প্রিয় ব্লগার ও পাঠক , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা । সবাই সুস্থ থাকবেন। সুস্থতা মহান আল্লাহ পাকের খাস নিয়ামত । সুস্থতা দীর্ঘজীবনের পথ প্রদর্শকও বটে।
আজকে আমি সবিনয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি বাংলাদেশর "পল্লীকবি জসিম উদ্দিন যাদুঘর" প্রসঙ্গে ।. পুরো নাম : মুহম্মদ জসিম উদ্দিন মোল্লা
ভুমিকা
"কবি জসিম উদ্দিন যাদুঘর" সম্পর্কে জানার পুর্বে, "কবি জসিম উদ্দিন" সম্পর্কে জানা আবশ্যক হয়ে যায় ।
নাম, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মোল্লা
জন্ম, ফরিদপুর জেলার তাম্বুল খানা গ্রামে।
জন্ম তারিখ, ১লা জানুয়ারি ১৯০৪ খৃষ্টাব্দ।
মৃত্যু, ১৪ই মার্চ ১৯৭৬ খৃষ্টাব্দ।
কবির পিতা মোহাম্মদ আনছার উদ্দিন মোল্লা ,একই জেলার গোবিন্দ পুর গ্রামের বাসিন্দা।
মায়ের নাম ছিল, মোছাম্মাৎ আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।
কবির মাজারটির অবস্থান ,একই জেলার, অম্বিকাপুর গ্রামে । কুমার নদীর পাড় ঘেঁষে যাদুঘরের ভিতরে। কবিকে তাঁর দাদীর কবরের পার্শে কবর দেওয়া হয়।
বিবাহ বন্ধন
১৯৪৩ সালে অত্র এলাকার জনৈক মহসিন উদ্দিনের মেয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রী মমতাজ বেগম ওরফে মনিমালা'র সহিত কবি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
শিক্ষাজীবন-
জসীমউদ্দিন ১৯২১ খৃষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা ও ১৯২৪ রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় পাশ করেন।
পরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ ১৯২৯ সালে ও এম এ ১৯৩১ সালে পাশ করে ।
১৯৬৯ সালে ভারতের রবিন্দ্র ভারতি বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সন্মান সুচক ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করে
কবি জসিম উদ্দিন শিক্ষা জীবন শেষ করে, ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড.দীনেশ চন্দ্র সেনের অধিনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা কার্যক্রমের, সহকারী গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন ।
কর্মজীবন
সেখান থেকে ফিরে এসে ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরবাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন । ১৯৪৪ সালে তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে যোগ দিয়া ১৯৬২ সালে ডেপুটি ডিরেক্টর পদে থেকে তিনি অবসর গ্রহণ
কবি জসিম উদ্দিন ছিলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধের প্রগতিশীল কবি। তিনি একাধারে সৃজনশীল লেখক, গিতিকার ও ঔপন্যাসিক ছিলেন। কবি জসিম উদ্দিন ,আবহমান বাংলার অপরুপকে বৈচিত্র্যময় করে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিখুঁত ভাবে ফুটে তুলেছিলেন। একারনে তাঁকে পল্লীকবি উপাধিতে ভুষিত করা হয়েছিল। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন বাংলা সংস্কৃতির সকল শাখায় তাঁর কৃতিত্বের ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে লিখে গেছেন । তার লেখনিতে পাওয়া যায় কাব্যগ্রন্থ , নাটক,উপন্যাস, আত্মকথা ,ভ্রমণ কাহিনী ,সঙ্গিত, জারিগান মুর্শিদি গান হাসিব নাটক পল্লিগীতি ভাটিয়ালী ইত্যাদি ।
কাব্যময় জীবন
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ "সোজন বাদিয়ার ঘাট" ও "নকশি কাঁথার মাঠ" । জসিম উদ্দিন রচিত "কবর" কবিতাটি পাঠে, যে কোন মানুষের জীবনে সুখ,দূঃখ, হাসি ও কান্নায় আলোড়িত করে। এ কবিতার কারনে তিনি বাঙ্গালী হৃদয়ে অনেক আগেই কবি হিসেবে ঠাঁই পেয়েছিলেন।
পুরস্কার সমুহ
১৯৫৯ সালে ততকালীন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া, এডওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরমেন্স। # ১৯৬৯ সালে ভারতের , রাবিন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট ডিগ্রি প্রাপ্ত হন।
১৯৭৪ সালে ,স্বদেশের বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের, একুশে পদক প্রাপ্ত হয়। ও
১৯৭৮ সালে কবিকে মরণোত্তর, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
আমি যখন নতুন সংগ্রহশালায়
অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা
বন্ধুগন
যাদুঘর সম্পর্কে লেখার পুর্বে, অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা, এ প্রসঙ্গে না লেখা হলে লেখাটি পুর্নতা পাবেনা ভেবে আমি সংকিত হইতেছি ।
আমার বড় ছেলে "ডাঃ শাওন" পেশাগত কারনে কুষ্টিয়া থেকে ফরিদপুরে চলে যায়। প্রয়োজন পড়ে বাসাবাড়ির মালামাল নিয়ে সেখানে যাওয়ার। এই কাজটি করার জন্য আমিও ঢাকা থেকে প্রথমে কুষ্টিয়া চলে যাই । সেখানে ডাক্তারদের কোয়াটারে রক্ষিত
বাসাবাড়ির মালামাল সমুহ ট্রাকে ভরে কুষ্টিয়া থেকে ফরিদপুর সহরের পথে বিকাল চারটায় রওয়ানা করি। এসময় সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাস করা আমার ছোট ছেলে "শোভন" আমার সাথেই ছিল।
কবির ব্যবহারি
ঐ দিন রাত বারোটার দিকে ফরিদপুর সহরের ভাড়া বাসায় মালামাল নামাইয়া নেওয়া হয় । রাত দুইটার দিকে সহরের অদুরে "পশ্চিম আলিপুরে" বিয়াই"সাহেবের (ছেলের শ্বশুর) বাড়ির দিকে রিকশা যোগে রওয়ানা করি । রাত আড়াইটার দিকে সেখানে উপস্থিত হই।
সেখানে দুই রাত ও একদিন আতিথেয়তার স্বাদ গ্রহণ করিলাম।
সারা দিন একা একা ঘরের ভিতর বসে থাকতে আমার মোটেই ভাল লাগছিলো না।
এখানে কোন জনপ্রানির সাথে দেখা হয়না। বাড়ির লোকজনের সাথে শুধুমাত্র খাবার টেবিলে ১০-১৫ মিনিটের জন্য দেথা ও কথা হয় ।
পরদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার পর ভাবলাম ,বিয়াই সাহেবকে এক কাপ কফি খাওয়াইয়া, ছেলের সেই সহরের ভাড়া বাসায় চলে যাবো ।
কবর
বাড়ির গেট পেরিয়ে রাস্তায় বের হতেই বিয়াই সাহেবের সাথে দেখা । আমি তাঁকে বাহিরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালে, তিনি রাজি হয়ে যান। আমাকে নিয়ে রিকশায় রওয়ানা দেওয়া হলো। প্রায় পাঁচ-সাত মিনিট চলার পর রিকসা এক জায়গায় থেমে গেল । এতক্ষণে বুঝতে অশুবিধা হলনা যে, এটা "পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের বাড়ি" এবং এখন যাহা "জসীম উদ্দিন যাদুঘর"।
বিয়াই সাহেবের বাড়ির পাশেই এ যাদুঘর তা আমার জানা ছিলনা। মনে মনে ভাবলাম ,যাক আমার বহু দিনের একটি আশা পুরন হবে আজ।
কবর
যাদুঘরে প্রবেশের প্রাক্কালে রিকশা থেকে নেমে, যাদুঘর গেটের দিকে তাকাতেই, ডান পিলারের সঙ্গে লাগানো, কবি জসীম উদ্দিনের প্রতিকৃতি সহ নাম ফলক দেখা যায়। তাতে খোদাই করে লেখা আছে জন্ম, ১লা জানুয়ারি ১০০৪ খৃষ্টাব্দ ও মৃত্যু, ১৪ই মার্চ১৯৭৬ খৃষ্টাব্দ ।
নাম ফলকের সামনে দাড়াইয়া মোবাইল ক্যামেরা রেডি করার সময়, বিয়াই সাহেব বলে উঠলেন, "এসেই ছবি উঠাচ্ছেন, আপনি এত শৌখিন লোক আগে বুঝতেই পারছিলাম না"। আমি বললাম " সুযোগ যখন হয়েছে দুই একটা(ছবি) উঠাইনা। তবে সমস্যা হল মোবাইল সেটটা আমার কমদামী, ছবি যে কেমন আসে"।
আমি ও বিয়াই সাহেব (পিছনে)
বিয়াই সাহেব বললো"আমারটা স্যামসাং, ছবি ভালোই হয়"। এতক্ষণে আমার ছবি উঠানো শেষ। এবার বিয়াই সাহেবের সাথে একটি ছবি উঠানোর শখ হলে, প্রথমে তিনি অসম্মতি ভাব প্রকাশ করলেন। পরে তাঁর সাথে আমি একটি ছবি তুলব বললে, তিনি একটু আগাইয়া আসলেন। এবার তিনি আমার পিছনে দাড়ালে,তার একটি ছবি কোন রকমে উঠাইয়া নেই এখানকার ফটোসেসন এখনকার মত ইতি টানা হইল। এমন সময় বিয়াই সাহেব তাঁর মোবাইল সেটটি ছবি তোলার উদ্দেশ্যে আমার হাতে দিলে কয়েকটি একক ছবি (বিয়াই সাহেবের)তার মোবাইলে ধারন করিলাম। এসময় তিনি বললেন , "আপনার বিয়াইন সাহেবা (ছেলের শ্বাশুড়ী) ছবি পছন্দ করবে তো"? আমি কিছু না বলে চুপ থাকলাম
যাদুঘরের প্রবেশ পথটি তৈরি করা হয়েছে বাঁশের তৈরি বাতা দিয়া । সাজানো হয়েছে, একটি লাঙ্গল, কাঠের তৈরি পুঁথির মালা,পাটের রশি, মাথল, শিঁকায় লটকানো কলসি ও গ্রামীন ইতি-আদি দিয়া। যা সহরের মানুষকে আকৃষ্ট করতে খুবই উপযোগী বলে, আমার কাছে মনে হল
যাদুঘরে প্রবেশ
জাদুঘরটি মূলত কবির পুরো বাসভবন এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। যাদু ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই হাতের বামে একটি ফাস্টফুডের দোকান থেকে যাদুঘরের প্রবেশাধিকারের টিকিট দেওয়া হয়। বিয়াই সাহেব এ পাড়ার বাসিন্দা হওয়ায় তার টিকিটের প্রয়োজন হলনা। দোকানের সাথে আরেকটি ছোট ঘরে দেয়ালে আটকানো কিছু ফটো দেখা যায়। সেখানে কবি পরিবারের ছবি ছাড়াও কবির আত্মীয়স্বজন,বন্ধু বান্ধব,ততকালিন লেখক, গায়ক, নায়ক নায়িকা, ও কয়েকজন বিখ্যাত ব্যাক্তির ছবি শোভা পাচ্ছে ।
আমি
হাতের ডানে রয়েছে, লোহার গ্রিলে ঘেরা দর্শনীয় ফুল বাগান ও ইট দিয়া বেস্টিত কিছু কবরের চিহ্ন । এই কবরস্থানেই রয়েছে প্রয়াত কবি, তাঁর স্ত্রী ও দাদির সমাধি ।
কবরস্থান সংলগ্ন ডানে , " কাচারি ঘর" নামে খ্যাত, একটি ঘরে কবির ব্যবহৃত পোশাকাদি ,বাসনপত্র, সামান্য কিছু পান্ডুলিপি ও গৃহস্থালি জিনিসপত্র শোভা পাচ্ছে।
ঘরটির সাইনবোর্ডে "অফিস কক্ষ" ও "ফটো তোলা নিষিদ্ধ" লেখা আাছে। আমিও ফটো তোলা থেকে বিরত থাকি । এ রুম পরিদর্শনের সময় কোন লোকজন দেখা যায়নি । রুমে জানালা, ভেন্টিলেটর কিংবা আলোর ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা অন্ধকার ভাব মনে
আমি
হয়।
বেরিয়ে আসলে হাতের ডানে সদ্যনির্মিত একটি টিন শেড ঘর দেখা যায়। এঘরে পুরাতন কিছু ফটো ও কবির কিছু লেখা দিয়া সাজানোর চেষ্টা চলছে। এখানে একজোড়া তরুণ তরুনিকে কথা বলতে দেখা যায়। পোশাক পরিচ্ছেদে তরুণীকে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রি ও তরুনকে বেকার বলে মনে হল ।
আমি, বাহির থেকে নেওয়া ছবি
জসিম উদ্দিনের মুল বাসভবন
এবার কবির মুল বাসভবনে প্রবেশের সময় এল।বাসভবনের দরজায় পাঁ রাখতেই হাতের বামে দাড়িয়ে আাছে সেই ঐতিহাসিক "মহুয়া" গাছটি । গাছের সাথেই বামে একটি ঘরের বারান্দায় উঠতেই , বাম কোনে একটি বারান্দার মত ছোট ঘরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, কবির ব্যবহৃত একটি ড্রেসিংটেবিল। তার নিচে মেঝেতে সাজানো রয়েছে সেই সময়ের একটি টেলিভিশন ।
ঘরটির কোনে সাজানো রয়েছে একটি কাঠের তৈরি ছোট আলমারি। তাতে সাজানো হয়েছে কবির ব্যবহারি পোশাক ও সামান্য কিছু জিনিসপত্র। একটি লম্বা ও নিচু সোকেসে কবির ব্যবহারকৃত কিছু ক্যামেরা, একটি কলের গান এবং লেখা ও ছবির কাজে ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জাম।
এরকম আর একটি শোকেসে সাজানো রয়েছে কয়েক জোড়া পাদুকা ও কিছু কাপড়চোপড়। এখানে একটি পালকিও দেখা যায়। এ ঘরেও কোন আলোর ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা অন্ধকারাভাব মনে হয়। মুল বাড়িটির বাকি তিনটি ঘরই তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।
পুর্ব দুয়ারী ঘরের বারান্দায়
বামের দ্বিতীয় ঘরটির দরজার সামনে বাসের তৈরী একটি চেয়ার ও হাতের ডানের ঘরটির বারান্দায় বাঁশের তৈরি একটি বেঞ্চ দেখা যায় । হাতের বামে কবির দক্ষিণ দুয়ারী শয়নকক্ষের বারান্দা সাজানো হয়েছে ,কবির লেখা কিছু কবিতা ও ছবি দিয়ে। এখানে ছিকায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি মাটির কলসি ও টবে লাগানো শুকনো গাছ।
কবির দক্ষিণ দুয়ারী বাস গৃহের বারান্দা
হাতের ডানে একটি বারান্দার মত জায়গায় একটি ডিজাইন করা নারিকেল কোরানি ও শব্জি কাটার বটি দেখা যায়।
চার পা এগোলেই ডানে দেয়ালের কোনে লটকানো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের হাতে আঁকানো কয়েকটি ছবি দেখা যায় । এখান থেকে হাতের বামে দেয়াল ভাঙা টিন সেড ঘরটি দেখা যায়। কৌতুহল বশতঃ ঘরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, দেয়ালে সাঁটানো আছে বেশকিছু কবির সময়ের গুনি শিল্পীদের পরিচয় সম্বলিত বড় আকারের ছবি ও কাঠের তৈরি দেবদেবীর ভাস্কর্য।
মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা দুইটা অকেজো কাঠের সো কেস ও ভাঙা ইটের সহিত মিশানো কিছু ডকুমেন্ট । ঘর থেকে বের হলেই ডানের ঘরটির পিছনের বারান্দায় এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে কয়েকটি কাঠের ভাঙা বেঞ্চ ও চেয়ার ,একটি আধা পুরনো সাইকেল । এখানে একটি ভাঙা বেঞ্চ উপর বড় আকারের একটি ভাঙা কলের গান দেখা যায়।
পিছনে ফিরে দেখি আমার বিয়াই সাহেব সবেদা গাছের নিচে দাড়িয়ে প্রাচিরের ওপারের বিল্ডিং সহ আশেপাশে মন দিয়া দেখিতেছেন। আমি তাঁর কাছে দাড়াতেই দেখি সবেদা গাছে কিছু পাখি কিচির মিচির করিতেছে। আমি যখন আমার কমদামি ক্যামেরায় ছবি উঠাতে চেস্টা করছি, বেশি আলো ও গাছটি উচু হওয়ায় কিছুতেই স্পস্ট ছবি উঠাতে পারছিলাম না। এমন সময় একজন পঞ্চাশোর্ধ বয়সী মহিলার দেখা পেয়ে বিয়াই জেনে নিল প্রাচিরের ওপার্শে যাওয়া যায় কিনা। মহিলা তাঁর উত্তরে বুঝাইল "না"।
কবির ব্যবহুত ক্যামেরা,কলের গান ও লেখার সহ অন্যান্য সামগ্রী।
পাশেই দেখলাম সাত-আটজন যুবক মাংস ধোয়ার কাজে ব্যস্ত ,কেউ কেউ পেঁয়াজ, রসুন ও আদা কাটা ও বাটা নিয়ে ব্যাস্ত। অবস্থা দৃস্টে মনে হল পিকনিকের আয়োজন চলিতেছে।
যখন বাহির আসিতেছি
আমরা যখন বাহিরে আসছিলাম, গেটের ভিতর কয়েকজন আমাদের মত বয়সী দর্শনার্থীকে দেখলাম। এবার আমর মুল যাদুঘরের বাহিরে আসলাম। আমাদের বহনকারী রিক্সাটি বাহিরে এতক্ষণ দাড়িয়ে রয়েছে । বিয়াই সাহেব রিকশা ড্রাইভার চাচার ভালমন্দ জেনে নিয়ে আমাকে নতুন যাদুঘেরের দিকে নিয়ে যাইতে ছিল। মুল যাদুঘরের গেট থেকে নতুন যাদুঘর গেটটি প্রায় পঞ্চাশ মিটার দুরত্বে হাতের ডানে পড়ে। দুই গেটেরই সামনে আমাদের হাতের বামে পানি শুন্য নদীর মত দেখা যায়। অপর ধারে সামান্য পানির প্রবাহ দেখা যাচ্ছে।
পিছনের বারান্দায় রক্ষিত মাটির কলসি
পিছনের বারান্দায় ভাঙা কলের গান
বিয়াই সাহেব আমাকে জানানোর চেস্টা করলেন এটাই সেই ঐতিহাসিক " কুমার নদী" ,আজকাল আর শুকনো মৌসুমে পানি থাকে না, বর্ষা মৌসুমেে এই রাস্তা পর্যন্ত পানিতে ভরে উঠে । এর ফাঁকেই আমি অজানা একটি গাছের ছবি মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করিলাম ।
আমা অজানা গাছটি
নতুন যাদুঘরের বারান্দায় প্রবেশ
এবার নতুন যাদুঘর এলাকায় প্রবেশ করার পালা। ভিতরে পাঁ রাখতেই দেখা গেল সম্মুখে এক বিরাট মাঠ। মাঠের কিছু অংশ পাাকা করা হয়েছে। ডান কিনারে কয়েকটি পাকাঘর দেখা যায়। বিয়াই সাহেব বললেন ,জসিম উদ্দিন এই মাঠেই খেলাধুলা করতেন ও অবসর সময় কাটাতেন। ছোটবেলায় আমরাও এই মাঠে খেলাধুলা করে অনেক সময় কাটাতাম ।
নতুন সংগ্রহশালার মাঠে
আমাদের হাতের ডান পার্শৈ মাথার উপর একটি বড় বেল গাছ ও দর্শনীয় পাকা স্থাপনা । ডানে স্থাপনার বারান্দায় উঠতেই মনে হল এগুলোর নির্মাণ কাজ সবেমাত্র শেষ হয়েছে এখনো ব্যবহার করা শুরু হয় নাই। সামনে এগুলেই দর্শনীয় অফিস কক্ষ দেখা গেল । যাহা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । ছোট ছোট করে লেখায় বুঝানো হয়েছে,"অভ্যর্থনা কক্ষ" ও "ফটো তোলা নিষিদ্ধ" ।
নতুন মুল যাদু ঘরে প্রবেশ
অভ্যার্থনা কক্ষ পার হয়ে যাদুঘরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল চোখ ধাঁধানো সব গ্যালারিতে থরে থরে সাজানো হয়েছে, পল্লীকবি জসীম উদ্দিন ব্যবহার্য আসবাবপত্র, কবির হাতের লেখা বেশ কিছু পান্ডুলিপি ,পোশাক পরিচ্ছদ , অনেক ছবি , সংসারের খুঁটি নাটি জিনিসপত্র সহ আরো অনেক কিছু। এক ফাকে বিয়াই সাহেব আমাকে জানিয়ে দিলেন এসব জিনিসপত্র , কবির ঢাকার বাড়ি "কমলাপুর" থেকে আনা হয়েছে।
অভ্যার্থনা রুম থেকে বাহির হতেই দেখা যায় দৃষ্টি নন্দন বাহারি ফুলের বাগান তৈরির কাজ চলছে। আগের রোপণ কৃত নানান জাতের গাছগুলোতে নানান আকারের ও ধরনের ফুল ফুটিয়েছে। আমি ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলামনা । আমার কমদামী মোবাইল ক্যামেরায় কয়েকটি ছবি বন্দি করার চেস্টা করছিলাম। এবার বিয়াই সাহেব তাঁর মোবাইল আমার হাতে দিয়া নিজের পছন্দের জায়গায় দাড়ালে আমি তাঁর তিন জায়গায় তিনটি ছবি ধারন করি। আমার ক্যামেরায় আরও কয়েকটি ছবি ধারণ করার চেস্টা করছি । এক পর্যায়ে বিয়াই সাহেব বলতে ছিল, "আপনি ঢাকায় থাকা লোক এসব কি ছবি তোলেন " বললাম "ঢাকারটি ঢাকা, আর এগুলো জসিম উদ্দিন যাদুঘরের"। আবার সেই বেল গাছটির একটি ছবি নিয়ে আমরা বাহিরে আসলাম।
আবারো ছবি তোলা
দেখার ও ছবি তুলে যেন তৃপ্তি মিটছিলনা । রিকশা থেকে নেমে কবির কবরের সামনে ( বাহিরে রাস্তার পার্শ্ব) দাড়িয়ে আরও দুইটি ছবি ক্যামেরা বন্দি করিলাম। এখন ঘড়ি সময় একটা বেজে তের মিনিট.
রিকশা উঠে বিয়াই সাহেব আমাকে আরও প্রায় পনেরো - বিশ কিলোমিটার রাস্তা দুরে বেড়াতে নিয়ে গেলেন । যাওয়ার পথে রাস্তার ধারে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে,গাছের নিচে ,দর্শনীয় স্থাপনার, পশুপাখি ও নতুন পুরাতন হাট-বাজারের সঙ্গে নিজের ছবি মিলাইয়া বেশ কিছু ছবি ক্যামেরা বন্দি করি। (এ বিষয়ে পরে একটি বর্ণনা লেখার ইচ্ছা রইল) আমার বিয়াই সাহেব একজন সৌখিন মনের মানুষ । ছেলের মুখে শুনেছিলাম , তিনি আঞ্চলিক পর্যায়ের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। বিয়াই সাহেবও বিভিন্ন স্থানে তাঁর মোবাইলে একক ভাবে ছবি উঠাতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কয়েকটি স্থানে আমি তাঁর ছবি উঠালেও, যেকোন ছবি তোলার সময় তিনি তাঁর পরনের কোটটি ছেড়ে আসার কথা বার বার উল্লেখ করতে থাকেন।
এতক্ষণে ঘড়ি বলে দেয় বিকাল সাড়ে চারটা ।
এবার রিকশায় উঠে নতুন পথে বাড়ির বাড়ির দিকে রওয়ানা দেই। পাঁচটার দিকে বিয়াই সাহেবের মোবাইল ফোনটি বেজে উঠে। কথাবার্তায় মনে হলো বিয়াইন সাহেবার ফোন। আমি নতুন বিয়াই, দুপুরে না খাইয়া ,আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা জানার চেস্টা করোছিলেন তিনি। বাড়ির কাছাকাছি আসলে আমার বউমা, তার বাবার ফোনে জানতে চাইলেন, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেও আমাকে নিয়ে তিনি কোথায়। বিয়াই সাহেব বললেন, এইতো এসে গেছি। ফোন কেটে দেওয়ার পাঁচ-সাত
আজ এখানেই ,দেখা হবে আ