রক্তের সম্পর্ক

আমার মেজু ফুফুর ছোট ছেলে।ওর নাম ফাহাদ।সে আমার থেকে তেরো চৌদ্দ বছরের ছোট।ইন্টার পরীক্ষার পর আমি যখন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন ওর বয়স পাঁচ অথবা ছয় হবে।প্রথম শ্রেণীতে পড়ে তখন।ও খুব ফর্সা।স্কুল থেকে আসার সময় ওদের পাশের বাড়ির এক দুষ্টু ছেলে ওর দুই গাল টেনে দিয়ে নাকি বলে, দেখিতো তোর গাল গুলো লাল হলে তোকে কেমন দেখায়।এতো জোরে গাল টিপে টেনেছে যে, ফর্সা সাদা গাল গুলো লাল হয়ে গেছে।

ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে এসেছে।ওর বড়বোন এটা দেখে কেঁদে ফেলেছে। তারপর আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে চলতো দেখি তার গাল টেনে লাল করে দেখে আসি তাকে কেমন দেখা যায়।আমার ফুফু নিষেধ করতেছে যেতে।ওনার মতে ঝামেলা করার কি দরকার। এদিকে আসলে বলে দিবে।কিন্তু সে আমাকে নিয়ে সেই ছেলেদের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের কাছে বিচার দিয়ে এসেছে।

বাড়িতে আসার পর দেখি আমার ফুফাতো ভাই খুব খুশি কারণ বোন থাকে বকে এসেছে। এই শেষ বার আমি ওকে দেখেছিলাম। এরপর অনার্স করতে ঢাকা চলে আসি।ঢাকা থেকে তিন মাস ছয় মাস পর বাড়িতে যায় আবার দুই-চার দিন থেকে ঢাকা ফিরে আসি তাই আর ফুফুর বাড়ি যাওয়া হয়নি। ওরাও আমাদের বাড়িতে তেমন আসেনি।আসলেও আমি বাড়িতে থাকার সময় আসেনি।

এরপর অর্নাস শেষ হলো চলে এলাম মালয়েশিয়া।দীর্ঘ সময় কেটে গেলো, ওর সাথে ফোনেও কোনদিন কথা হয়নি।গতবছর ফুফু দ্বিতীয় বারের মতো ক্যান্সার ধরা পড়লো তখন ফুফুর সাথে কথা বলছিলাম তখন ফুফুর হঠাৎ শরীর খারাপ লাগছিলো তখন আমার ওর সাথে অল্প সময় কথা হয়।এর কিছু দিন পর ফুফু মারা গেলো।ফুফু মারা যাওয়ার আট নয় মাস পর বড় আপা একদিন ফোন দিয়ে বললো ফাহাদ তোর সাথে কথা বলতে চায়।

ও নাকি ব্যাচেলর করার জন্য মালয়েশিয়া যেতে চায়,আমি আপাকে বললাম তুই ওকে আমার নাম্বার দিয়ে দিস।এরপর দুই তিন দিন পর ফাহাদ আমাকে ফোন দিলো।আমি ওকে মালয়েশিয়ার সব পরিস্থিতি বললাম। সে আসতে চায়।যখন সে আসতে চাইলো আমি সব প্রসেসিং এর ব্যবস্থা করে দিলাম।এইতো ফেব্রুয়ারির দিকে ওর সাথে প্রথম কথা হলো।এরপর ফোনে ওর সাথে কথা হতো।মানে প্রসেসিং করতে যা যা করা লাগে সব হলো।সব ঠিক হওয়ার পর,আগষ্টের সতেরো তারিখ ফ্লাইটের টিকেট কাটলো।

ঢাকা থেকে সন্ধ্যা সাতটায় ফ্লাই করে রাত একটায় কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে লেন করে।আমরা তিনজন ওকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট গেলাম। আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছতেই ফাহাদ ফোন করেছে সে বের হয়ে পাঁচ নাম্বার গেইটে বসে আছে।

আমরা যাওয়ার সাথে সাথে সে দৌড়ে এসে আমাকে ধরলো।সেই পাঁচ বছর বয়সের পর কোনো দিন দেখেনি।ছবিতেও দেখেনি।কিন্তু কি আশ্চর্য।চিনতে দুই মিনিট সময় লাগেনি।এরপর বাসায় নিয়ে আসলাম।খাওয়া দাওয়া করালাম।ও একটু বেছে বেছে খায়।আমি ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম খাবার কেমন লাগে।সে আমাকে বলছিলো, আমি যে বিদেশে এসেছি নতুন কোন খাবার খাচ্ছি এমন মনে হয় না। প্রতিদিন মনে হয় বাড়ির খাবার খাচ্ছি।

ও আমাকে তখন এভাবে বলছে ''আপা আমি কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে খাবার খেতে দিলে বার বার দেখি মনে হয় কিভাবে রান্না করছে কে জানে,অথচ তুমি খাবার দিচ্ছো এ চিন্তা একবারো মাথায় আসেনি।কি একটা বিশ্বাস মনে"।

ও এ কথাগুলো বলার পর আমিও ভাবলাম ও আসছে,নতুন কেউ। যেখানে আট বছরেও আমার বেডরুমে কেউ ঢুকেনি। সে ঢুকছে বসছে । আমার কোন রকম অস্বস্তি হচ্ছে না।বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি মনে হচ্ছে না সে আমার পরিবারে নতুন কিংবা বাইরের কেউ।ওকে আমার পরিবারের অংশ হয়ে গেছে একদিনে।

আজ ফাহাদ দুলাভাইয়ের সাথে বাইরে গেলো।বাইরে থেকে আসার পর ওর দুলাভাই বলছে তোমার ভাই আচার-আচরণ চলা ফেরা সব তোমার মতো।আমি খেয়াল করছি ওর চলাফেরা খাওয়া দাওয়া,আচরণ সব কিছুতে যেন আমাদের চার ভাইবোনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। এটা দেখে বার বার মনে হচ্ছে এটাই বুঝি জীনগত মিল।জীনগত বৈশিষ্ট্য চাইলেও অস্বীকার করা যায় না।জীবনে দেখা হোক আর না হোক জীনগত বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠবেই।

bother-captions-for-instagram.jpg