পশ্চিম আকাশের রক্ত রাঙা লালিমা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।কিন্তু কতদিন তা দেখি না হিসেব রাখা হয়নি।গত দেড় বছর হলো আমি বাইরে কোনো কাজ করিনা। আমার বেড রুম থেকে পশ্চিম আকাশ ঝলমল করে।তাহলে কেনো দেখা হয়না লালিমা।আমি নিজে নিজে ভাবি আচ্ছা সারাদিন আমি কি করি খুঁজে তেমন কিছু পায় না।তবে সারাদিন আমি ব্যস্ত থাকি এটা আমি জানি।
আমিতো গৃহিণী। আপাতত দৃষ্টিতে আমার অফূরন্ত সময়।যখন যা খুশি করতে পারি। হ্যাঁ এটা হয়তো সম্ভব হতো যদি আমি মা না হতাম। সকাল থেকে আমি কি করি?মানহা রাতে দেরী করে ঘুমায় এটা ঠিক আছে।একটু দেরীতে ঘুমিয়েছে আমি তার সাথে ঘুমিয়ে গেলাম। বিশ মিনিট পর ওর মন চাচ্ছে এখন বিছানায় ঘুমাবে না।এবার ও ঘুমাবে কিন্তু আমার কোলে। আমি কি ওকে কোলে নিয়ে ঘুমাতে পারি, নিশ্চয় না।আচ্ছা এটাও ঠিক ছিলো এবার আধা ঘন্টা পর ওর মন চাচ্ছে খাটে থাকবে না এবার ওকে নিয়ে হাঁটো।ঘুমের কথা ভুলে যাও।
একেক দিন একেক রকম।এরপর সকালে আমি ভাবি ও একটু ঘুমাবে আমি ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিবো। ও ঘুমাচ্ছে আমি ওঠে বসলাম সে ওঠে বসে যাবে। কিছু করার নাই। ওকে কোলে নিয়ে কোনো ভাবে ব্রাশ করে না খেয়ে ওর খাওয়ার ব্যবস্থা করি।
এরপর ওকে খাইয়ে দিয়ে কখন বারো কিংবা একটা বেজে যায় আমি বুঝতে পারি না।এরমধ্যে আমি কিছু খাওয়ার চেষ্টা করি।আমি খাইতে গেলে সে যা করে তা ভেবে মাঝে মাঝে আমি না খেয়ে বসে থাকি।আমি যা খাবো সেটা হোক ভাত হোক রুটি সেটা নিবে সারা ঘরে ফেলে নোংরা করবে। না ধরতে দিলে কান্না করবে।
দেড়টার দিকে ওরে গোসলের জন্য রেডি করি।গোসল করাতে নিলে আসবে না,এটা ধরবে সেটা ধরবে এমন করে আড়াইটা বেজে গেলো।এরপর গোসল করি ঘরে আনলাম সে গা মুছবে না।তেল দেবে না,প্যামপাস পড়বে না এমন কত কি করবে।ধরে ধরে এসব করতে করতে তিনটা বেজে যাবে।এরপর কিছু খাইয়ে ঘুম পাড়াতে সাড়ে তিনটা,পনে চারটা বেঝে যাবে।
ও ঘুমানোর পর রুম পরিস্কার করে ওর কাপড়চোপড় ধুয়ে গোসল করতে পাঁচটা বেজে যাবে।এরপর নিজে কিছু নাস্তা খেয়ে কফি বানাতে যায়।কোনোদিন কফি বানানো শেষ হয় কোনদিন তার আগেই ওঠে যায়।ওর বাবাতো বলেই ঘুম থেকে ওঠলে আমার মেয়ে কুইন হয়ে যায়।আর এ কুইন এর মেজাজ থাকে চরমে। কোন কিছুতে মন ভরে না।ওকে এক দেড় ঘন্টা কোলে রাখতে হবে।কিংবা ওর সাথে খেলতে হবে।আমি যদি মনে করি বাথরুমে যাবো এটাও সম্ভব হবে না।এভাবে ছয়টা কি সাড়ে ছয়টা বেজে যায়। এরপর মানহার বাবা চলে আসে।
এবার করবো রান্না।ওরা বাবা মেয়ে খেলা করবে আমি কাজ শুরু করবো।তরকারি কাটতে শুরু করলাম ওর বাবা বলবে মানহা ''পটি'' করেছে চলে আসো। পরিস্কার করে আবার কাজ শুরু করলাম ওর এখন খিদে লেগেছে খাইয়ে যাও।এমন করে করে কাজ আগাচ্ছি এমন সময় মানহা আর বাবার সাথে থাকবে না তখন সব প্রস্তুত থাকলে মানহার বাবা রান্না করে নইলে আবার বিরতির পর কাজ শুরু।
এমন করে রান্না করতে সাড়ে দশটাতো বাজবেই। এরপর ওরে অল্প ভাত খাওয়াবো।কিন্তু সেই অল্প খেতে গিয়ে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে আমাকে হয়রান তো করবে সাথে আধা ঘন্টা সময় নষ্ট করবে।এরপর আমরা খাওয়া দাওয়া করবো।তখন সে কখনো পানি ফেলে দেবে, কখনো তরকারি ফেলে দেবে এসব করতে করতে আমরা কোন মতে খেয়ে শেষ করে ওকে ঘুম পাড়াতে চেষ্টা করবো।
ও তখন খেলাধুলায় ব্যস্ত হবে।খেলা কি হবে খাটের কাঁথা বালিশ সব নিচে ফেলে গড়াগড়ি করবে।সুযোগ ফেলে জালনা দিয়ে বাইরে ফেলে দিতে ভুলে না।এভাবে একটা দুইটা বাজলে ওর ঘুম আসেতো ঠিক আবার ঐ কাজ গুলো ফিরে আসে।
আমি কাজ কি করেছি তা জানি না কিন্তু আমার কি শান্তিতে ভাত খাওয়ার সুযোগ আছে। শুধু আমি নই প্রত্যেকটা মা এমন সময় পার করে।আমি শহরে থাকি, শ্বশুর,শ্বাশুড়ী,ননদ কেউ নেই তাই কেউ কিছু বলে না।
কিন্তু গ্রামের একটা বউকে এসবের জন্য অনেক কথা শুনানো হয়।কথায় কথায় বলা হয় সারাদিন কি করে। এটা একে বারেই উচিত নয়।একটা বাচ্চার মা হওয়া সহজ কাজ নয়।
Congratulations @shaonashraf!
You raised your level and are now a Minnow!
Check out our last posts: