গ্রামের মানুষজন একটু তাড়াতাড়ি ঘুমায়। ছোটবেলায় আমরা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতাম। বড় আপা অনেক রাত জেগে পড়াশোনা করতো।আমি তখন ছোট, পড়াশোনা নেই বললেই চলে।পড়াশোনা মানে স্কুলে আসা যাওয়া। বাড়িতে কোনো পড়াশোনা নেই। সন্ধ্যার পর অল্প সময় পড়তাম। আমার আর ছোটোর আসলে রাতে বেশিক্ষণ পড়াশোনার অনুমতিও ছিলো না।পাছে বড় আপার পড়ার ক্ষতি হয়।
তাই আমরা সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে যেতাম।আমি তেমন ঘুম কাতুরে নই।এটা আমার মনে হয়।কারণ যেখানে সেখানে, যেভাবে খুশি সেভাবে আমি ঘুমাতে পারি না।আর দিনের বেলা ঘুম সেটা আমার কাছে অসম্ভব মনে হয়।ছোটো আবার খুব ঘুম কাতুরে।যেখানে শুবে সেখানে ঘুমাবে।শুয়ার সাথে সাথে ঘুম।
যাইহোক আমাদের এলাকায় শবে কদর,শবে বরাত খুব ধুমধাম করে পালন হয়।এটা রুটি বানানোর ধুম নয়।নামাজের ধুম।আম্মা যেহেতু আরবি পড়ান তাই আম্মার ছাত্রীরা নামাজ পড়তে চলে আসতো।ঐসব পবিত্র রাতে গোসল করে ইবাদত করা নাকি অনেক সওয়াবের।প্রতি বিন্দু পানিতে সওয়াব পাওয়া যায়।এসব কথা তখন প্রচলিত ছিলো।
তখন খুব শীত থাকতো।তাই এক রকম প্রতিযাগীতা চলতো।নামাজ নিয়েও একটা প্রতিযোগীতা ছিলো, তবে এটা সবার মনে মনে। কারণ পরের দিন একে অপরকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কে কত রাকাত নামাজ পড়ছে। সূরা ইখলাস কতবার পড়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।যদিও নামাজ নিয়ে এধরনের কত রাকাত পড়ার প্রতিযোগীতা ঠিক নয়।আমরা তো ছোট ছিলাম আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ।
আমি মনে মনে বলতাম আমি সবচেয়ে বেশি নামাজ পড়বো।সারারাত ঘুমাবো না।ফজরের আযান দিলে ঘুমাবো।সন্ধ্যা থেকে প্রস্তুতি।এশার আযান দেওয়ার সাথে সাথে গোসল করে নামাজ পড়তে বসে যেতাম। একসাথে অনেকে নামাজ পড়তাম কিন্তু জামাত না।আমি এশার নামাজ পড়ে বিতর রেখে পড়া শুরু করতাম। প্রথম দুই রাকাতে সূরা ইখলাস দুই বার,পড়ের দুই রাকাত সাতবার। এই পর্যন্ত সব ঠিক।
সমস্যাটা শুরু হতো পরের দুই রাকাত থেকে। পরের দুই রাকাতে পঁচিশবার করে।দশ কি পনেরোবার পড়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে যেতাম।আবার ওঠে মুখ ধুয়ে শুরু করতাম।একি ঘটনা অবশেষে তিনবার করে পরে নামাজ শেষ করে ঘুমিয়ে যেতাম।
এরপর ঢাকা আসলাম।প্রতিদিন ঘুমাতে বারোটা একটা বাজতো। ঘুম আসে না।বসে গল্প গুজব করে একটার দিক ঘুমাতে যায়।কিন্তু পরীক্ষার সময়টা সন্ধ্যায় পড়তে বসে যেতাম। তখনই বিপর্যয়।নয়টা বাজেনি কিন্তু আমি টেবিলে বসেই ঘুমিয়ে যাচ্ছি। চা খাচ্ছি, মুখ ধুচ্ছি কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।পড়তে তো হবে পরীক্ষা যেহেতু, সারাবছর তো আর পড়াশোনা হয়নি।
কিন্তু সেদিন ঘুম আমাকে ছাড়বে না।আচ্ছা সেসব গেলো।মালয়েশিয়া আসার পর আমি রাত দুইটাকে সন্ধ্যা রাত মনে করি।আমরা রাতের খাবার খায় বারোটার পর। আমার কোনোদিন ঘুম ঘুম লাগছে এমন কথাও মনে নেই।
কিন্তু গতদুই তিন মাস রাত বারোটার পর একটু লিখালিখি করি।কারণ হচ্ছে মানহা। দিনে লিখতে গেলে সে বিরক্ত করে।বিষয়টা এমন যে আমি বসে আছি সে খেলা করছে। আমি আমার মতো সে তার মতো।আমি ভাবলাম তাহলে একটু লিখি।এক বাক্য লিখা শেষ হওয়ার আগে সে খেলাধুলা রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে কোলে উঠার বায়না,না হয় মোবাইল নেওয়ার বায়না, না হয় খাওয়ার বায়না। আমাকে আর মোবাইলের দিকে তাকাতেও দিবে না।তাই ও ঘুমালে লিখতে শুরু করি।
ও আবার সাড়ে বারোটার আগে ঘুমানোর প্রশ্নই আসে না।কখনওতো পনে দুইটাও বেজে যায়।ও ঘুমানোর পর আমি লিখতে শুরু করি।দুইতিন লাইন লিখার পর আমার ঘুম আসা শুরু করে।আমিতো লিখা শেষ করবো তাই বসে লিখা শুরু করি। কিন্তু এক দুই শব্দ লিখে বসেই ঘুমায় যায়।হঠাৎ আবার কিভাবে সজাগ হই, আমি কি ঘুমিয়ে গেলাম। ঘড়ি দেখে আমি অবাক এক দেড় ঘন্টা পার হয়ে গেছে।
এর পর লিখার দিকে তাকালে তো নিজেই হেসে অজ্ঞান বাংলা অক্ষর কয়েকটা লিখিছি কিন্তু এসবে উচ্চারণ করতে গেলে দাঁত ভেঙে বত্রিশটায় শেষ হয়ে যাবে।আবার শুরু করি কিন্তু এক লাইন এর বেশি লিখতে পারিনা।কিন্তু যখন মোবাইল চার্জ দিয়ে ঘুমের উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়ি তখন আর ঘুম আসে না।এতো এখন লিখতে গিয়ে কখন ঘুমিয়ে গেলাম সজাগ হয়দেখি দেড়টা বাজে।আজব ব্যাপার।

Congratulations @shaonashraf! You received a personal badge!
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
Check out our last posts: