গ্রামে বড় হওয়া মেয়ে আমি। ছোট বেলা থেকেই আশা ছিলো নিজে কিছু একটা করার। আর দশজনের মত শুধু বিয়ে করব, সংসার করব, বাচ্চা জন্ম দেব, তাদের বড় করতে করতে বুড়ো হয়ে একদিন টুপ করে মরে যাব… এই জীবনের স্বার্থকতা কোথায়?
একটা কথা প্রচলিত আছে- মেয়েরা নাকি পরজীবী। প্রথমে বাবা, এরপর স্বামী, সবশেষে সন্তান… এই হল তাদের জীবনকাহিনী। যদিও ছেলেরা মজা করে এটা বলে, আমাদের দেশের বেশীরভাগ মেয়ের নিয়তি এখনো এটাই। আমি চাই একটা আত্মপরিচয়। নিজে কিছু একটা করার আশা মনে মনে ধারন করে বড় হয়েছি। এসএসসি’র পরে ফ্যামিলি যদিও কক্সবাজারের কোন একটা কলেজে ভর্তি হতে জোরাজুরি করেছিল। আমি জেদ ধরেছি, চট্টগামে যাব। বাবা আমার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
ইন্টারের পরে অনার্সে ভর্তি হয়েছি চট্টগ্রাম মহিলা কলেজে। হোস্টেলে থাকি। এখানকার খাবারের অবস্থা খুব খারাপ। আরো অনেক সমস্যা। তবু কষ্ট করে থাকি। ইচ্ছা ছিল, পড়াশোনা শেষ করে চাকুরী করব। আমার পছন্দ শিক্ষকতা। অথবা অন্য কোন সম্মানজনক পেশা। এরপরে বিয়েশাদি করব ভেবেছিলাম। কিন্তু সে আশায় গুঁড়ে-বালি। সেকেন্ড ইয়ারের শেষের দিকে ফ্যামিলি থেকে আমার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে। আমার আপত্তি কেউ কানে তোলে না।
কয়েকজন এসে দেখেও যায় আমাকে। বিভিন্ন কারনে কথা এগুয়নি। আমি তো মনে মনে খুশি। এরমধ্যে এক ঘটনা আমাকে খুব মর্মাহত করে। এক পাত্রের মা আমাকে দেখতে এসে বেশ কিছু অপমানজনক প্রশ্ন করেন। এমনকি চুল খুলে দেখতে চান। খুব রাগ হয় আমার। অপমানিত বোধ করি।
আমার ফ্যামিলিও ক্ষুব্ধ হয়। তাদেরকে না করে দেয়। আমি বলে দেই, আর কোন পাত্রের সামনে বসতে পারব না। সে সময় আরেকটা সম্বন্ধ নিয়ে কথা বার্তা চলছিলো। বাবা এবং ভাইয়েরা আমাকে বললো, এটাই লাস্ট। আমি শুনে খুশি হলাম। ভাবলাম, এতগুলো সম্বন্ধ ফিরে গেছে। এটাও ফিরে যাবে।
কিন্তু আমার আশা পূরন হয় নি। পাত্র আমাকে দেখে পছন্দ করে। বিয়ের দিন তারিখ পাকা হয়ে যায়। আমি এসবের কিছুই জানতাম না। আমাকে হটাত বাসায় আসতে বলা হয়। আমার তখন ক্লাস টেস্ট চলছে। তবুও যেতে হল। গিয়ে শুনি দুইদিন পর বিয়ে!
আশা-নিরাশার দোলাচলে ঘুরপাক খেতে খেতে বিয়ের শাড়ি পড়ে কবুল বলে ফেলি। তারপর সব কিছু কেমন যেন বদলে যায়। হটাত করে নিজেকে অনেক বড় মনে হতে থাকে। অনেক দায়িত্বশীল মনে হতে থাকে।
এখন আমি ফাইনাল ইয়ারে। পড়াশোনা শেষ করে কি করব জানি না। তবে ঐ যে বললাম- একটা আত্মপরিচয় খুঁজেছি ছোটবেলা থেকে, সেটা খুঁজে যাব। জানি না শেষ পর্যন্ত আমার আশা পূরন হবে কিনা। নাকি নিরাশার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জীবনাবসান হবে।
সবাই আশা নিয়ে ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকুক...
Congratulations @rimubd! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
সুন্দর লিখেছেন। তবে বিয়ে করলেই যে সব কিছু শেষ বা সব আশা শেষ তা কিন্তু না। অনেকেই বিয়ের পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আবার অনেকেই স্বামীর সহযোগিতায় ভালোবাসায় আগের থেকেও বেশি স্বপ্ন দেখছে বাস্তবায়ন করছে।
তবে ইচ্ছা শক্তি ও মনবল দৃঢ় রাখলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
আশা করি আপনিও পারবেন। শুভ কামনা রইলো।
এজন্যই আশা নিরাশার দোলাচলে কথা বলেছি ভাইয়া। স্বামী আমাকে আশা দেখায়, সাহস যোগায়। কিন্তু সংসারের দায়িত্ব এবং আরো পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা ভাবলে আশাটির উপর ভরসা রাখতে পারি না।
জানি না শেষ পর্যন্ত কি আসে, সাফল্য না ব্যার্থতা!
আসলে আমাদের প্রতিটি কাজে আনন্দের সাথে করা উচিত। তাহলে প্রতিটা ক্ষেত্রেই নিজেকে সফল মনে হবে। যদি পরিবারে কাজ করে পরিবারকে সুন্দর করে সাজাতে পারেন তাহলে সেটাই আপনার অর্জন। সেটাকে গর্বের সাথে দেখেন। বাসার মুরুব্বিদের সেবা করেন। মুরুব্বিরা আপনাকে ভালোবাসবে। আর সেটাকেই আপনি আপনার অর্জন বলে মনে করেন। সেটাকে গর্বের সাথে প্রকাশ করেন দেখবেন মনে হবে আপনি একজন সফল।
আমরা অনেকেই অনেক কাজ করি কিন্তু সফল তো আর সব কাজেই হই না।
আমি মনে করি একটি পরিবারকে সাজানো একজন সফল গৃহিনী হওয়াটাই সব থেকে কঠিন কাজ।
আপনার চিন্তা ধারার জন্য স্যালুট। সবাই যদি এভাবে ভাবতে পারতো!
আমি আসলে দুই ক্ষেত্রেই সফল হতে চাই। ভালো গৃহিণী এবং একই সাথে ভালো উদ্যোক্তা হতে চাই। জানি এটা অনেক কঠিন। তবে আমি আশাবাদী।
আচ্ছা কিসের কাজ করছেন? কোন ব্যবস্যার সাথে কি জড়িত?
একটা অনলাইন শপ করার চেষ্টা করছি। ই-মার্কেটিং টাইপ। এছাড়া হাইভ তো আছেই :)
ই-কমার্স এখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুব ভালো উদ্দ্যেগ।
চালিয়ে জান আপু।
আশা গুলো নিরাশার বৃত্ত ভেংগে বেরিয়ে আসুক সফলতার পানে। এই কামনাই থাকলো।
শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ।