Source
গত মঙ্গলবারের দুপুরের ঘটনা এটি। রাজধানীর কাকরাইলের একটি ১৫ তলা বাসার সামনে এক বিশাল ভিড় দেখা যায়। এই ভিড়ের রহস্য জানতে অনেকেই ছুটে যাচ্ছে সেদিকে। ক্রমে ক্রমে ভিড় বেড়েই চলছে ও সাথে কোলাহলের শব্দও। ততক্ষণে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও উপস্থিত সেখানে। ১৫ তলার ভবনটির ১০ম তলার গ্রিল ধরে ঝুলে রয়েছে একটি মেয়ে ও ১০ম তলার বারান্দায় একটি মহিলা ছুটাছুটি করছে ও কি যেন বলে যাচ্ছে। সড়ক থেকে ভবনটি কিছুটা দূরে ও বেশ খানিকটা উপরে হওয়াতে শুনা যাচ্ছিলনা মহিলাটি কি বলে যাচ্ছেন। নিচে জড়ো হওয়া মানুষগুলো ও মেয়েটিকে কিছু বলতে চাচ্ছিলেন, ভিতরে যাওয়ার পরামর্শ দিকে চাচ্ছিলেন। কিন্তু কিছুই করার ছিলনা। নিচের মাটি থেকে ১০ তলা পর্যন্ত দূরত্ব হবে প্রায় শত মিটারের মত। তাই এই কোলাহল থেকে কোনো আওয়াজ মেয়েটির কানে যাচ্ছিলোনা। শহরের বাড়ি, তাই নিরাপত্তা জনিত কারণে ভিতরে প্রবেশ করে কারণ জানার সুযোগও ছিলনা। কোনো কারণে মেয়েটির হাত ফসকে পড়ে গেলেই নির্ঘাত মৃত্যু
কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে কয়েকজন সচেতন জনতা পার্শ্ববর্তী রমনা থানায় বিষয়টি জানান। পুলিশ আসতে অবশ্য মিনিট বিশেক দেরি করে ফেলেছেন। ততক্ষণে বারান্দায় ছুটাছুটি করা মহিলাটি বিষয়টিকে সামলে নিয়েছেন। জানালার গ্রিলের তালাটি খুলে ভিতরে ডেকে নিয়েছেন মেয়েটিকে। পুলিশ এসে স্বচক্ষে দেখতে না পেলেও জনতার ভিড় থেকে তথ্য নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে যান। যে ফ্ল্যাটের গ্রিলে মেয়েটিকে ঝুলতে থাকতে দেখা গিয়েছিল সে ফ্ল্যাটের বাইরে নামফলকে লেখা ছিল হাবিবুর রহমান ও লাভলী রহমান। দরজায় টুকা দিলে বেরিয়ে আসেন গৃহকর্ত্রী লাভলী রহমান। ইনিই সেই মহিলা যিনি মেয়েটিকে জানালার গ্রিলে ঝুলিয়ে রেখে বারান্দায় ছুটাছুটি করছিলেন। তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী অথছ তার মধ্যে মানবতার ছিটেফোঁটা টুকুও নেই। পুলিশ মেয়েটিকে ডাকলে লাভলী রহমান তাকে সামনে নিয়ে আসতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্ত করার কিছুই নেই, পুলিশ ভিক্টিম এর সাথে কথা বলতে যে দৃড় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই মেয়েটিকে পুলিশের সামনে এনে হাজির করতেই হল লাভলী রহমানকে। পুলিশ মেয়েটিকে সোফায় বসতে বলতেই ধমক দিয়ে দাড়িয়ে উঠেন, বলেন, "ও বসবে কেন সোফায়! ও আমার বাসার চাকর। চাকর সোফায় বসবে কেন। "
মেয়েটি মাথা নিচু করে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। কারো দিকে তাকাচ্ছেনা, কোনো টু-টা শব্দ নেই তার মুখে। মনে হচ্ছিল যেন একজন দাসী দাড়িয়ে আছে মহারানীর সামনে। সামান্য বেয়াদবিতে শিরশ্ছেদ হতে পারে তার। পুলিশ বুঝতে পারলে মেয়েটি লাভলী রহমানের সামনে কিছুই বলবেনা। তাই পুলিশ লাভলী রহমানকে অন্য কক্ষে পাঠিয়ে দিলেন। পুলিশ মেয়েটিকে অভয় দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "গৃহকর্ত্রী কি নির্যাতন করে?"
মেয়েটির মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হয়না। চেহারায় বিশাল এক ভয়ের ছাপ। মুখ খুললেই বুঝি প্রাণটি হারাতে হতে পারে তাকে। মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল তাকে নির্যাতন করেনা কেউ।
লাভলী রহমানের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "যে মেয়েটি ঝুলে ছিল তার নাম খাদিজা। বাসার অন্য কাজের মেয়ে হেলেনার সাথে ঝগড়া করে বারান্দার গ্রিলে ঝুলে থাকে।"
কথা বলতে বলতে মেয়েটিকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন সবার সামনেই। এমনকি মেয়েটির নামে সাধারণ ডায়েরি করার সিদ্ধান্ত ও নিয়ে ফেলেছেন তিনি।
তবে বাহিরের আমজনতার থেকে মিলে অন্য খবর। তাদের দাবি হৃদয় বিহীন এই মানবিধিকার কর্মী মেয়েটিকে জানালার গ্রিলে ঝুলিয়ে রেখে ধমাকচ্ছিলেন। নিচ থেকে কিছু শুনা না গেলেও লাভলী রহমানের অঙ্গভঙ্গিতে সকলে এমনটাই মনে করছেন।
Posted using Partiko Android