দোস্ত সেই চন্দ্র গ্রহন হইতেছে সেই! আয় বাহিরে আয়! এরকম করেই আমরা চন্দ্রগ্রহন কিংবা সূর্যগ্রহন হলে ফ্রেন্ডদের নিয়ে অনেক আনন্দ করি। অথচ ইসলামে এটাকে ভয়ের বিষয় বলা হয়েছে। নবীজি সঃ নিজে এই ব্যাপারে আতঙ্কিত ছিলেন। এটা হবার সময় মসজিদে নামাজ পড়তে চলে যেতেন এবং নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতকে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় নামাজের নির্দেশ দিয়েছেন, আল্লাহর কাছেই নত হতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো লোকের মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তবে তা আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর দুটি। তোমরা সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হতে দেখলে নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে। (সহিহ বুখারি : ৯৮৪) আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে যে সত্যি চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ পৃথিবীর জন্য আতঙ্কের বিষয়। সৌরজগতে মঙ্গল ও বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যবলয়ে অ্যাস্টেরয়েড (Asteroid), মিটিওরাইট (Meteorite), উল্কাপিণ্ড প্রভৃতি পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট আছে বলে বিজ্ঞানীরা ১৮০১ সালে আবিষ্কার করেন। এ বেল্টে ঝুলন্ত একেকটা পাথরের ব্যাস ১২০ থেকে ৪৫০ মাইল। গ্রহাণুপুঞ্জের এ পাথরখণ্ডগুলো পরস্পর সংঘর্ষের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরখণ্ড প্রতিনিয়ত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু সেগুলো বায়ুমণ্ডলে এসে জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। কিন্তু গ্রহাণুপুঞ্জের বৃহদাকারের পাথরগুলো যদি পৃথিবীতে আঘাত করে, তাহলে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হবে পৃথিবী। বিজ্ঞানীরা বলেন, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে, একই অক্ষ বরাবর থাকে বলে এ সময়ই গ্রহাণুপুঞ্জের ঝুলন্ত বড় পাথরগুলো পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি। বৃহদাকারের পাথর পৃথিবীর দিকে ছুটে এলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পক্ষে তা প্রতিহত করা অসম্ভব। ধ্বংসই হবে তখন পৃথিবীর পরিণতি। যদিও ব্যাপারটি শুধুই আশংকা, প্রমানিত নয় কারন প্রমানিত হয়ে গেলে পৃথিবীই থাকবে না।
তাই আল্লাহর প্রিয়তম হাবিব মুহাম্মদ (সা.) এ সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছেন। আমাদের উচিত কুসংস্কারগুলো পরিহার করে সুন্নত অনুযায়ী চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাওয়া। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক কুসংস্কার আছে। ওই সময় খেতে নেই, তৈরি করা খাবার ফেলে দিতে হবে, গর্ভবতী মায়েরা এ সময় যা করেন, তার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে, চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় যদি গর্ভবতী নারী কিছু কাটাকাটি করেন, তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয়—এটি ভুল বিশ্বাস। এ সময় কোনো নারীকে ঘুম বা পানাহার থেকে বারণ করাও অন্যায়। ইসলামী শরিয়াহ ও বাস্তবতার সঙ্গে এগুলোর কোনো মিল নেই। জাহেলি যুগেও এ ধরনেরই কিছু ধারণা ছিল। সেকালে মানুষ ধারণা করত যে চন্দ্রগ্রহণ কিংবা সূর্যগ্রহণ হলে অচিরেই দুর্যোগ বা দুর্ভিক্ষ হবে। চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ পৃথিবীতে কোনো মহাপুরুষের জন্ম বা মৃত্যুর বার্তাও বহন করে বলে তারা মনে করত। হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেগুলোকে ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মুগিরা ইবনু শুবা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পুত্র ইবরাহিমের ইন্তিকালের দিনটিতেই সূর্যগ্রহণ হলে আমরা বলাবলি করছিলাম যে নবীপুত্রের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। এসব কথা শুনে নবীজি (সা.) বললেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তাআলার অগণিত নিদর্শনের দুটি। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।’ (সহিহ বুখারি : ১০৪৩)
তাই আমাদের উচিত চন্দ্রগ্রহন কিংবা সূর্যগ্রহন নিয়ে উল্লাসিত না হয়ে এবং কোনরূপ কুসংস্কারে বিলিভ করে খাওয়া দাওয়া করা যাবে না এরকম মানসিকতা না নিয়ে আল্লাহর দিকেই নত হওয়া। বেশি বেশি দুয়া, ইস্তেগফার কিংবা নামাজ পড়া।