয়েছে একটা সিন জোস নিয়ে দেখতে দেখতে হঠাত অন্য সিনে চলে যাওয়ায় কিছুটা ধাক্কা লাগে। এছাড়া
ট্রেইলারে দেখা বেশ কিছু সিন নেই। মুভির স্টারটিং এ দুটি অসামঞ্জস্যতা চোখে পড়েছে যা স্পয়লার যুক্ত। তবে সকল ফ্যান থিয়োরি, প্রেডিকশনের মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে। প্রচুর সারপ্রাইজ আছে। মরা বাচা নিয়ে কোন কথা হবে না। বললে চাকরি থাকবে না। আর ফিনিশিং এমন হয়েছে যে নেক্সটে কি হবে তা ধারনা করতে যাওয়ার চাইতে সাহিত্যে নোবেল পাওয়া সহজ হবে। অবশ্য আমি কমিক্স পড়ি নি তাই আমার কাছে তেমনটাই মনে হচ্ছে।
মার্ভেলের মুভি আর কমেডি থাকবে না তা কি হয়। রুশো ব্রাদারস এর আগের দুটো মুভির চাইতে এবার কমেডি বেশি দিয়েছে। আমি বরাবরই ফান আর সিরিয়াস মোমেন্ট এক সাথে দেখতে পছন্দ করি না। যদিও হলে দেখার সময় মজাই লাগে কিন্তু এগুলো মেমরিতে থাকে না। কারন সিরিয়াস বা ইমোশনাল মোমেন্ট এর রেশ একটা কমেডি সিন বা ডায়লগ মুহূর্তেই নষ্ট করে দেয়। ইনফিনিটি ওয়ারে আমি কমেডি বা ফান আরও কম আশা করেছিলাম। তাছাড়া এমসিইউতে রুশো ব্রাদারস ই তুলনামূলক ডার্ক টোনের মুভি বানিয়েছে। সেজন্য প্রত্যাশা ও বেশি ছিল।
পরিশেষে বলতে গেলে ইনফিনিটি ওয়ার অনেকটা এনিমেটেড মুভির মত। মানে এনিমেটেড মুভিতে কম সময়ে অনেক কিছু দেখানো যায় বা দেখানো হয় ঠিক তেমনি লাগে। এটা নেগেটিভ সাইড বলবো না। কিন্তু মুভিটা একটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে যে এতো ক্যারেক্টার একসাথে নিয়ে কি প্রপার মুভি বানানো পসিবল? উত্তর হবে “না”। সত্যি বলতে মুভিটা গ্রহন যোগ্যতা পাচ্ছে কারন এটা অল্রেডি প্রতিষ্ঠিত একটা ফ্রাঞ্চাইজির অংশ। ক্যারেক্টার গুলোর প্রতি আগে থেকেই সবার একটা আইডিয়া আছে যার জন্য এতো ক্যারেক্টার থাকা স্বত্বেও উৎরে যাচ্ছে।
ইনফিনিটি ওয়ার দশে দশ পাওয়ার মত মুভি না। সিভিল ওয়ারকে ছাড়াতে পারেনি। তাই বলে খারাপ না। অন্তত হলে দেখার জন্য খাপে খাপ। তাছাড়া অলমোস্ট সব সুপারহিরোকে এসাথে দেখতে পারাটাও আনন্দের। স্পয়লার নিয়ে যাদের ভয় তারা যত দ্রুত সম্ভব দেখে ফেলুন। নাহলে স্পয়লার খেয়ে ফেললে হলে যাওয়াটাই অর্ধেক মাটি হয়ে যাবে।
হ্যাপি ওয়াচিং!!!!!!
ভালো
ধন্যবাদ ভাই