বেশ কিছু দিন যাবৎ মনে হচ্ছে কেমন যেন একটা হতাশা ভর করেছে।মানুষের মনে আগের তুলনায় আতঙ্ক হয়তো কমে গেছে,তবে স্বস্তি নেই। অনেকে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্চ্ছে।আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি।আমি খুব ছোটবেলা থেকেই একটু চাপা স্বভাবের,ঘোরাঘুরি করা,মানুষের সাথে মেলামেশা করা আমার স্বভাব নয়। আমি বরং নিজের মত করে ঘরে বসে থাকতেই বেশি পছন্দ করতাম। তবু এখনকার ঘরে থাকাটা আগের থেকে অনেক আলাদা। আগে বের হতাম না স্বেচ্ছায় আর এখন জরুরি প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হওয়া যায় না।
আমার মার ভীষণ চুলকানি বা এলার্জির সমস্যা,উনি ডাক্তার দেখাতে পারছেন না। সাহস করে নিজে বের হতে চান কিন্তু আমাকে যেতে দিতে রাজি না। ডাক্তার চেম্বারে বসেন সন্ধ্যার পরে। আমার মা বয়স্ক মানুষ,তার আবার কোমরে সমস্যা,তাই অন্ধকারে একা যেতে সাহসও পাচ্ছেন না।সাথে করোনার ভয় তো আছেই,উনার ডায়েবেটিস ও প্রেসার দুটোই আছে।আরও কত বয়স্ক মানুষ এভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না ,আবার অনেকে চিকিৎসা ছাড়া মারা যাচ্ছে শুধুমাত্র করোনার কারণে।এর মধ্যে আবার বন্যার প্রকোপ,দেশের মানুষের সীমাহীন কষ্ট। অনেকের চাকরি নেই,কারো আবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা ছেড়ে মানুষ তো চলে যাবেই।
আমার চাকরির বয়স চলে যাচ্ছে। হাতে আর খুব বেশি হলে আড়াই কি তিন বছর সময়। তার মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের। এই শিরোনামে পত্রিকায় খবর দেখলাম দুই-তিন দিন আগে। চাকরি পাওয়ার যাও সম্ভাবনা ছিল,তাও হয়তো নেই। আমি অনলাইনে টুকটাক কিছু কাজ করতাম,কিন্তু তাও ভালো যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে এক ভাই ফেসবুকে নক করে তার হতাশার কথা জানালো।দেশের তরুণ সমাজ ভালো নেই।এইদিকে আবার দেশ সীমাহীন দুর্নীতিতে ভোরে গেছে।ভুয়া রিপোর্ট দেখিয়ে বিদেশে যাবার কারণে বাংলাদেশের সুনাম যা ছিল তাও নষ্ট হয়ে গেছে।
প্রথম দুই-তিন মাস মানুষের মনে আশা ছিল সব ভালো হয়ে যাবে। তবে এখন বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে এই মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হবে,দুই তিন বছর থাকতে পারে। মার্চের ৮ তারিখে আমাদের দেশে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়,আজকে চার মাস হলো পরিস্থিতি খারাপের দিকে।করোনার কারণে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। আমার এক পরিচিত আন্টি,যে কিনা আমার মার সহকর্মী ও প্রতিবেশী ছিল,তার ছোট ছেলে কয়েক দিন আগে মারা গেছে।
হঠাৎ করে ভাবছিলাম সাহস করে কি বের হব ? কেননা আমার চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে ,মা বলছিলেন উনি যাবেন না। তবু আমি বলছিলাম সাহস করে যাওয়া যায় কিনা ?
হয়তো যেতাম না ,কেননা আমি খুবই ভীতু প্রকৃতির মানুষ আর আমার ফুসফুসে করোনার থেকেও ভয়াবহ রোগের দুইবার সংক্ৰমন হয়েছিল। কেবল মাত্র সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা নিয়ে বেঁচে আছি।তবু এই মৃত্যুর খবর শুনে আরও শঙ্কায় পরে গেলাম।আমি ছোটবেলা থেকে হ্যাংলা-পাতলা বা রোগা।আমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বললেও ভুল হবে,নেই বললেই চলে কিন্তু যিনি মারা গেছেন তিনি লম্বা -চওড়া জোয়ান মানুষ ছিলেন।
তার বয়স ছিল আনুমানিক তিরিশ এর কোঠায় বা তিরিশের শেষের দিকে। জানতে পারি ওনার এক সপ্তাহ যাবৎ সর্দি -কাশি ও জ্বর ছিল। ছোটখাট সর্দি জ্বর ভেবে গুরুত্ব দেননি। হঠাৎ করে শাসকষ্ট ও ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে যাবার পথে সি.ন.জি -তে মারা যান। যেহেতু তার করোনা পরীক্ষার আগেই তিনি মারা গেছেন, কাজেই তার মৃত্যুর ঘটনা সরকারি পরিসংখ্যানে আসবে না। এমন কত মানুষ মারা যাচ্ছে। তবু আমরা দেখি খুব বেশি হলে জন পঞ্চাশেক মানুষ প্রতিদিন মারা যায়।
বাংলাদেশ সরকার করোনার প্রকোপ কমানোর জন্য আবার অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে। তা হলো পরীক্ষার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা। এতে করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই।আমরা বুদ্ধিমান জাতি।মাথা না থাকলে মাথা ব্যাথা যে হবে না,তা আমার সবাই জানি। কাজেই মাথা রেখে লাভ নেই,কেটে ফেলা ভালো।
এভাবেই বেঁচে আছি ,আমি ভালো আছি ,আমার পরিবারও ভালো আছে।খাবার জুটছে ,আশ্রয় আছে,আর ঘরে বসে আঁকা -আঁকি বা ডিজাইন করে সময় পার করি। কখনো নাটক দেখি ,গান শুনি ,ঘরের কাজ করি কিংবা মার সাথে গল্প করি।পরম করুনাময় ঈশ্বর আমাদের ভালো রেখেছেন।যেমনটি বাইবেল বলে :
"সদাপ্রভু আমার পালক, আমার অভাব হইবে না।" (গীতসংহিতা ২৩:১-৩)
আমি কখনো বাংলায় কোনো ব্লগ,পোস্ট বা কোনো প্রকার লেখালেখি করি না।তবে আজ লিখছি কেননা বিদেশী ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা যতই থাকুক না কেন ,মাতৃভাষায় যে অনুভূতি ব্যাক্ত করা যায় তা ভিনদেশী মানুষের ভাষায় ব্যাক্ত করা সম্ভব নয়। কাজেই সে চেষ্টা এবারের মতো থাক।
আমি ফেইসবুকও লেখালেখি বা পোস্ট শেষ কবে করেছি তা মনে নেই। তবু আজ লিখছি একটা বিশেষ ভাবনা থেকে যে,করোনা হয়তো চলে যাবে কোনোদিন কিন্তু আজকের যে অনুভূতি তা যদি লিখে না রাখি ,তবে এই দিনগুলি কেমন ছিল তা কেবল অস্পষ্ট স্মৃতি হয়ে টিকে থাকবে। কাজেই লিখে রাখা দরকার বোধ করি। কেউ না পড়ুক অন্তত নিজে পরে কখনো কখনো স্মৃতিচারণ করা যাবে।
সবশেসে যারা আমার মতো হতাশ তাদের একটা কথা বলে রাখি। আমার কথা নয় বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের কথা :
"এক দিন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।"
Congratulations @philipkavan! You received a personal badge!
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
Do not miss the last post from @hivebuzz: