খোলস

ছোটবেলায় যখন পুকুর পাড়ে কিংবা ক্ষেতের আইলে দৌড়াতাম চোখে পড়ত সাদা প্লাস্টিকের মতো বস্তু। সেই ছোটবেলায় শিখেছি এটা সাপের খোলস।কিছু দিন পর পর সাপ খোলস ছাড়ে।এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় আমি যাবো না আমি বলবো আমার ধারণার কথা।

আমার মনে হয় এই খোলস পাল্টিয়ে তারা আগের সব ভুলে আবার নতুন করে জীবন শুরু করে।আসলে ওদের তো মনের কোনো ঝামেলা নেই শরীরটায় সব তাই হয়তো সেটা সম্ভব হয়।শুধু সাপ কেনো চিংড়ি তার খোলস কিছু দিন পর পর পরিবর্তন করে।গরু ছাগলেরও লোম পরিবর্তন হয়। সেই ছোট থেকে আমার প্রশ্নছিলো আচ্ছা মানুষ খোলস পরিবর্তন করে না কেনো।কি ভালো হতো যদি কিছু দিন পর পর চামড়া পরিবর্তন করতে পারতাম।

এরপর "আলিফ লায়লা"য় একদিন দেখলাম মানুষ চামড়া বদল করে রাক্ষস হয় আবার মানুষ হয়।তখন আমি চোখ বন্ধ করে অনুভব করতাম সত্যিই যদি এমন হতো।আস্তে আস্তে বড় হচ্ছি আর মনের জটিলতা বুঝতে পারছি।একটা পর্যায়ে মনে মনে বলা শুরু করি আসলে সৃষ্টি করেছেন যিনি,তিনি সব বুঝেই করেছেন। মনের ভিতর এতো জটিলতা নিয়ে খোলস পরিবর্তন করে কি হবে? আদৌ কি কোন কাজে আসবে।মনের প্যাঁচ বলতে আমি খারাপ কিছু বুঝাচ্ছি তেমন কিন্তু নয়।আসলে আমি মানুষের জীবনের জটিলতা অন্য সব প্রাণী থেকে আলাদা সেটায় বুঝাতে চেয়েছি।

মাঝে মাঝে আমার খুব অসহায় মনে হয় যখন মানুষের পরিস্থিতি চিন্তা করি।আহারে বেচারা মানুষ মনের ভিতর কত কিছু যে লুকিয়ে রাখে তা লিখে শেষ করা সম্ভব না।সবাই যে ইচ্ছে করে এমনটা করে তা কিন্তু নয়।মানুষের জীবনে যে কতো বাধ্যবাধকতা তা হিসেব করে বলা যাবেনা। তাই না চাইলেও একটা খোলসের ভিতর আটকে রাখতে হয় নিজেকে।আসলে সব মানুষই একটা খোলসের ভিতর বাস করে সে যেমনি হোক।

চলুন আজ কিছু মানুষের গল্প বলা যাক।ছোটবেলা থেকেই শুরু করি।আমার একটা খুব ভালো বন্ধু ছিলো যার সাথে ছিলো আমার গলায় গলায় ভাব।ও আমার সমবয়সী। সম্পর্কে আমার ফুফু হয়।ছোটবেলায় বন্ধুদের মাঝে ঝগড়া হয় কিন্তু ওর সাথে আমার কোনো দিন ঝগড়া হবে না।আসলে ওর সাথে আমার মতের অমিল হতো না। অমিল হতো না, না বলে বলতে পারি ও কোনো মত দিতো না। আমার হ্যাঁ তে হ্যাঁ আর না তে না বলতো।

আমরা দুইজন খুব গল্প করতে পছন্দ করতাম। ও রাতে আমার সাথে ঘুমাতো। ওদের একটা ছোট ছোট খাটে মা বাবা ভাই আর চারজন ঘুমাতে হতো।এটা ওর পছন্দ ছিলো না।তাই এসে আমার সাথে ঘুমাতো।ওর সাথে আমার তখনি কথা হতো।দিনের বেলা ওর সাথে তেমন কথা হতো না।কারণ আমি আমার কাজে ব্যস্ত থাকতাম। ও একটু আলসে ছিলো ।

আমি যে সব কাজ করতাম এসব জায়গায় সে যেতো না।আমি আমার মা-বাবার তৃতীয় কন্যা সন্তান।আমার ভাই আমার থেকে প্রায় দশ বছরের ছোট সে তখন ছিলো না।আমি অনেকটা ঘরের ছেলে ছিলাম। এটা আমার প্রাইমারীতে পড়ার সময়ের কথা বলছি।সকালে স্কুলে যেতাম। স্কুল থেকে এসে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতাম, গরুর ঘাস কাটতাম, হাঁসকে খাওয়াতে শামুক ঝিনুক কুড়াতাম এছাড়াও আমাদের কৃষি জমিতে সব ধরনের কাজই করতাম।

তাই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব ঘুমাতে গিয়ে গল্প করায় ছিলো। সে তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে আমি চতুর্থ শ্রেণীতে।সমবয়সী হলে আমি এক শ্রেণী উপরে আমি আবার ক্লাস ওয়ানে পড়িনি কিনা।সরাসরি ক্লাস টুতে ভর্তি হয়েছিলাম।ও আবার বালিকা বিদ্যালয়ে পড়তো আমি আমাদের এখানের ছেলেমেয়েদের সম্মিলিত স্কুলে পড়তাম। আমাদের সব বিষয়ে কথা হতো।

আমার পরীক্ষার খাতা দিয়েছে গণিত আমি আম্মাকে দেখাচ্ছিলাম।তেষট্টি পেয়েছি। সেও দেখেছে এরপর যখন আমরা শুয়ে গেলাম ও আমার সাথে গল্প করছে আমি সব থেকে বেশি নাম্বার পেয়েছি ইসলাম শিক্ষায় ৮৬।আমি মনে মনে খুবি ব্যতীত হলাম সবচেয়ে বেশি ৮৬ আর আমি অংকে সবচেয়ে বেশি পেয়েছি তেষট্টি।

পরদিন শুক্রবার ছিলো। আম্মা আমাকে কিছু একটা আনার জন্য ওর মার কাছে পাঠালো।
গিয়ে দেখি ও বাড়িতে নেই।সকালে নাকি ওর নানী এসেছিলো ওকে নিয়ে ওর খালা বাড়িতে গেছে।বিকেলে চলে আসবে। ওর মা ঘর পরিস্কার করছে।খাটের তোষক ওঠিয়ে বাইরে নিয়ে রাখলো।আমি দেখি তোষকের নিছে পরীক্ষার খাতা।দেখে আমার চোখ কপালে। বাংলায় বারো পেয়েছে, গনিতে শূন্য ইংরেজিতে সাত তবে কথা সত্য বলেছে সবচেয়ে বেশি সে ইসলাম শিক্ষায় পেয়েছে সেটা ২৬। আমি দেখে যা নিতে এসেছিলাম নিয়ে চলে গেলাম।ঐদিন রাতে সে যথারীতি আমার সাথে ঘুমাতে এলো------।চলবে...


astro-tips-3-1200x675.jpg