পড়ুন হইত ভাল লাগতে পারে।
গল্প=বিয়ের রাত!!
বিয়ের রাতে যখন শুনি আমার বউ
ধর্ষিতা তখন আমি একটুও চমকাই নি।
স্বভাবগত এরকম কথা শুনে যে কারোর
দুনিয়া উল্টে যেতে কিন্তু আমার
ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। যেখানে বাসর
রাতে নতুন একটা জীবনের শুরু করতে
যাচ্ছিলাম সেখানে ধর্ষিতার মুখে
ধর্ষনের গল্প শুনেছি।
..
আমি অনেক বিচলিত হই যখন শুনতে
পারি কোন পুরুষ তার পুরুষত্বের ফায়দা
তুলে একটা মেয়ের স্বতিত্ব হনন
করেছে। আমি ইচ্ছে করলে ওকে
ওখানেই ত্যাগ করে দিতে পারি
কিন্তু করিনি। যদি এমনটা করতাম
তাহলে সে সব পুরুষদের জানোয়ার মনে
করতো এমনকি তার বাবাকেও।
..
বিয়ের সপ্তাহ খানেক পরেই যখন ওর
মাথা-ব্যথা বমি-বমি ভাব দেখা দেয়,
তখন পরিবারের সবাই অবাক হয়ে যায়।
ওর চোখে মুখে ভয়ের চাপ দেখে আমি
ভিষন কষ্ট পাই। সে যখন বাচ্চা নষ্ট করার
কথা বলে তখন আমি নিজের লাজ-
লজ্জাকে বলী দিয়ে সবার মুখে রটাই
বিয়ের আগে আমি ওর সাথে
শারিরীক সম্পর্ক করেছি। এতে আমার
নাক কাটলেও কোন সমস্যা নেই তবুও
ওকে হাসি খুশি দেখতে চাই।
..
এরকম জঘন্য কাজের জন্য পরিবার ত্যাগ
করার পরও ওকে ছাড়তে পারিনি বরং
ওর সব সমস্যায় সমাধান করতে থাকি।
সারারাত ওর চোখের কোণে জল জমা
থাকে যদি কোন একদিন আমি ওর পাশে
না থাকি তাহলে তার কি হবে এই
ভয়ে। আমি তাকে বুকে টেনে নিয়ে
বলি আমি আছি তো তোমার সাথে
তাহলে সে একটু ভরসা পায়।
..
কোন এক রাতে সে আমাকে জিজ্ঞেস
করে আমাকে ঠকানোর পরও কেন আমি
তার সাথে বন্ধুর মতো আচরন করি!
জবাবে আমি বলি যে তোমাকে
বিশ্বাস করে ঠকিয়েছে সেটা
নিয়তির দোষ আর তোমাকে সেই
নিয়তি থেকে আমি মুক্ত করতে চাই।
সে কেঁদে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে
বলে আমি তোমার সব স্বপ্ন নষ্ট করার
পরও আমায় ভালোবেসেছো সেটা
আমার ভাগ্য। আমি ওর কপালে আলতো
করে চুমু দিয়ে বলি তুমি আমার
সৌভাগ্য।
..
সেদিনের পর থেকে ৭মাসের মাথায়
তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। একটা মা তখন
তার সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে
বাঁচা-মরার যুদ্ধে লেগে যায়। আমার
সন্তান না হওয়া স্বত্ত্বেও আমি
তাদের পাশে থাকি। কিন্তু নিয়তি
আবার ঠকালো। বাচ্চাটা ভূমিষ্ঠ
হয়েছে কিন্তু মৃত। একটা মায়ের কাছে
সেটা তখন নিজের মৃত্যুর থেকেও
যন্ত্রনাদায়ক। সে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ
হয়ে যায়। মুখ আছে জিহবা আছে তবুও
যেন সে বোবা হয়ে গেল। তবুও আমি ওর
হাত ছাড়িনি বরং ভাগ্য বলে সব
সমীকরণ মিলিয়ে নিলাম।
..
আজ বিয়ের দশ বছর পার হয়ে গেল তবুও
আমাদের কোন সন্তান নেই। সেদিনের
পর থেকে সে মাতৃত্বের স্বাধ হারিয়ে
ফেলেছে। প্রতিরাতে সে আমার বুকে
মাথা রেখে কেঁদে শার্ট ভিজিয়ে
দেয়। সে এর মধ্যে সুইসাইড করতেও
যাচ্ছিল কিন্তু পারেনি। ওকে স্ত্রীর
মত না, নিজের দুনিয়া মনে করে
আগলে রাখি। সারাদিন রাত যখন
অফিসের মাইর খেয়ে নির্জীব হয়ে
বাসায় ফিরি তখন ওর হাতের স্পর্শ
পেয়ে আবার জীবিত হই। গালে যখন
বিষন্নতার চাপ থাকে তখন সে আলতো
করে ওর হাত ছুঁয়ে দেয়। আমি খুশি হইনা
বরং স্বর্গের আবাস পাই।
..
মেয়েটাকে ভালোবেসেছি কোন
কারন ছাড়াই ভালোবেসেছি, ওর সব
ভুল গুলোকে শুধরিয়েছি, সব আবদার পুরণ
করেছি। যেদিন কবুল বলে আল্লাহকে
স্বাক্ষী রেখে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওকে
আগলে রাখার প্রতিজ্ঞা করেছি সে
প্রতিজ্ঞায় আমি অটল রয়েছি। আমি
বাবা হতে পারিনি ঠিক, কিন্তু ওর
কাছে শ্রেষ্ট স্বামী হতে পেরেছি
আর এটাই আমার কাম্য।