ভাঁড় ও স্থানীয় লোক
এক ভদ্রলোক ছিলেন, যেমন বড় ঘরের, তেমনি বিরাট বড়লোক। সাধারণ লোকেরা যাতে বিনা পয়সায় আমোদ-আহ্লাদ করতে পারে তার জন্য তিনি একটি রঙ্গমঞ্চের বন্দোবস্ত করেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ঐ মঞ্চে কেউ যদি নুতন কোন মজাদার কিছু করে দেখাতে পারে তবে তাকে তিনি অনেক পুরস্কার দেবেন। এক ভাঁড়, রঙ্গ-রসিকতায় খুব নাম-ডাক ছিল তার, বলল যে সে এমন মজার খেলা দেখাবে যা কোন মঞ্চে আগে কেউ কখনো দেখায়নি। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল এই কথা। চারিদিকে একেবারে হৈ হৈ পড়ে গেল। নির্দিষ্ট দিনে নুতন মজা দেখার জন্য রঙ্গমঞ্চের সামনে প্রচুর লোকের ভীড় হল। ভাঁড়টি মঞ্চে এল এক সময়। তারপর একটা বাচ্চা শূয়োরের চিঁ চিঁ আওয়াজ নকল করে ডেকে উঠল। নকল করার কাজটা সে এত ভালভাবে করেছিল যে দর্শক-শ্রোতারা সাব্যস্ত করল, লোকটির ঝোল্লা জোব্বার নিচে নিশ্চয়ই একটা বাচ্চা শূয়োর লুকোনো আছে। তারা দাবী করল যে লোকটিকে তার জোব্বা ঝেড়ে-ঝুড়ে দেখাতে হবে। জোব্বা ঝাড়াঝুড়ি করেও যখন কিছু বের হল না, তখন তারা প্রবল হাততালি দিয়ে লোকটিকে বাহবা জানাল। স্থানীয় একজন সাধারণ লোক এইসব দেখে-শুনে বলল, সে ও আসছে কাল এই মজাটাই করে দেখাবে। পরের দিন ভীড় আরো বিরাট। দুই অভিনেতাই মঞ্চে হাজির। ভাঁড়টি আগের দিনের মতই বাচ্চা শূয়োরের ডাক নকল করল, দর্শক-শ্রোতারাও আগের দিনেরই মত তাকে প্রচুর বাহবা দিল। এবার স্থানীয় লোকটির পালা। সে এমন একটা ভঙ্গী করল যেন তার জোব্বার নীচে একটা বাচ্চা শূয়োর লুকিয়ে রেখেছে (আসলেই রেখেওছিল), তারপর যেন সে সেই শূয়োরের কান ধরে টানাটানি করল আর, শূয়োরের চিঁ চিঁ আওয়াজ শোনা গেল। লোকেরা অবশ্য সেই আওয়াজ শোনার পর রায় দিল যে একটু আগে ভাঁড়টি আরো ভালভাবে শূয়োরের ডাক নকল করে শুনিয়েছে। এইবারে এই সাদাসিধে স্থানীয় লোকটি জোব্বার ভিতর থেকে একটি বাচ্চা শূয়োর বার করে আনল। সবাই অবাক হয়ে দেখল, কি বিরাট ভুল ধারণা তারা করে বসেছিল (ভাঁড়টির ক্ষমতা বিষয়ে)।
প্রাচীন বচনঃ সমালোচকদের উপর সবসময় ভরসা করা যায় না।
hahahahahahah