সঞ্জয়লীলা বানসালি ‘পদ্মাবতী’ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ছবিটি আছে খবরের শিরোনামে। বিভিন্ন বিতর্ক থেকে শুরু করে এর শুটিংয়ে সেট ভাঙচুর, পুরো ইউনিটকেই পাড়ি দিতে হয়েছে কঠিন সময়। স্বস্তি মিলছে না ছবিটি মুক্তির কাছাকাছি সময়েও।
তাই ‘পদ্মাবতী’র বিষয়বস্তু নিয়ে ক্ষুব্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সহিংসতার কথা মাথায় রেখে এ ছবির নির্মাতারা বীমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইউনিটের একজন সদস্য ভারতের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিককে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ‘পদ্মাবতী’র বীমার পরিমাণ ছাড়াবে ১৬০ কোটি রুপি। কারণ এখনও এর পরিবেশনার খরচ ঘোষণা করা হয়নি।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় বীমা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুমন্ত সালিয়ান বলেছেন, ‘দাঙ্গা, ধর্মঘট কিংবা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ক্ষতির কারণে টিকিটের রাজস্ব হ্রাস পেলে তা উতরে যাওয়া সম্ভব এমন একটি পলিসি আছে। ’
এদিকে ভারতের একটি মাল্টিপ্লেক্সের একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহীর ভাষ্য, ‘পদ্মাবতীর মতো কোনও ছবিকে ঘিরে দাঙ্গার আশঙ্কা থাকলে হলমালিকরা ছবি প্রদর্শনের ঝুঁকিতে যেতে চান না। কারণ পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা না থাকলে তারা ব্যয়বহুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। এখন পর্যন্ত ভারতের তিনটি রাজ্যে এ ছবির বিরুদ্ধে জনরোষ ক্রমে বাড়ছে।’
চলচ্চিত্র পরিবেশক ও জয়পুরের একটি সিনেমা হলের মালিক রাজ বানসাল বলেন, এখন পর্যন্ত রাজস্থানের কোনও পরিবেশক ছবিটি নিয়ে আগ্রহ দেখাননি। তবে আমরা জয়পুরে পদ্মাবতী দেখাতে মুখিয়ে আছি। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি আসছে। অবশ্য এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পুলিশি নিরাপত্তা চাইবো। তবে পর্যাপ্ত সুরক্ষা না পেলে ও অস্থিতিশীলতা বাড়তে থাকলে ছবিটি দেখানো কিনা ভাবতে হবে।’
গুজরাটের বালসাদ জেলার প্রদর্শক প্রশান্ত সোলাঙ্কির মন্তব্য, ‘পদ্মাবতী’তে যে আপত্তিকর কিছু নেই এজন্য মুক্তির আগেই দেখানো উচিত বিক্ষোভকারীদের। তাদের এমন নিশ্চয়তা দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে। তখন আর মুক্তিতে কোনও ঝামেলা হবে না। তিনি মনে করেন, সেন্সর বোর্ডেরও ছবিটির বিষয়বস্তু যথাযথভাবে দেখা উচিত যেন বিকৃত কিছু না থাকে। এতে করে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হতে পারে।
বানসালির আগের দুই ছবি ‘গোলিও কা রাসলীলা রাম-লীলা’ ও ‘বাজিরাও মাস্তানি’ মুক্তির সময়ও প্রথম দিনে বিক্ষোভ হয়েছিল। পরে তা মিটে যায়। এবারও তেমন হবে বলে আশা করছেন সিনেমা হলমালিকরা।
দীপাবলি উপলক্ষে ‘পদ্মাবতী’ ছবিতে রানির বেশে বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের মুখ দিয়ে বানানো একটি রঙ্গোলি লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে রাজপুতানা সেবা সংঘের উগ্রবাদী গোষ্ঠী। এর আগে গত মাসে ‘পদ্মাবতী’র পোস্টার প্রকাশের পর রাজস্থানের জয়পুরের রাজ মন্দিরের সামনে তা পুড়িয়ে দেয় রাজপুত গোষ্ঠী কার্নি সেনা।
‘পদ্মাবতী’কে ঘিরে শুরু থেকেই বিতর্ক চলছে। রাজস্থানে শুটিং চলাকালে উগ্রবাদীরা শুটিং সেট ভেঙে দেয়। তাদের হাতে চড়ও খেতে হয়েছিল বানসালিকে। এ কারণে ইউনিট নিয়ে সেখান থেকে সরে পড়েন তিনি। কিছুদিন বিরতির পর শুটিং শুরু হয় মহারাষ্ট্রের ইতিহাস বিজড়িত কোলাপুরে। সেখানেও হানা দেয় উগ্রপন্থীরা। তাদের জ্বালিয়ে দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় সেট ও দামি পোশাক। এ কারণে বাকি শুটিং শেষ করা হয় কঠোর নিরাপত্তায়।
ছবিটিতে চিত্তোরের সাহসী ও দৃঢ়চেতা রানি পদ্মিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন। গল্পে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির হাত থেকে বাঁচতে পদ্মাবতী আত্মহত্যা করেছিলেন আনুমানিক ১৩০৩ সালে। এরপর তার স্বামী মহারাজা রতন সিংকে হত্যা করে চিত্তোরের দুর্গ দখল করেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি।
নেতিবাচক চরিত্র আলাউদ্দিন খিলজির ভূমিকায় রণবীর সিংয়ের উপস্থিতি ‘পদ্মাবতী’ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আর রাজা রাওয়াল রতন সিং হিসেবে আছেন শহিদ কাপুর। আগামী ১ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে প্রায় ১৬০ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত ‘পদ্মাবতী’।
Sort: Trending