খুব দীর্ঘ দৃষ্টিপাতের পর খেয়াল হয়, সমাজে জীবন কোনো কোনো দিকে অনেকদূর চলে গিয়েছে, সময় পার হয়েছে অজস্র, ঢেউ থেকে ঢেউয়ে আছড়ে পড়েছে যেমন - ঠিক তেমনি করে মানুষের লোকান্তরের গমনকে মানসপটে নিয়ে আসা যায়৷ প্রতিটি সমাজের চিহ্ন, বেড়ে ওঠা, বিকাশ লাভ আর গুণগত ব্যাপ্তি সমান নয়। মানুষের সামষ্টিক দিক আর আচার অনুশীলনের মানদন্ডে হেরে যায় ব্যাক্তিমহত্ত্বের গুনপনা, যেখানে স্থুলসত্তার কীটেরা সংখ্যায় বেশি - অর্থবিত্ত, সহায় সম্পদ আর বিত্তবৈভবকেই বড় করে দেখে যারা - তাদের মনুষ্যত্বের ঘরে যাবার পথ নেই।
আমি এমন অনেক মহৎ হৃদয়কে দেখেছি যাদের ঘরে চাল বাড়ন্ত ছিল, মোটা কাপড়, অল্প কিছু আসবাব, সামান্য বৈভব, নিছকই বিদ্যালাভ আর শিল্প সাহিত্যের সরঞ্জামে ভরপুর কিছু জিনিস। এসব ছাড়া তাবৎ সংসারে আর কিছু নেই; ধনলাভের কোন উদ্যোগ নেই, অর্থের পেছনে ছুটে নিজ পরিবারকে সমৃদ্ধি এনে দেবার তাগিদ নেই, ভবিষ্যতের পানে চেয়ে কিছু বেশি টাকা সঞ্চয় করে রাখার বালাই নেই। শুধু মহৎ মানুষ হতে হবে, সম্মান আর খ্যাতির চূড়ায় উঠতে পারার অল্প খানিক মোহ, ইতিহাস মনে রাখবে - এতটুকু আশায় বেঁচে থাকা।
তারপর কিছু মানুষের কথা বলতে চাই, যাদের মনের মানসপটে শুধুই মুখ থুবড়ানো হতাশা, বহৃিজ্বালায় দগ্ধ হৃদয়, চারপাশের বন্ধুমহলের সবাই কত অর্থবিত্ত, একটি সুখী পরিবার, চারপাশের আপন মানুষের খুশী করে রাখতে পারার হাল হাকিকত অন্য একটি হৃদয়কে কষাঘাতে জর্জরিত করে, স্বাভাবিক মন পরশ্রীকাতরতায় ডুবে থাকতে চায়, জীবন যেখানে বিভক্ত, গ্রাম কি শহর সবখানে যে নিজের জন্য নিজে সহায় - এমন দশায় সবাই তো অর্থনৈতিক দিকটাই নিজের প্রথম কর্তব্য হিসেবে ধরে নিবে।
সবসময় প্রশ্ন আসে,দেশের নীতিনির্ধারকদের চিন্তার রেখায় ভাঁজ পড়তে শুরু করে যখন নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের খাতায় শূন্য, যারা আধুনিক প্রযুক্তির চর্চা আর উৎকর্ষের ধার ধারে না, প্রচলিত পথে যেসব জীবিকার উপায় আছে, তাতেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে, নিকট বন্ধুমহলে যাদের ব্যাবসা খাত, বাণিজ্যপথে গত্যান্তর কিংবা অন্য কোন উদ্যোগের ভীড়ে সফল হয়েছে - তাদের মতোই কাঁড়ি কাঁড়ি সম্পদ গড়তে হবে, ইটপাথরের দালান তুলে, ক্ষমতার লাল গালিচার টোপে হাঁটা চায়, কিছু কুটচালে কারো অনিষ্ট হয় কিনা - এমন ভাবনা যখন প্রায় সবকটি নতুন প্রজন্ম থেকে মধ্যবয়সী নাগরিকদের, তখন একটি সমাজের ভবিষ্যৎ মহৎ কিছুর সন্ধান দিতে চায় না।
কি হবে অঢেল সম্পদ রেখে দিয়ে লোকান্তরে গেলে? যখন জ্ঞানচর্চা, উদ্ভাবনমুখরতা থেকে দূরে থেকে সম্পদলোভী একটি জনপদে রেখে গেলে নিজের সারা জীবনের অর্জন? এ অর্জন কি বিসর্জন নয়,যখন চারপাশের ভোগদখলদারের দল, নিকটাত্মীয় কি প্রতিবেশীর কূটনজর খানকতক পাকা দালানকোঠা আর ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানের উত্তরাধিকার কি উইলপত্রের পাতা উলটিয়ে, আদালতের ডিক্রি কি লিগাল নোটিস অ্যাকশনের মারপ্যাঁচে মিথ্যাকে সত্য, সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে নিজের কুক্ষিগত করার মধ্যে সফলতা খুজে পায় জ্ঞানবিমুখ সম্প্রদায়।
আফসোস হয় খবরের কাগজের কিছু পাতা উলটালে, সব খবরের খাঁটি সত্য মিথ্যার ভেদ না করে, যাহা রটে তাহার কিছু না কিছু তো বটে, চারপাশের ভোগলিপ্সার মাত্রা কি পরিমান বেড়েছে৷ কয়েকশ বছর আগের রূপ কি এমন ছিল, উদার হৃদয় বাংলা, এ অতিথিপরায়ণ জাতি, সব ধর্ম জাতি গোত্রের মধ্যে নিখাদ সম্প্রীতি, সামাজিক মেলবন্ধন আর সহমর্মী ভাবে পুরাকালটা কত উৎকৃষ্ট ছিল, মহৎ হৃদয়ে গড়া এ জনপদটি আশু ভবিষ্যতে দারুন কিছু নিয়ে আসবে - এমন প্রত্যাশাই তো ছিল। কিন্তু আজকালকার চিত্র তার ছিটেফোঁটাও বলে না।
যুগে যুগে যারা মানুষের হৃদয়ে, মনোভাবনায়, মহৎ সৎকর্মের মাঝে স্থান পেয়েছে, তারা আর যা হোক মানুষ হিসেবে সফল হয়েছে। প্রকৃতি নির্ধারিত সত্য, আয়ুষ্মান কালকে জয় করে যদি কেউ নিজের জীবন কাটিয়ে দেয়ার মধ্যে অর্থ খুঁজে পায়, চারপাশের ভোগলিপ্সা আর ধনগৌরবের বড়াই করা প্রতিবেশী মহলের মধ্যে নিজের লেবাস আর যোগাযোগকে বেশখানিকটা গুটিয়ে নিয়ে নিজ জীবন চর্চার মধ্যেই সুখ খুঁজে পায়, তাহলে জীবন থেকে যে পাওনাটা থাকে, কৃত কর্মের বিপরীতে পরিণতিতে দিশা পায় এক মহত্তম জীবনের যা আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে সারা জীবন ধরে -অন্তত ইতিহাস তাদের ধরে রাখে৷
Source
হাজার বছর ধরে, ব্যাবসায়ী বনেদী অভিজাতশ্রেণীর জ্ঞানবিমুখ স্বার্থঘেঁষীরা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে,তাদের শেষ চিহ্ন কোথায়, তাদের বড়াই করার অট্টালিকা স্থাপনা অর্জনের বিষয় আষয় এখন কোথায় কেমন আছে, তার খোঁজ বংশপরম্পরারা রেখেছে কি? পৃথিবীর কোন বসতি, বন অরণ্যের মাঝখানে পা ফেলার পথের চিহ্ন কবে ক্ষয় হয়ে গিয়েছে, পা ফেলার লোকেরাও হারিয়ে গিয়েছে অজানা এক যাত্রার মাঝে।
তাই আমি বাহবা দিতে চায়, সমর্থন দিয়ে যাব যারা অন্তত সম্পদসর্বস্ব জনপদে থেকে জ্ঞানচর্চায় নিজের প্রজন্ম আর ভবিষ্যৎ সম্প্রদায়ের জন্য ভালো কিছু রেখে যেতে পেরেছে। হয়তো তাদের জীবনের কোন অংশ অর্থাভাব আর দারিদ্র্যের কায়ক্লেশে কেটেছে, যারা বৈভবের মধ্যে থেকেও নিজ কর্মে ব্রতী হয়েছে,কিংবা যাদের চারপাশে লোভের সুযোগ থেকেও তার বশবর্তী হয়ে মোহের নিকটে যায় নি - তারাই মহৎ জীবনের সন্ধান পেয়েছে।
ইতিহাস তাদেরই মনে রাখবে।
অনুবাদকৃত অংশ :(বাংলা থেকে English) - Literally Translated.
After a long observation it is seen that in this society, life has gone far in some direction, time has passed countless times, it has been thrown from wave to wave - just like that, the movement of people can be brought into perspective. Not every society has the same characteristics, growth, development and quality. The value of individuality is lost in the collective aspect of man and the standard of ritual practice, where the vermin of obesity are more numerous - those who magnify wealth, wealth and prosperity - have no way to enter the house of humanity.
I have seen many noble hearts whose houses were full of rice, coarse cloth, little furniture, little splendor, mere learning and the equipment of art and literature. Apart from these, there is nothing else in the world; There is no desire to get rich, there is no urge to run after money to bring prosperity to one's family, there is no desire to save a little more money than the future. All you have to do is be a great man, a little bit of infatuation to rise to the top of honor and fame, history will remember - so much hope to live on.
Then I would like to talk about some people, whose mind is filled with despair, burning heart, how rich everyone in the circle of friends, a happy family, the fact that they can keep the people around them happy makes another heart beat, the normal mind is drowned in pity. Want, where life is divided, whether village or city is self-supporting - in such a state, everyone will assume the economic aspect as their first duty.
There is always a question, the policy makers of the country start to fold in the line of thinking when the latest scientific innovations are empty, those who are not on the edge of modern technology practice and excellence, they are busy with the means of livelihood in the conventional way, those who have business sector in the close circle of friends, change in the trade route or Some other ventures have been successful - like them to build wealth, build brick buildings, walk the red carpet of power, whether a few tricks hurt someone -When such thinking is from almost every new generation to middle-aged citizens, the future of a society does not want to look for anything great.
What will happen if you leave a lot of wealth? When the pursuit of knowledge, innovation is far away from a wealth-loving town, the achievement of his whole life? Isn't this achievement a sacrifice, when the group of usufructuary around, close relatives or neighbor's prying eyes, the inheritance of the buildings and business establishments, turning the pages of the will, court decree or legal notice action, the falsehood is the truth, the truth is a lie, the ignorant community finds success in making its own ax.
It is a pity that if you turn some pages of the newspaper, without distinguishing the genuine truth from the lies of all the news, which is something or the other, the level of indulgence around has increased. What was the appearance of a few hundred years ago, the generous heart of Bengal, this hospitable nation, pure harmony among all religions, castes and clans, how excellent was the ancient times, this town built with a great heart will bring something great in the near future - it was hoped that . But today's picture does not tell even a drop of it.
Those who have found a place in the hearts, attitudes, and noble deeds of people throughout the ages have succeeded as human beings. If one finds meaning in spending one's life, if one finds meaning in spending one's life, if one finds happiness in the practice of one's own life by wrapping one's clothes and communication a little in the neighborhood of indulgences and boasting of wealth and glory, then the debt that remains from life,Actions, as opposed to actions, lead to the direction of a greater life that somehow binds them throughout life—at least history holds them to it.
For thousands of years, where have the ignorant self-interests of the business elites disappeared, where are their last traces, where is the subject of achieving their bragging mansions, how are they now? In the middle of a settlement in the world, in the middle of the forest, when the traces of the footpath have disappeared, the people who have stepped are also lost in the middle of an unknown journey.
So I want to praise and support those who have been able to leave something good for their generation and future community in the pursuit of knowledge, at least from the wealthy township. Perhaps some part of life has been spent in the misery of poverty and poverty, those who have vowed to their work even in the midst of prosperity, or those around whom greed has not led them to infatuation because of it - those are the ones who have found the great life. History will remember them.
এ শ্রেণির মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন ভীষণ হারে হ্রাস পাচ্ছে, আর আমার মনে হয় এ সংখ্যা ক্রমশ হ্রাসই পেতে থাকবে। যার জন্য অন্যতম প্রধান কারন আমার মনে হয়, বর্তমান আমাদের সমাজ-ব্যবস্থা, আর তথাকথিত আধুনিকতার নিজসত্তাকে বিলিনে নেমে পড়া। আর দিনশেষে যে গুটিকয়েকজন সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে, আপনার বলা উক্ত লাইনগুলো মেনে চলবে এবং নিজ সত্তাকে আঁকড়ে ধরে রাখবে, আমিও বলবো তারাই সার্থক হবে এবং তাদের সবাই মনে রাখবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
কিন্তু, সবার লক্ষ্য হয়তো একরকম নয়। যার যার নির্দিষ্ট ব্যাক্তিত্ত্ব গঠন আর জীবন সম্পর্কে দর্শনগত জ্ঞান হয়তো সবসময় মহৎ কিছু করার জন্য ভাবায় না।
এরকমটা রাস্তাঘাটে, পথ চলতে চলতে যা কিছু ছোটবড় কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে তাতে তো খুব একটা বোধোদয় হয় না।
তবে আশা করি কিছু মানুষ তবু সামনের দিকে নিয়ে যাবে এ দেশকে, তারাই ভবিষ্যৎ ।
💐💐
অনেক সুন্দর পোস্ট শেয়ার করেছেন
ধন্যবাদ, তবে এদেশীয় সমাজের একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে নিবন্ধটি লিখেছি৷ কিছু পর্যবেক্ষণগত ত্রুটি অথবা সার্বজনীন নাও হতে পারে,যেমনটি সব সমাজ এক রকম হয় না।
তাত্ত্বিক বিষয়টি অনুধাবন করতে পারার জন্য ধন্যবাদ৷