মেঘ রোদ্দুরের খেলা-সাত

in #story6 years ago

IMG_20180723_000623.jpg

টেলিফোন রাখার পর রাকিব অনেকক্ষণ ধরেই তার ছোট ফুফুর শেষের কথাগুলো নিয়ে ভাঙচুর করল। উনিশ বছর। চার বছর বয়সে ফেলে চলে যাওয়া। এগারো-বারো বছর বয়সে শেষ দেখা। আজ উনিশ বছর পর তাঁর আবার কথা বলা!
বাইরের রোদটা এখন কটকটে হলুদ রং ছড়াচ্ছে। হয়তো পাশের ডুপ্লেক্সটা কটকটে হলুদ রঙের বলে রোদটাকেও কটকটে হলুদ দেখাচ্ছে। প্রকৃতিতে শীতের কুয়াশার সরু সরু দেখা। ওক গাছে পাতাহীন ডগাটা নড়ছে—তিরতির, তিরতির।
রাকিব কাত হয়ে জানালার দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। মাথার ওপর দেয়াল ঘড়িটা চলছে টিক টিক, টিক টিক। ম্যাকফার্লেন স্ট্রিট থেকে হ্যামিল্টন সিটি সেন্টার খুব বেশি দূরে নয়। হেঁটে গেলে বড়জোর বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট লাগে। সিটি সেন্টারের কাছাকাছি কোর্ট হাউসের পাশে একটা বেশ উঁচু গির্জা। গির্জায় প্রতি এক ঘণ্টা পরপর জোর শব্দে ঘণ্টা বাজায়। দিনের বেলায় সেই ঘণ্টার ধ্বনিটা এত স্পষ্ট না হলেও মধ্যরাতে তা বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এক, দুই, তিন, চার...ঠিক বারোটা ঘণ্টার ধ্বনি।
প্রায়ই মধ্যরাতের আগে রাকিবের ঘুম আসে না। সে তখন গির্জার ঘণ্টার ধ্বনিগুলো গোনে—এক, দুই, তিন...এগারো, বারো।
মধ্যরাতে গির্জার ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে শুনতে কিংবা কোনো পড়ন্ত বিকেলে নদীর ধারের ওক গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বা পার্কের কোনো বেঞ্চিতে নির্জনে তার যে কখনো মার কথা মনে পড়েনি, তা নয়। বহুবারই মনে পড়েছে।
একটা মাটি রঙের সাদা সুতি শাড়ি। শাড়ির জমিনে রূপালি সুতোয় কাজ করা। শাড়ির পাড়টাও রূপালি। মা চার-পাঁচ মাস পরপর তাকে দেখতে আসতেন। তিনি এসেই তাকে স্কুল থেকে নিয়ে নরেশের মিষ্টির দোকানে চলে যেতেন। চার টাকা দামের সবচেয়ে বড় রসগোল্লাগুলো কিনতেন। নিজের পিরিচে একটা-দুইটা রসগোল্লা এমনিই পড়ে থাকত। কিন্তু তিনি ছেলের প্লেটের রসগোল্লাগুলো ছোট ছোট করে কাটতেন। টিনের পিরিচে চামচের শব্দ হতো টুং-টাং, টুং-টাং, টুং-টুং!
সেই এগারো কী বারো বছর বয়সে তাদের শেষ দেখা।
বাইরে রোদটা মেঘের আড়ালে পড়ে কখনো দিঘল ছায়া ফেলছে, কখনো স্পষ্ট হচ্ছে। বাইরে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। ক্যাবেজ গাছের চিরল পাতাগুলো কাঁপছে হৃৎপিণ্ডের কাঁপুনির মতো। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে—টিক টিক, টিক টিক। পাতাহীন শীতের ওক গাছের ডালে আবারও কয়েকটা চড়ুই পাখি এসে বসেছে। চড়ুই পাখিগুলো উড়ছে আবার বসছে—ফুড়ৎ ফুড়ৎ, ফুড়ৎ ফুড়ুৎ।
রাকিবের কাচের জানালা গলে দৃষ্টিটা বেশ কয়েকবার উঠানামা করল। দৃষ্টির উঠানামা সঙ্গে শীতের রোদটাও কেমন কেঁপে উঠল। একটা হুড তোলা রিকশা। দিনের মধ্যাহ্ন ভাগ। মাটি রঙা সাদা একটা শাড়ি। শাড়ির জমিনে রূপালি কাজ, শাড়ির পাড়টাও রূপালি!
মেঘ রোদ্দুরের খেলা-আট
বিকেল প্রায় তিনটা বাজে। সেকেন্ডের কাঁটাটা অনবরত চলছে-টিক টিক, টিক টিক। রাকিব সেদিকে তাকিয়ে রইল। এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, তিন সেকেন্ড! এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট!...ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দে যেন সে ভেতরের স্পন্দন খুঁজে পাচ্ছে। যেন ভেতরের কাঁটাটা দম নিয়ে অনবরত চলছে তো চলছেই। দম শেষ, স্পন্দন শেষ!
রাকিব কম্বল ঠেলে উঠে বসল। দৃষ্টি জানালা গলে বাইরে ফেলল। বাইরে হলুদ রোদে এখন সোনালি আভা। দু-একটা ছেঁড়া মেঘ অনেক দূরে দূরে। এ ছাড়া আকাশের সমস্তটাই নীল। ওক গাছের পাতাহীন ডাল থেকে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ এখনো আসছে। লনের অদূরেই রোদ খসে পড়া একটা বাকলহীন গাছ।
রাকিব গাছটার নাম জানে। রাবার গাছ।
বাকল ওঠা রাবার গাছটার দিকে তাকাতেই তার মনে হলো, সাদা দেহটার অর্ধেকটা মসৃণ করে রাবার গাছটা যেন শীতের রোদে যুবতীর রোদ পোহানোর মতোই রোদকে গায়ে মাখছে। যেন পৌষের বিকেলের হলুদ রোদে যুবতীর মসৃণ পিঠ।
রাকিবের তৎক্ষণাৎ তার প্রথম দিকের লেখা একটা কবিতার কয়েকটা লাইন মনে পড়ে গেল। সে কবিতাটি তাদের বাড়ির উত্তরের ভেতর বাড়ির পুকুর পাড়ের একটা বাকল ওঠা গাছ দেখে লিখেছিল।
‘শীতের শুকনো জলহীন ফাটা চর যদি জমির বাকল হয়
মাটির গভীর থেকে বের হওয়া অচিন পুরুষের শ্বাসটুকু
সাপের ফণার মতো যুবতীর রোদেলা হলুদ পিঠ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
খসে পড়া আঁচলে কেমন বাকলহীন শরীর হয়।...’
কবিতাটি সেই কত বছর আগে একটা স্কুল ম্যাগাজিন ছাপা হয়েছিল। ম্যাগাজিনটার নাম ছিল ‘রক্ত পলাশ’। বিজয় দিবসের বিশেষ ম্যাগাজিন। ‘রক্ত পলাশ’ নামটা বদির আহমেদ স্যারের দেওয়া ছিল। কবিতার নাম ছিল ‘বাকল’।
কবিতাটি ছাপা হওয়ার পর বদির আহমেদ স্যার একদিন ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘রাকিব, কবিতা লেখা ছাড়িস না। তোর হাত আছে। জানিস, একসময় আমি প্রচুর কবিতা লিখতাম। পরে আর ধরে রাখতে পারিনি। এখন তোদের ক্লাসে বাংলা পড়াই।’
রাকিব নড়ে চড়ে বসল। দৃষ্টি ভেতরে ও বাইরে উঠানামা করল। ভাবল, বদির আহমেদ স্যার এখন কোথায় আছেন? বেঁচে আছেন তো? কতকাল দেশে যাওয়া হয় না। গ্রাম তো বহুদূর!
কবিতাটা ছোট চাচিরও বেশ পছন্দ হয়েছিল।
এক জ্যোৎস্নার রাতে দরজার পাটাতনে পাশাপাশি বসে ছোট চাচি বলে ওঠেন, রাকিব, তোর কবিতাগুলো আজকাল বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
রাকিব জিজ্ঞেস করে, কেমন?
ছোট চাচি রক্ত পলাশ ম্যাগাজিনটা নাড়তে নাড়তে বলেন, তুই কবিতায় কিছু একটা মিন করছিস। তোর কবিতা আগের মতো আর সরল হয় না।
রাকিব জবাব না দিয়ে হাসে।
সে রাতে বাইরে ফকফকা, ফালি ফালি হওয়া ধবল জ্যোৎস্না ছিল। আকাশে ছিল পূর্ণ চাঁদ। চারদিকে ছিল নিস্তব্ধতা। পাশের আমবাগান থেকে একটানা ঝিঁঝি পোকার ডাক আসছিল—ঝিঁইই, ঝিরিৎ ঝিরিৎ, ঝিঁইই। মাঝে মধ্যে দাদির খুক খুক কাশির শব্দ।
ছোট চাচি ও রাকিব সেই ধবল জ্যোৎস্নার রাতে মধ্যরাত অবধি ঘরের পাটাতনে বসে আর কোনো কথা খুঁজে পায়নি। দুজনই বাকিটা সময় নীরব ছিল।
এর কয়েক মাস পরেই ওরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সম্পর্কের মধ্যে পবিত্রতা-অপবিত্রতা বলতে কোনো যথার্থ মানে আছে কিনা, রাকিব জানে না। কিন্তু সে রাতের সেই ধবল ফালি ফালি হওয়া জ্যোৎস্নার মতো বিচ্ছিন্ন হওয়াটা যে অমোঘ নির্দিষ্ট করা ছিল, ওটা সে জানতে একটু সময় নিয়েছিল।
রাকিব বিছানা ছেড়ে শরীরের আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে উঠে দাঁড়াল। হাত দুটো সামনে তুলে আঙুলগুলো একটা অপরটার ভাঁজে ফেলে মটকা ফোটাল—মট মট মট। শব্দগুলো মুহূর্তে বিলীন হতেই সে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল। বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে সে দরজার ফাঁক গলে আতিকের রুমে তাকাল। আতিক তখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। সে দুই রকম করে নাক ডাকছে। নিশ্বাস নেওয়ার সময় একধরনের শব্দ করছে—ঘড়-ড়-ড় ঘড়ত। নিশ্বাস ছাড়ার সময় শব্দ করছে-ফিস-স-সিত।
বাথরুম সেরে হাতমুখ ধুয়ে রাকিব রুমে ঢুকে প্যান্ট-শার্ট পরল। শার্টের ওপর একটা ভারী সোয়েটার ও এর ওপর একটা লেদারের জ্যাকেট। গলায় মাফলার পেঁচিয়ে নিল।
ঘড়ি দেখল। বিকেল প্রায় পৌনে চারটা। সূর্যাস্তের আরও ঘণ্টা দেড়েকের মতো বাকি আছে। নিউজিল্যান্ডের শীতকালের এ একটা সমস্যা। গ্রীষ্মকালে যেখানে সন্ধ্যা হয় নয়টায় বা সাড়ে নয়টায়, শীতে পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা বাজতে না বাজতেই তড়িঘড়ি করে সন্ধ্যাটা নেমে আসে।
রাকিব বাসা থেকে বের হতেই দেখল, বিকেলের রোদটা তির্যকভাবে গাছের ফাঁক গলে ফুটপাত, রাস্তা, ড্রাইভওয়ে ও প্রতিটা বাড়ির ঘাসের লনে হেলে পড়ছে।
রাকিব ম্যাকফার্নেল স্ট্রিট ধরে পশ্চিমে হাঁটতে শুরু করল। বিকেলের সোনালি রোদ তার চেহারায় এসে পড়েছে, কেমন নরম স্পর্শ দিচ্ছে। কোনো কোনো বাড়ির চিমনি দিয়ে সরু সরু রেখা করে ধোঁয়া উঠছে। কেউ কেউ ছোট্ট কাঁচি চালিয়ে বাড়ির সামনে শীতের বাগানের পরিচর্যা করছে—ক্যাঁচ, ক্যাঁচ, কিট, কিট, ক্যাঁচ, ক্যাঁচ।
নিউজিল্যান্ডের মানুষ খুব বাগান প্রিয়। এ জন্য এখানকার প্রায় প্রতিটা বাড়ির সামনে এক টুকরো হলেও একটা বাগান দেখা যায়। যাদের বাড়িতে লন নেই বা যারা অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, তারাও ব্যালকনি বা কার্নিশে ঝুলিয়ে ছোট্ট একটা বাগান করে রেখেছেন।
রাকিবের বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবী লায়লা আঞ্জুম মিতুরও খুব বাগান করার শখ ছিল। সে তাদের ভূতের গলির বাসার ছাদে এক অদ্ভুত সুন্দর বাগান করেছিল।
মাঝে মধ্যে মিতু রাকিবকে ডেকে নিত। বাগানের পাশে ছোট্ট একটা টেবিল ও দুটো কাঠের চেয়ার ছিল। সেখানে বসে সে তার নতুন লেখা কোনো কবিতা শুনত।
রাকিব একদিন আবিষ্কার করে, মিতুর কবিতা শোনা ছিল বাহানা। আসলে সে তার কাছে কী এক নির্জনতা খুঁজে বেড়াত। একান্ত নির্জনতা।
কিন্তু রাকিবের কাছে মিতুর সেই নির্জনতা খোঁজার প্রত্যাশা ছিল সামান্য দূরত্বে, দুটো কাঠের চেয়ার ফেলে রাখার মতো। তাতে সম্পর্ক ও প্রাপ্তি ছিল ছোট্ট টেবিলটার মতোই একটা বাধা।
শায়লা আঞ্জুমান মিতু রাকিবকে এখনো মাঝে-মধ্যে ইমেইল করে। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠায়। কখনো কখনো মোবাইলে ফোন করে। ওরা বন্ধুত্বটা এখনো ধরে রেখেছে। কিন্তু ভালোবাসা?
ভালোবাসা! ভালোবাসা!...রাকিব একটা ভারী নিশ্বাস ফেলে সামনে তাকাল। তার এত কিছু পরনে, তবুও বিকেলের হেলে পড়া নরম রোদে কেমন শীত শীত লাগছে। নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপে, বিশেষ করে হ্যামিল্টনে কখনো তুষার পড়ে না। বড়জোর তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে গেলে কোনো শীতের সকালে লনের ঘাসের ওপর হালকা স্তরের বরফ জমতে দেখা যায়। সেই বরফ ভাঙার শব্দের একধরনের আনন্দ আছে—ময়চ মচ, ময়চ মচ!
রাকিব দুই হাতে দুবার মুখ ঘষল। ম্যাকফার্লেন স্ট্রিটটা খুব লম্বা ও দিঘল। স্ট্রিটের স্থানে স্থানেই শীতের পাতা ঝরা ম্যাপল গাছগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফুটপাতে অসংখ্য ম্যাপল পাতা। দুপুরের বৃষ্টির কারণে ম্যাপল পাতাগুলো এখনো কিছুটা ভেজা ভেজা। তবুও সোনালি রঙের ম্যাপল পাতা তার পায়ের নিচে পড়ে ভাঙছে-মচ মচ, ম-য়-চ ম-য়-চ, মচ মচ।
পায়ের নিচে ম্যাপল পাতা ভাঙার অনুভূতিটা সে নিউজিল্যান্ড আসার আগেই জেনে এসেছে। তার যখন নিউজিল্যান্ডের ভিসা হয়ে যায়, তখন অস্ট্রেলিয়া থেকে তার ছোট ফুপা ফোনে এই অনুভূতির কথা বলেছিলেন। আর এই ম্যাপল গাছের চরিত্রটাও বিচিত্র। একেক সময় একেকটা রূপ ধরে। নিউজিল্যান্ড চার ঋতুর দেশ। এই চার ঋতুতে ম্যাপল গাছ চারটা রূপ ধারণ করে। শীতে ম্যাপল গাছের সমস্ত পাতা ঝরে উদোম হয়ে যায়। বসন্ত আসতেই কেমন তড়িঘড়ি করে কাঁচা টিয়ে রঙা পাতায় সমস্ত গাছটা ছেয়ে যায়। মধ্য গ্রীষ্মে এসে পাতাগুলো গাঢ় সবুজ হয়ে ওঠে। শরতে গাছের সমস্ত পাতা সোনালি রং ধারণ করে।
রাকিব হাঁটছে সূর্যের দিঘল ছায়া একে একে পেছনে ফেলে। সে তার হাত দুটো এখন লেদার জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে। সে হাঁটছে সামান্য ঝুঁকে, লম্বা লম্বা পা ফেলে। তার কান অবধি মাফলার পেঁচানো। অসংখ্য চড়ুই পাখি বিভিন্ন গাছের ডাল থেকে ডাকছে। অসংখ্য ঝিঁঝি পোকার ডাকও আসছে-ঝিঁইই, ঝিরিত ঝিরিত, ঝিঁইই। এখানে দিন নেই রাত নেই একটু নির্জনতা পেলেই পরিবেশটা ভুতুড়ে করে ঝিঁঝি পোকা ডাকে।
ম্যাকফার্লেন স্ট্রিট ধরে কিছুক্ষণ পর পর একটা-দুটা গাড়ি আসা-যাওয়া করছে। দুই-একজন ফুটপাতে বৈকালিক হাঁটা হাঁটতে বের হয়েছেন। ফুটপাতে দুই-একটা সাইকেলেও। এই সাইকেলগুলোর পেছনে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন ফ্লায়ার, ব্রোসার ও কমিউনিটি পত্রিকা। কেউ কেউ বিভিন্ন লেটার বক্সে বিলি করছে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড উইকএন্ড এডিশন কিংবা ওয়াইকাটো টাইমস বিভিন্ন লেটার বক্সে গুঁজে দিচ্ছে।
সাধারণত বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা বাসায় বাসায় লেটার বক্সে এসব সুপার মার্কেটের ফ্লায়ার, বিভিন্ন ব্রোসার, কমিউনিটি পত্রিকা বা দৈনিক পত্রিকাগুলো সাইকেল করে বিলি করে। ওরা স্কুল থেকে ফিরে চারটা মুখে দিয়ে এসব পত্রিকা বা ফ্লায়ারগুলো নিয়ে বের হয়। সপ্তাহ শেষে ওদের হাতে ভালো টাকাপয়সাই আসে। দুই-তিন মাস জমিয়ে স্কুল ছুটি হলে ওরা ওসব টাকাপয়সা দিয়ে ক্যাম্পিং বা পিকনিকে যায়। বাবা-মাকে সঙ্গে করে নিয়ে মুভি দেখে। প্লে-স্টেশন, এক্স-বক্স কিংবা কম্পিউটার গেইম কেনে। ওরা নিজেদের শখ-আহ্লাদ মেটাতে কখনই পিতামাতার কাছে হাতে পাতে না।
রাকিব বাংলাদেশে দেখেছে, এ রকম একই সমবয়সী স্কুলের ছেলেমেয়েরা ঢাকা শহর বা বাংলাদেশের ছোটবড় স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে গলির মাথায়, রাস্তার মোড়ে, বাড়ির ছাদে আড্ডা মারতে বের হয়। সিগারেট ফুঁকে অযথা সময় নষ্ট করে। কিন্তু ওদের স্কুল ছুটি হলে দেখা যায়, ওরা বিভিন্ন শখ-আহ্লাদের মেটাতে বাবা-মার কাছে হাত পাতে। চাপ প্রয়োগ করে। নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের এসব শখ-আহ্লাদ মেটাতে না পেরে কষ্ট পায়, নিজেকে অপাঙেক্তয় ভাবে।
রাকিব পশ্চিমমুখো হয়ে সূর্যের ঠিক মুখোমুখি হাঁটছে। ছায়াটা তার পেছনে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। দিঘল গাছের ছায়া। দিঘল ল্যাম্পপোস্ট। দিঘল সাইনপোস্ট। পাশের টাউন হাউস বা ডুপ্লেক্সগুলোও দিঘল ছায়ার সঙ্গে সমান্তরাল হচ্ছে।
রাকিব হাঁটতে হাঁটতে একবার-দুবার পেছনে তাকাল। ম্যাকফার্লেন স্ট্রিট শেষ হতেই ওয়েলিংটন স্ট্রিট। ওয়েলিংটন স্ট্রিট ধরে হাতের বামে খানিকটা যেতেই জেলিকো ড্রাইভ।
জেলিকো ড্রাইভের প্রায় সমান্তরালে ওয়াইকাটো নদীটা চলে গেছে।
জেলিকো ড্রাইভ ও প্লাংকেট টেরেসের কোনে এসে রাকিব ওয়াইকাটো নদীর দিকে মুখ করে দাঁড়াল। বিকেলের সমস্ত রোদটা যেন ওয়াইকাটো নদীর স্ফটিক স্বচ্ছ জলের ওপর গা এলিয়ে শুয়ে পড়েছে।
রাকিব সেদিকে তাকিয়ে একটা অস্ফুট শব্দ করল, আহা!

Sort:  

Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
https://chaturbate.com/bon_aventura/

Thanks you robot