ব্রাহ্মণের মেয়ে

in #shaonashraf2 years ago (edited)

নিবা দুই বোনের মধ্যে ছোট। উপজেলা শহরে ডুপ্লেক্স বাড়িতে ও থাকে। বাবা ব্যবসায়ী। দিদির থেকে পনেরো বছরের ছোট নিবা প্রাণবন্ত উচ্ছল।পড়াশোনায় ভালো তাই বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ওকে নিয়ে। ও যখন ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়ে তখন ওর দিদির বিয়ে হয়ে যায়।

ওদের বাসার সাথে লাগানো আরেকটা ডুপ্লেক্স বিল্ডিং এ নিজেদের গ্লাসের কারখানা।নিবা এসএসসি পাশ করার পর থেকে বাবার সাথে কারখানা দেখাশোনাও করে, পড়াশোনাও করে।ওরা হিন্দু ধর্মের অনুসারী। ওদের বাড়ি থেকে পাঁচ বাড়ি পরের এক ছেলের সাথে কলেজে আসা যাওয়ার সময় পরিচয়। ওর নাম বিদ্যুৎ। নিবারা ব্রাহ্মণ, আর বিদ্যুৎ বিশ্বাস বংশের ছেলে। ওরা নিবাদের মতো এতো বড়লোক না হলেও উচ্চ মধ্যবিত্ত।দুইজনের মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যায় কলেজে যাওয়ার পথে কিংবা কারখানায় যাওয়ার পথে।প্রেম কি আর জাত মানে!

আস্তে আস্তে দুইজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়।নিবা জানতো এই সম্পর্ক তার পরিবার মানবে না ব্রাহ্মণ জাতের মেয়ে সে।ব্রাহ্মণ ছাড়া বিয়ে দেবে না পরিবার।প্রথমে সে এই সম্পর্কে জড়াতে চায়নি কিন্তু কিভাবে জড়িয়ে গেলো সে জানে না। সে যেহেতু জানে এটা তার পরিবার মানবে না তাই সে বিদ্যুৎ কে জিজ্ঞেস করেছে পালিয়ে বিয়ে করতে পারবে কিনা।বিদ্যুৎ রাজি।

তাই নিবা প্রথম থেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত পালিয়ে বিয়ে করতে।তার ধারণা বিয়ের কিছু দিন পর মা বাবা মেনেতো নিবেই।ইন্টার পাস করে ডিগ্রিতে ভর্তি হলো নিবা। ততোদিনে বিদ্যুৎ মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটা কোম্পানিতে জয়েন করে।চাকরির তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করলো সব ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য। এরপর একদিন দিনক্ষণ ঠিক করে কলেজে যাওয়ার নাম করে বিদ্যুতের হাত ধরে পালালো।মন্দিরে গিয়ে দুইজন বিয়ে করলো।এরপর বিদ্যুতের বাড়ি।

বিদ্যুতের বাড়িতে কেউ নেই। ওর মা বাবা দাদাদের সাথে শহরে থাকে।বিদ্যুতের বিয়ের খবর পেয়ে এক সপ্তাহ পর সবাই এসেছে। ওদের বাড়িতে সবাই মেনে নিয়েছে। বউভাতের অনুষ্ঠান করে বিদ্যুতের মা বাবা আবার দাদাদের সাথে চলে গেলো। নিবার বাবা নিবাকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছে।কোনো দিন যেনো ওর বাবার সামনে না যায় সেটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে। নিবা ভেবে ছিলো প্রথম প্রথম রাগ করছে পরে ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে নয় বছর কেটে গেলো। ওর বাবা ওকে মেনে নেইনি। মায়ের সাথে ফোনে কথা হয়।নিজের সংসারে সে ভালো আছে। কিন্তু বাবার বাড়িতে না যেতে পারার দুঃখ তাকে পুড়ায়।হঠাৎ একদিন নিবার বাবা বাইক এক্সিডেন্ট করে গুরুতর আহাত হয়।হাসপাতালে বেহুঁশ ছিলো তিনদিন।

তখন তার মা থাকে বাড়িতে যেতে বলে।বাবা হাসপাতালে, মাকেও সেখানে দৌড়াতে হয় তাই কাররখানা দেখাশোনা করার কেউ নাই। নিবা খুব খুশি কারণ সে বাড়ি যেতে পারবে।বাবা তিন সপ্তাহের মতো হাসপাতালে ছিলেন। নিবা তখন নিজ কারখানা দেখাশোনা করছে।নিবা ভেবেছে সব ঠিক হয়ে গেছে। বাবা বাড়িতে এলে এবার কিছু বলবে না।কিন্তু ঘটল এর উল্টো বাবা ওকে দেখে রেগে মেগে ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিলো।

এর ছয়মাস পর হঠাৎ ওর জ্বর আসে। এই জ্বর যায় আসে কিন্তু একেবারে সারে না।আশেপাশের ডাক্তারের ঔষধ কাজে আসে না। এখন কি করবে ওরা বুঝতে পারছে না।কারণ ওদের কোন বুদ্ধি দেবে এমন কোনও মানুষও নেই।এরপর দুইজন শহরের হাসপাতালে চলে গেলো। সেখানে যাওয়ার পর বললো ওর যক্ষা হয়েছে। যক্ষার ঔষধ দিলো।ঐ ঔষধ এক সপ্তাহ খাওয়ার পর ওর শ্বাস কষ্ট শুরু হলো।আবার অন্য হাসপাতালে গেলো সেখানে বললো যক্ষা তো হয়নি যক্ষার ঔষধ খেয়েছে তাই লিভারে পানি জমে গেছে বের করতে হবে।পানি বের করলো কিন্তু জ্বর যায়না।প্রতিদিনই আসে। আবার ডাক্তারের কাছে গেলো। আবার দেখে লিভারে পানি জমে গেছে।আবার পানি বের করলো।আস্তে আস্ত ওর শরীর খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি হলো।প্রতিদিন পানি বের করতে হয়।

এভাবে অনেক হাসপাতাল ঘুরেছে।কিন্তু রোগ আর ভালো হয় না হয়না।খাওয়া দাওয়া করতে পারে না,শ্বাসকষ্ট হয়।এভাবে তিন মাসে একেবারে বিছানায় পড়ে গেছে।এক সপ্তাহে আগে নিবা মারা গেছে।

ওর লাশ যখন সাজিয়ে চিতায় নিচ্ছে বাবা তখন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত।বাড়ির সামনে দিয়ে মেয়ের লাশ নিয়ে যাচ্ছে মা বাবা ফিরেও দেখেনি।বাবাকে যখন প্রশ্ন করা হলো কিভাবে এতোটা কঠিন হলেন।বাবা সরাসরি বলে দিলো ওনার মেয়ে বারো বছর আগে মারা গেছে। আজ শোক করবে কেনো? এটা শোনার পর কোনো প্রশ্নও থাকে না, বলার ভাষাও থাকে না।

6099881f91d23085b04fcefeecdb4af4.jpg