৩০ গোডাউন রিভারভিউ পার্ক,বরিশাল

in BDCommunity2 years ago

IMG20220808200933.jpg

বিনা চিঠিতে হঠাৎ করে রওনা হলাম নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বাস্তবতা কি কোন যাত্রা কে নিরুদ্দেশ করতে দেয়?!যাপিত জীবনে তাই আর উদ্দেশ্য বিহীন কোন যাত্রা হয় না।তবে উদ্দেশ্যে হোক বা নাই হোক ঘুরতে আমার বেশ ভালোই লাগে।নতুন কোন জায়গায়,নতুন কিছু দেখবো ভাবলেই অলস মনটাও চাঙা হয়ে যায়।তাই অতো ভাবনা ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে যাত্রা শুরু করলাম চন্দ্রদ্বীপের উদ্দেশ্যে।আসলে শেকড়ের একটা টান আছে তো!এই টান,যেটা কমবেশি সবাই অনুভব করি।এই অনুভবে আছে একরাশ তৃপ্তি।

বরিশালের অনেক নদ-নদীর মধ্যে কীর্তনখোলা নদী অন্যতম।বরিশাল সদর মুলত এই নদীর তীরবর্তী।তাই অপূর্ব এই নদীর পাড়ে ঘোরার জন্য সুন্দর একটা জায়গা হলো ত্রিশ গোডাউন রিভারভিউ পার্ক ও বধ্যভূমি।ত্রিশ গোডাউন নামটা শুনে কি অবাক হলেন?! আসলে এখানে সরকারের অধীনে বড় বড় ত্রিশটি গোডাউন আছে যা যুদ্ধের সময় অস্ত্র রাখার কাজে ব্যবহৃত হতো।এভাবেই লোকমুখে এই জায়গার পরিচিতি। কীর্তনখোলা নদীর পাড় ঘেঁষে প্রসস্থ বাধঁ দিয়ে এর উপর রাস্তা বানানো হয়েছে।সাথে আছে বসার জায়গা।নদীর উথাল বাতাস উপভোগ করতে আশেপাশের মানুষ সব সময় এখানে আসে তাই এখানে গড়ে উঠছে বিভিন্ন দোকান যেমন ফুসকা-চটপটি,চা,কোল্ড কফি এরকম হালকা খাবার।আছে বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুডের দোকানও আছে।দামটাও সাধ্যের মধ্যেই। এছাড়া আরো রকমারি পন্য বেচা-কেনা হয়।সবাই তার পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছে ক্রেতার জন্য।তাছাড়া পাশেই যেহেতু নদী তাই অনেকেই কীর্তনখোলা নদীতে ঘুরতে যায়।তাই ট্রলার ও নৌকার ছোট একটা ঘাট আছে।স্বল্পমূল্যেই যে কেউ নদীর মাঝে ঘুরে আসতে পারবে।

IMG20220808203728.jpg

নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ যখন হৃদয় ছুয়ে যায় তখন মন তার সকল বোঝা সরিয়ে ফেলে।প্রানখুলে শ্বাস নেয়া যায়।এর থেকে আনন্দ হয়তো আর কিছুই হবে না।তাই বিভিন্ন ছুটির দিনগুলোতে এখানে তাই উপচেয়ে পরা ভিড় হয়।তবে সকালের থেকে বিকালে মানুষের আনাগোনা বেশী শুরু হয়।সাথে থাকে পরিবার বা বন্ধুরা।দেখা যায় বন্ধু-বান্ধবের আড্ডার সোরগোলের ধ্বনি নদীর পাড়ে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে।এই সকল আনন্দ হয়ই কিন্তু নদীর পাড় কেন্দ্রিক এই পার্কটিকে কেন্দ্র করে।

আসলে মানুষজন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন বিনোদনকে জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিয়েছে।উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত সর্বপরি সব স্তরের মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের বিনোদন জায়গা বেছে নিচ্ছে।তাই সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় নদীর পাশ ঘিরে তৈরি করা এই পার্ক সকলের সামর্থ্য যোগ্য।কারণ পরিবেশটা অসাধারণ সুন্দর।নির্মল বাতাসে মনটা একদম সতেজ হয়ে যায়।সুবিশাল নদীর পাড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেঁটে হেঁটে ঠান্ডা বাতাস গায়ে মাখার অনূভুতি প্রকাশ করার মতো না!

IMG20220808202329.jpg

এই রিভারভিউ পার্কের সাথেই আছে বধ্যভূমি।যেখানে যুদ্ধের সময় পৈশাচিক সব নির্যাতন করা হতো।যুদ্ধকালীন সময়ে এখানে অনেক মানুষের লাশ নির্মমভাবে হত্যা করে ফেলে রাখা হতো।যুদ্ধের পরবর্তীতে এই স্থান সনাক্ত করে সংরক্ষণ করা হয় এবং এই দুর্বিষহ স্মৃতি স্মরণে ও বুদ্ধিজীবিদের শ্রদ্ধার উদ্দেশ্যে এখানে নির্মাণ করা হয় একটি বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ।কত নির্মমতার সাক্ষী এই বধ্যভূমি!বরিশাল সদরে মধ্যে ভ্রমণ করার জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি সুন্দর জায়গায়।

Sort:  

নদীর দৃশ্যটা দেখা গেলে আরও ভালো লাগতো,রাত হওয়ায় নদীটা দেখা গেলো না।

ছুটিরদিন হওয়ায় প্রচন্ড ভিড় ছিলো।সন্ধ্যা শেষ মুহুর্তের শীতল বাতাসে হাটতে হাটতে এই ছবিগুলো তোলা।পরের কোন এক সময় গেলে অবশ্যই নদীর ছবি তুলবো :)