বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী পাট থেকে এমন এক ধরনের পলিমার তৈরি করেছেন যেটি দেখতে পলিথিনের মত হলেও সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব। এই পলিমারের তৈরি ব্যাগ ফেলে দিলে পচে গিয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুবারক আহমেদ খান ছয় বছরের গবেষণার পর এই পলিমার তৈরি করেন। তার এই উদ্ভাবন পাট ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এর সোনালী অতীতকে ফিরিয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। মুবারক ২০১০ সালে বাংলাদেশ সায়েন্স একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
রাজধানীর ডেমরার রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিমাণে তৈরি হচ্ছে পাট থেকে তৈরি পলিমার ব্যাগ। গত বছরের মে মাসে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় নতুন ধরনের এই পলিমার ব্যাগ তৈরির উদ্যোগ নেয়। এর নাম দেওয়া হয়েছে “সোনালী ব্যাগ”।
পাটের আঁশ থেকে সেলুলোজকে আলাদা করে এই পলিমার তৈরি করা হচ্ছে। দেখতে সাধারণ পলিথিনের মত এই ব্যাগগুলো তুলনামূলকভাবে অধিক টেকসই ও ভার বহনে সক্ষম। পচনশীল হলেও এই ব্যাগের ভেতর বাতাস বা পানি প্রবেশ করতে পারে না।
পরিবেশ বান্ধব এই ব্যাগ সম্পর্কে মুবারক বলেন, পলিথিনের তুলনায় পাটের পলিমার দেড় গুণ বেশি ভার বহন করতে পারে। এটি পানি শোষণ না করলেও ফেলে দেওয়ার তিন থেকে চার মাসের মধ্যে পচে মাটির সাথে মিশে যায়।
তিনি জানান, পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ থেকে পলিথিন তৈরি করা হয়। দামে সস্তা ও থার্মো-মেকানিক্যাল বৈশিষ্ট্যের কারণে পণ্যের মোড়কে পলিথিন ব্যবহার করা হয়। তবে পচনশীল না হওয়ায় এটি এখন গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“অন্যদিকে সেলুলোজ জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাটের পলিমার, ফলে পচনশীল। শুরুতে এর উৎপাদন খরচ বেশি হলেও ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদন শুরু হলে পলিথিনের মতই খরচ কমে যাবে।
২০০২ সালের ১ জানুয়ারি সরকার রাজধানীতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওই একই বছর ৩১ মার্চ মার্চ সারা দেশে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু কম মূল্যে পরিবেশ বান্ধব বিকল্প না থাকায় ও সরকারি তদারকির দুর্বলতার কারণে দেশে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।